পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলনে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেন অর্ধযুগ আগে। সংবিধানের প্রথম ভাগের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলাদেশের সংবিধানও বাংলায় লেখা। ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা একাডেমিতে দেয়া বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস, আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে।
দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে আইন করা হয় ১৯৮৭ সালে। আইনটির ৩(৩) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এই আইন অমান্য করেন, তাহলে ওই কাজের জন্য তিনি সরকারি কর্মচারী-শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনটির ৪ নং ধারায় আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৩৭ ধারায় বলা হয়েছে, যে পর্যন্ত সরকার অন্য নির্দেশ প্রদান না করেন সে পর্যন্ত হাইকোর্টের অধীনস্থ যে আদালতে আদালতের ভাষা হিসেবে যে ভাষা প্রচলিত আছে সে আদালতে সেই ভাষাই প্রচলিত থাকবে। সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস (১ম খন্ড) এর ১১নং বিধিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘মামলার পক্ষগণ আর্জি, বর্ণনা, দরখাস্ত ইত্যাদি এবং এফিডেভিট ইংরেজি ভাষায় দাখিল করিবেন।’
এটি ছাড়া বিচারাঙ্গনে ইংরেজি চর্চার পক্ষে তেমন কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। ‘সর্বত্র বাংলাভাষা প্রচলন’র পক্ষে এতোগুলো সমর্থন বিদ্যমান। তা সত্তে¡ও বাংলাভাষা উপেক্ষিত খোদ উচ্চ আদালতেই। ফেব্রæয়ারি ভাষার মাস। দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য এ মাসে কয়েকটি রায় বাংলায় ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উচ্চ আদালতে সকল মামলার রায় বাংলায় প্রদানের বিষয়টি এখনো সদূর পরাহত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে আইনের ভাষা দিয়ে সাধারণ মানুষ ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে এক দুর্ভেদ্য ও দুর্বোধ্য দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। এই দেয়াল ভেদ করে শেষ পর্যন্ত আইনের ভাষার সৌন্দর্য, বিষয়বস্তুর যথার্থতা ও সংজ্ঞা বুঝতে সমর্থ হন গুটিকতক উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। আইন ভিনদেশী ভাষা দিয়ে, ভাষার চারদিকে জটিল ও দুর্বোধ্যতার দেয়াল তুলে দিয়ে নিজেই হয়ে পড়েছে অবরুদ্ধ। আইনের ভাষাকে প্রাঞ্জল ও সাধারণ মানুষের বোধগম্য করার কোনো উদ্যোগ তো দূরের কথা, নীতিনির্ধারকেরাও এর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না।
আইনবিষয়ক সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের মতে, সম্ভবত উচ্চ আদালতে বাংলা চালুর বাধা মনস্তাতাত্তি¡ক। এর সঙ্গে এক শ্রেণীর আদালতকেন্দ্রিক মানুষের স্বদেশী ঠকানোর ধান্ধাও রয়েছে। তার মতে, ইংরেজী না জানা লোকের কাছে ইংরেজিতে বিচারকার্য পরিচালনা গোপন বিচারের সামিল যা সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘প্রকাশ্যে বিচার’ এর ধারণার পরিপন্থী। কারণ, ইংরেজি না-জানা লোকের কাছে ‘গোপন বিচার’ আর ‘প্রকাশ্য বিচার’ ধারণার পার্থক্য নেই। তাকে দুর্বোধ্যতার অন্ধকারে রাখতে বা ঠকাতে পারে যে কেউ।
অ্যাডভোকেট এএম জিয়া হাবীব আহসানের মতে, আদালতে বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচলন করতে হলে আইনসমূহের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন এবং প্রয়োজনমত তুন আইন, বিধি ও বিজ্ঞপ্তি জারি করা আবশ্যক। এরশাদ সরকারের আমলে বাংলায় আইন প্রণয়ন শুরু হয়। বর্তমানে পার্লামেন্টের আইনসমূহ বাংলায় পাস হয়। সাথে সাথে এগুলোর ইংরেজি ভার্সনও প্রকাশ করা যেতে পারে।
আদালতের চর্চায় প্রাধান্য পাচ্ছে ইংরেজি। বিশেষত: হাইকার্টে মামলার শুনানি, আদেশ এমনকি জামিন আদেশও লেখা হয় ইংরেজিতে। বাংলায় রায় প্রদান সম্ভব-এ কথা বহু আগেই প্রমাণ করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং এবিএম খায়রুল হক। শেষোক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি বহু রায় বাংলায় দিয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগেও বাংলায় রায় প্রদানের দৃষ্টান্ত রয়েছে। বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ও কাজী এবাদুল হক হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি রায় বাংলায় দিয়েছেন।
এখনো হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক, বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন, বিচারপতি মো. আবু তারিক, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বাংলায় রায় দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীদের সিনিয়র অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ইয়াহিয়া দুলাল, অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দকে বাংলায় আবেদন লিখতে দেখা যায়। এসব দৃষ্টান্ত এটিই প্রমাণ করে যে, বাংলায় মামলার আবেদন এবং রায় প্রদান করা সম্ভব। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে উচ্চ আদালতের সর্বত্র শতভাগ বাংলা ভাষার চর্চা নয় কেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, বেশকিছু সমস্যার কথা। কোনো কোনো আইনজীবী জানান, উচ্চ আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার ব্যবহারের কিছু সমস্যা রয়েছে। কারণ, প্রতিনিয়ত বিদেশী আদালতের ঐতিহাসিক রায় নজির হিসেবে দেখাতে হয়। এসব রায় ইংরেজিতে হওয়ায় আইনজীবী ও বিচারপতিদের কাছে ইংরেজি ভাষা সহজতর। এ কারণেই ইংরেজিতে রায় বা আদেশ লেখা হয়।
তবে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ১৯৮৭ সালে আইনটি প্রণয়নের পর যদি সর্বত্র বাংলার চর্চাটা শুরু হয়ে যেতো তাহলে এতোদিনে অনেকদূর এগোনো যেতো। কারণ, আমরা এখনো ব্রিটিশ সরকার প্রণীত আইন দিয়ে চলছি। এগুলো ইংরেজিতে। এ আইনের ভিত্তিতে যেসব রায় ও রেফারেন্স রয়েছে সেগুলোও ইংরেজিতে। এগুলোর বাংলা করা এক প্রজন্মের পক্ষে সম্ভব নয়। এখন যদি শুরু করা যায়-এক সময় হয়তো বাংলা অনুবাদ করা শেষ হবে। তখন উচ্চ আদালতে শতভাগ বাংলা চর্চা সম্ভব হবে। শুরুইতো হয়নি।
তিনি বলেন, বিচারপতিগণের পক্ষ থেকে কিছু কিছু চর্চা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু রায় আমরা বাংলায় পাচ্ছি। কিন্তু এটি শুধু বিচারপতিগণের রায় প্রদানের বিষয় নয়। সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচলিত সকল আইন-কানুনের বাংলা অনুবাদ করতে হবে। যদিও দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
মনজিল মোরসেদ বলেন,বাংলায় রায় দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ও রয়েছে যে, ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও রায় দেয়া যাবে। যদি পরিভাষাগত সীমাবদ্ধতা থাকে সেটি দূরীকরণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে অভিমত দেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।