Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হামলাকারীরা উচ্চশিক্ষিত ও ধনী ঘরের সন্তান

প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কথিত আইএস-এর সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলাকারীরা উচ্চ শিক্ষিত এবং অভিজাত কিংবা ধনী পরিবারের সন্তান। হামলাকারী সাতজন একটি স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য। কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া উচ্চশিক্ষিত তরুণ। তাদেরকে ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবেও বর্ণনা করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, এরা কেউই কখনোই মাদ্রাসায় পড়তে যায়নি। ইসলামিক জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া আজকাল একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করেছে ইসলামিক স্টেটের বার্তা সংস্থা আমাক। আইএসপিআর থেকে হামলাকারীদের মৃতদেহের যে ছবি সরবরাহ করা হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে আমাকে প্রকাশিত হামলাকারীদের চেহারা অনেকাংশেই মিলছে।
এর আগে শুক্রবার রাতেই আমাকের বরাত দিয়ে জঙ্গি কর্মকা- পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্সে খবর বেরিয়েছিল হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার দায়িত্ব আইএস নিয়েছে এবং জিহাদিরা বিশ জনকে হত্যা করেছে। পরদিন শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের পর হলি আর্টিজানে ২০ জনেরই গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।
এমনকি কমান্ডো অভিযানের আগেই হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের ভেতরের হত্যাযজ্ঞ এবং গলাকাটা লাশের ছবি প্রকাশ করা হয় সাইটে। এদের মধ্যে সতেরো জন বিদেশি, দুজন বাংলাদেশী এবং একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক। কমান্ডো অভিযানে ছয়জন হামলাকারী নিহত হলেও একজনকে জীবিত আটক করা হয়েছে। তাকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এদিকে ফেসবুকে কিছু তরুণের প্রোফাইল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এসব প্রোফাইলের কোনো কোনোটির মালিকের সঙ্গে হামলাকারীদের চেহারার মিল পাওয়া যাচ্ছে। অন্তত তিনজনের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে তারা ঢাকায় নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহণ শেষে মালয়েশিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। আইএসপিআর এবং ইসলামিক স্টেটের বার্তা সংস্থা আমাক হামলাকারীদের যে ছবি প্রকাশ করেছে সেসব ছবির সাথে এই প্রোফাইলের মালিকদের চেহারা মিলে যাচ্ছে। আরেকজনের প্রোফাইল গতকাল রোববার ভোররাত তিনটে পর্যন্ত বহুবার শেয়ার করা হয় ফেসবুকে। তাদের বাবা-মা, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের ছবিও বহুবার শেয়ার হয়। এরপর থেকেই প্রোফাইলটি অকার্যকর দেখা যায়। এমনকি তার পরিবারের সদস্যদের প্রোফাইলও অকার্যকর দেখা যায়। কিন্তু এরাই গুলশানের হামলাকারীরা কিনা সেটা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হামলাকারীদের যে নাম প্রকাশ করেছে তার সঙ্গে এসব প্রোফাইলধারীদের নামও মিলছে না।
রাজধানীর গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলায় অংশ নেওয়া সবাই বাংলাদেশি এবং তাদের সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। এরা সবাই স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা জঙ্গি। গতকাল রোববার বিকেলে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন।
এ ঘটনায় কারা জড়িতÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এই সমস্ত ছেলেগুলো, যারা জঙ্গি হিসেবে শনাক্ত হতে যাচ্ছে। তবে এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার পর কারা কী অবস্থায়, কীভাবে এখানে এলো তদন্ত করেই বলতে পারব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা জঙ্গি হিসেবে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন, এরা সবাই বাংলাদেশি, এরা বিদেশি নয়। বিদেশিদের সঙ্গে এদের কানেকশন আছে বলে আমাদের মনে হয় না, এরা সবাই দেশে বেড়ে ওঠা। দেশের লোকজনের পরামর্শেই তারা কাজ করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এরা সবাই দেশীয়, এরা বাইরে থেকে আসেনি। এদের সবারই বাংলাদেশে একটা অবস্থান রয়েছে। সবারই বাংলাদেশে বাবা-মা আছে। এদের বাবা-মা হয়তো খোঁজাখুঁজি করেছিল; তারা যে জঙ্গি সংগঠনে জড়িত হয়েছে তাদের বাবা-মা জানতেন না, এখন জানলেন।
হামলার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ওই দিন ঘটনা ঘটার ৫ মিনিটের পরেই পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছায়। পুলিশের তখন যা করণীয় তাই করেছে, জঙ্গিরা যেন না পালিয়ে যেতে পারে এ জন্য চতুর্দিকে ঘিরে ফেলে। সেই ঘেরাওয়ের মুহূর্তে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং পরে সেনাবাহিনী এসে এর পরিসমাপ্তি ঘটান। হাসপাতালে ২২ জন বীর পুলিশ আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি। আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দেশমাতৃকার জন্য এই জঙ্গিদের মোকাবিলা করেছেন, তারা স্থান ত্যাগ করেননি।
গুলশান হামলার ঘটনায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট মামলা দায়ের করবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক। তিনি বলেন, এই ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া তদন্তাধীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হামলাকারীরা উচ্চশিক্ষিত ও ধনী ঘরের সন্তান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ