Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকায় জঙ্গি হামলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে সরাসরি চ্যালেঞ্জ: ইইউ

প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাতিসংঘের নিন্দা : বৈশ্বিক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জরুরি -রাশিয়া
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পাশাপাশি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের পক্ষ থেকেও আলাদা করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ঢাকায় জঙ্গি হামলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে সরাসরি চ্যালেঞ্জ। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ত্রাস মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জরুরি বলে মন্তব্য করেছে। গুলশান হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন ক্যামেরন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেছেন। দুঃখ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, এটি খুবই জঘন্য এবং ভীরু চিত্তের হামলা। বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। হামলার নিন্দা জানিয়ে আলাদা করে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তিনি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। যারা আহত হয়েছেন, তিনি তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন বিবৃতিতে।
মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, যারা এই অপরাধের পেছনে রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। হুমকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে দৃঢ় অবস্থান নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। সন্ত্রাসবাদ রোধ এবং মোকাবেলা করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরালো করার ওপর জোর দেন বান কি মুন।
এ ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদর দফতরের দেয়া বিবৃতিতে এ দুঃসময়ে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে থাকার এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টার কথা ঘোষণা দিয়েছে ইইউ। গতকাল রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেনটিটিভ ফ্রেডারিকা মগহারিনি এ বিবৃতি দেন। তিনি ইতালির একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক।
বিবৃতিতে ফ্রেডারিকা মগহারিনি বলেন, শুক্রবার রাতে ঢাকায় সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে, তাতে একাধিক দেশের ২০ জন নাগরিকের নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা সন্ত্রাসবাদ দমন ইস্যুতে সরাসরি বিশ্ব সম্প্রদায়কেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ এখন বিশ্বের জন্য বড় হুমকি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবেই এর মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে আছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টা আরও জোরদার করবে ইইউ। একইসঙ্গে যেসব দেশের নাগরিকরা এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি সহমর্মী ইইউ।
ফ্রেডারিকা আরও জানান, এ হামলার ঘটনা নিয়ে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ঢাকায় ইইউ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতালি দূতাবাসকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামের বলেছেন, বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে যুক্তরাজ্য তার পূর্ণ সহযোগিতা দিয়ে যাবে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গতকাল রোববার এক বার্তায় গুলশান হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং তার সরকারের সর্বত্র সহায়তার আশ্বাস দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে রাশিয়াও তার একাত্মতা ঘোষণা করেছে। রাশিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেন্টিলোনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীকে ফোন করেছেন।
গত শনিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির সংবাদমাধ্যম স্পুতনিক নিউজকে বলে, ঢাকার ঘটনা আবারও নিশ্চিত করল, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অতি শিগগির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ‘কঠিন’ এ সময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় প্রণব হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জিম্মিদের উদ্ধারে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
ঢাকায় হামলার খবরে ‘মর্মাহত’ হওয়ার কথা জানিয়ে আবদুল হামিদের কাছে লেখা বার্তায় প্রণব মুখার্জি বলেন, আপনার সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকজন জিম্মিকে উদ্ধারের খবরে দুশ্চিন্তামুক্ত হলেও নৃশংস হামলায় নিরীহ মানুষদের হত্যা এবং কয়েকজনের আহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত।
ভারত সব সময় এ ধরনের সন্ত্রাসের নিন্দা জানায়। আমরা বিশ্বাস করি এ ধরনের নৃশংস হামলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বাংলাদেশের এ কঠিন সময়ে ভারতের জনগণ পাশে থাকা ছাড়াও শোক ভাগাভাগি করে নেবে, বলেন প্রণব। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজাক। টুইটারের এক খুদে বার্তায় তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদ আরো একবার মানুষের হৃদয়ে ভয়ের আঘাত হানলো। এবার টার্গেট ঢাকা। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর সবাইকে একসাথে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। মুসলিম হিসেবে আমরা সবাই সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত মানুষদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করছি। সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই, নেই কোনো জাতি। সন্ত্রাসীরা কখনই মুসলিম নয় এবং মুসলিম বিশ্বে তাদের কোনো স্থান নেই। এ সময় বাংলাদেশি মানুষের পাশে সব সময় থাকার প্রতিশ্রুতি জানান মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে এ হামালা ও হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুর তাজ তাশি হোটেলে অবস্থানকারী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তোবগে তার অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, তার দেশ সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে। এ সময় তিনি জিম্মি সংকট অবসানে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশের জনগণ এ ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি বার্তা পেয়েছে, সেটি হলো সে দেশের সরকার কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-কে প্রশ্রয় দেবে না।
অন্যদিকে, ভয়ঙ্কর এই জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত শনিবার তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে তৃণমূলের দলীয় সাংগঠনিক এক বৈঠকে বলেন, ওই ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে এবং পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। মমতা আরো বলেন, সন্ত্রাসবাদের কোনো সীমানা নেই, ধর্ম নেই। এ ধরনের অমানবিক জঙ্গিদের আমাদের সমবেতভাবে পরাজিত করতে হবে। তবেই মানবিকতার জয় হবে।
ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক, অ্যাকটিং হাই কমিশনার মার্ক ক্লেটন এবং ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের স্টাফদের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানান, এই হামলার শিকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষদের পরিবার ও পরিজনদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাই এবং কৃতজ্ঞতা জানাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী, নিরাপত্তা ও জরুরি সেবা প্রদানকারীদের, যারা এই ভয়ংকর ঘটনার পরিসমাপ্তি টানতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং আক্রান্তদের সহায়তা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের নিকট বন্ধু এবং কমনওয়েলথের সহযোগী হিসাবে, যুক্তরাজ্য, এখানে যা ঘটেছে তার ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বেগ অনুভব করছে এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী বৈশ্বিক লড়াইয়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকায় জঙ্গি হামলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে সরাসরি চ্যালেঞ্জ: ইইউ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ