পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সন্ত্রাসীরা অপরাধ করলে ফেঁসে যাবে সাধারণ মানুষ ষ প্রতারণার মাধ্যমে নিবন্ধিত সিম এক থেকে দেড় লাখ সিম -তারানা হালিম
ফারুক হোসাইন : নতুন সিম কেনার জন্য আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব ছাড়াও সিম কেনা যাচ্ছে বাজার থেকে। এর জন্য লাগছে না আঙুলের ছাপ, দিতে হচ্ছে না জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিও। অন্যের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নিবন্ধিত হাজার হাজার সিম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এর সংখ্যাটা এক থেকে দেড় লাখ বলে জানিয়েছেন খোদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। অন্যের নামে নিবন্ধিত এসব প্রিঅ্যাক্টিভ সিম চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে। আর তা দিয়ে অপরাধ সংঘটিত হলে দায় পড়বে যার নামে নিবন্ধন হয়েছে তার ওপরই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নাগরিক সমাজ। তারা বলছেন, আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে এসব সিম বাজারে আনা হচ্ছে। যদিও আদালতে এ বিষয়ে একটি রিটও হয়েছিল, যা খারিজ হয়ে গেছে। আঙুলের ছাপ বেহাত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে এর আগে ইনকিলাবে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সময়ই একজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যজনের সিম নিবন্ধন হওয়ার প্রমাণসহও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এখনো বলছেন, আঙুলের ছাপ কোনোভাবেই সংরক্ষণ করা হয়নি। এটা করার কোনো সুযোগও নেই। আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের বিষয়টি একটি অপপ্রচার। তবে নিবন্ধিত সিমগুলো কীভাবে এবং কাদের আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে তার কোনো সদুত্তর নেই প্রতিমন্ত্রীর কাছে।
বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল সবার মাঝেই। আঙুলের ছাপ বেহাত হওয়া, একজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যের সিম নিবন্ধন করাসহ জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার শঙ্কা ছিল সব মহলেই। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও এই পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রমের বিরোধিতা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন হলে একজন মানুষের মূল্যবান আঙুলের ছাপ বেহাত হয়ে যাবে। এই ছাপ পরবর্তীতে অপরাধমূলক কাজ কিংবা ব্যাংক লোনসহ নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে সরকারের (ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম) পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়েছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ কেবল ভেরিফাইড করা হচ্ছে, সংরক্ষণ করা নয়। কিন্তু এতদিন পরে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সেই শঙ্কাই সত্য হতে চলেছে। আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে রেখেছেন নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে একজনের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে অন্যজনের সিম। আর জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধিত এসব সিম চলে গেছে সন্ত্রাসীদের হাতে।
গত মঙ্গলবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম পুনর্নিবন্ধনের সময় গ্রাহকের আঙুলের একাধিক ছাপ নিয়ে তার বিপরীতে অন্য সিম নিবন্ধন করে বিক্রির অভিযোগে ২২ জনকে আটক করে পুলিশ। বুধবার রাতে ময়মনসিংহের সানকিপাড়া থেকে অবৈধভাবে বায়োমেট্রিক করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার ২০০ সিমসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এর আগে গত ২১ মে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, ১২০টি রবির সিম নিবন্ধন করে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করেছে জালিয়াত চক্র।
সিম নিবন্ধনের এই ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়ায় এখন ভীত হয়ে পড়েছেন মোবাইল ফোন গ্রাহকরা। কখন কার নামে নিবন্ধিত সিম দিয়ে সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটে, তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা। এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের যে ব্যাপক জালিয়াতি করা হয়েছে, ভবিষ্যতে তা জাতিকে ভোগাবে বলে মন্তব্য করেছে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা দাবি করেছিলাম আরো সতকর্তার সাথে ভোক্তাদের আঙুলের ছাপ নেয়া হোক। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন একের পর এক জালিয়াতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। লাখ লাখ সিম সাধারণ ব্যবহারকারীদের আঙুলের ছাপ একাধিক বার দিয়ে চুরি করে নিবন্ধন করে নিয়েছে জালিয়াতি চক্র। তারা বলেন, ‘এসব সিম জালিয়াতি চক্র উচ্চ মূল্যে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রয় করছে বলে আমাদের সংগঠনের তদন্তে উঠে এসেছে। এতে করে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পর নিরপরাধ সাধারণ মানুষ ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি কেউ জানে না, কার আঙুলের ছাপ চুরি করা হয়েছে। তাই আমরা আজ গোটা জাতি জালিয়াত চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তারা বলেন, এ ব্যাপারে বড় কোনো ভোগান্তির আগেই সরকারকে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জনসাধারণের যেকোনো ধরনের ভোগান্তি বা ছোট-বড় দুর্ঘটনার দায় সরকাকেই নিতে হবে।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা গ্রাহকদের সামনেই জালিয়াতি করে এর সাথে জড়িতরা। ওই সময় তারা হাজার হাজার সিম অন্যের নামে নিবন্ধন করে নেয়। আর এখন সেই সিমই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। যেগুলো অন্যের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত। নতুন সিম কেনার জন্য আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব ছাড়া নতুন কোনো সিম কিনতে পারবেন না কেউই, কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই প্রিঅ্যাক্টিভ হাজার হাজার সিম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। যেগুলো কিনতে দিতে হচ্ছে না আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র। এসব সিম অন্যের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত রয়েছে। আর আগে থেকেই নিবন্ধিত এসব সিম চলে যাচ্ছে অপরাধী এবং অবৈধ ভিওআইপি কারবারিদের হাতে। তবে কার নামে কীভাবে এসব সিম নিবন্ধিত হচ্ছে তা জানতে পারছে না কেউই। ফলে এসব নিবন্ধিত সিমে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলেই দায়ী হবেন যার নামে নিবন্ধন হচ্ছে সিম তিনি নিজেই। অথচ ওই ব্যক্তি জানে না তার নামে এসব সিম নিবন্ধিত রয়েছে।
যদিও এখনো ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলছেন, কারও আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করে প্রিঅ্যাকটিভ সিম নিবন্ধন করা হয়নি। বর্তমানে যেসব গ্রাহক সিম নিবন্ধন করছেন, তাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে একেকজন গ্রাহকের কাছ থেকে তিন-চার বার আঙুলের ছাপ নিয়ে প্রিঅ্যাকটিভ সিম সংগ্রহ করছে অপরাধীরা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আশা করি তারা একে একে ধরা পড়বে। কিন্তু যেসব সিম জালিয়াতি করে অপরাধীদের হাতে চলে গেছে, সেসব সিম দিয়ে অপরাধ সংঘটিত হলে তার দায় কারÑএ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজারে প্রিঅ্যাকটিভ সিম পাওয়া যাচ্ছে, এমন খবর পাওয়ার পরই আমি নিজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য লিখিতভাবে বলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে কয়েক হাজার সিমসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৩১ মে’র পর থেকে যেসব গ্রাহক নতুন সিম কিনতে বা পুরনো সিম নিবন্ধন করতে যাচ্ছেন, তাদেরই প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা গোটা প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। আশা করি কাজটি তারা বেশি দিন চালাতে পারবে না। তার আগেই তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়া হবে। তাছাড়া এভাবে খুব বেশি সিম তারা নিতে পারেনি। এক থেকে দেড় লাখ সিম প্রতারণার মাধ্যমে নিতে পারে।
তারানা বলেন, একটা কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার পর যদি এ নিয়ে আবারও কোনো চক্রান্ত হয়, তা কোনোভাবেই মানা হবে না। এর আগে সিম পুনর্নিবন্ধনের সময় অনেক মহল চেষ্টা করেছে এটাকে বানচাল করার। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এখন যেটা করা হচ্ছে, এখানেও তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।
অথচ গত ৫ মে ইনকিলাবে একজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে অন্যজনের সিম নিবন্ধনের খবর প্রচারিত হয়। গত ১৯ জানুয়ারি উত্তরায় রবির কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়ে নিজের নামে কেনা সিমটি আহসানুর রহমান নিজেই নিবন্ধন করেন। নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও একটি নয়, দুটি নয়, ১০টি আঙুলের ছাপ দিয়ে তবেই নিবন্ধিত হয়েছে তার সিমটি। এরপর তিনি নিশ্চিন্তেই ছিলেন যে, তার সিমটি তার নামেই নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন পর হঠাৎ তার রবি নম্বরটিতে একটি এসএমএস আসে, সেখানে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্মতারিখটি মিলিয়ে নিতে বলা হয়। যেটাকে নিবন্ধনের জন্য ভেরিফিকেশন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই এসএমএসে দেখা যায়, তার সিমটি নিবন্ধিত হয়েছে অন্য একজনের পরিচয়পত্র দিয়ে। এমনকি তার জন্মতারিখও ভুল। তিনি বলেন, আমার সিমটি অন্য কারো জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে নিবন্ধিত হয়েছে। তাহলে আমার আঙুলের ছাপ এবং পরিচয়পত্র দিয়ে কার সিম নিবন্ধিত হয়েছে তিনি প্রশ্ন করেন?
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সারা দেশে ঘটা করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ দিয়ে সিম পুনর্নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এই সময় পুনর্নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।