Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঈদ কেন্দ্রিক টানা ছুটি

প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এটিএম বুথ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনে বিড়ম্বনার শঙ্কা কার্ড জালিয়াতি এড়াতে এসএমএস এলার্ট
হাসান সোহেল : টানা নয় দিন ছুটির ফাঁদে ব্যাংকগুলো বন্ধ। গ্রাহকদের লেনদেনের শেষ ভরসা এটিএম বুথের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা ও পর্যাপ্ত টাকা না থাকা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট বন্ধ থাকায় নগদ অর্থের লেনদেন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও পূর্ব থেকে গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে ঈদের ছুটিতে চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারেন, সে জন্য ব্যাংকের এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে গত বছরের মতো এবারো কার্ড জালিয়াতির শঙ্কায় আছেন গ্রাহকরা। যদিও ঘটনা এড়াতে যে কোনো লেনদেনের সাথে সাথে গ্রাহককে এসএমএস এলার্ট প্রদান করারও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র মতে, শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংকের সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ১ ও ২ জুলাই ব্যাংক বন্ধ। ৩ জুলাই শবে-কদরের বন্ধ। ৪ তারিখও ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ৫ জুলাই থেকে ৭ জুলাই ঈদের ছুটি। তারপর ৮ ও ৯ জুলাই শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংকের সাপ্তাহিক ছুটি। সবমিলে দেশের ব্যাংকিং খাত টানা ৯ দিন ছুটির কবলে পড়েছে। এ সময় সাধারণ লেনদেন বন্ধ থাকবে। টানা ৯ দিন ছুটির সময় সাধারণ গ্রাহকের লেনদেনের সুবিধার্থে অটোমেটিক টেলার মেশিন বা এটিএম বুথে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সরবরাহ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ব্যাংক ছুটিতে দেশে প্রায় ৯০ হাজার এটিএম কার্ড গ্রাহকের একমাত্র ভরসা এটিএম বুথ। বর্তমানে দেশে এটিএম বুথ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজার। অন্যন্যা সময়ে ব্যাংকের শাখাগুলোর মাধ্যমে লেনদেনের পাশপাশি এটিএম বুথ ও ফার্স্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে টাকা জমা ও উত্তোলন করেন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকায় চাপ পড়ে এটিএম বুথে। আর অত্যধিক চাপ থাকায় এটিএম বুথগুলোয় টাকার স্বল্পতা, কারিগরি ও নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। ইতিমধ্যে নেটওয়ার্ক ও টাকা সমস্যায় অনেক গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন। গতকাল ঢাকার কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথে নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় টাকা উত্তোলন করতে না পারার অভিযোগ করেছেন অনেক গ্রাহক। এটিএম বুথে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও এক-দুই দিন পর এসব বুথে অর্থ থাকবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ঈদে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বুথে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। কোনো গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হবে না। যদিও প্রতি বছরই ঈদের টানা ছুটির সময় এটিএম বুথগুলোতে অর্থ সঙ্কট দেখা দেয়। গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেন না। তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পান না। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এটিএম বুথে টাকা না থাকার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুসন্ধান করা হয়। এতে দেখা যায়, শুধু ব্যাংকের গাফিলতির কারণে গ্রাহকের হয়রানি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানের জবাবে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এটিএম বুথে টাকার জোগান দেয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা ছুটিতে থাকায় কোনো বুথে টাকার সঙ্কট হলেও জোগান দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ে। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে এবার আগে থেকেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
অন্যদিকে অনলাইন পদ্ধতির মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সাধারণ গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি লেনদেন করেন। বর্তমানে প্রতিদিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৬২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। দেশের রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশও আসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ব্যাংক বন্ধ থাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টগুলো বন্ধ থাকবে। ফলে এ সময় গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্টগুলো বন্ধ থাকায় নগদ অর্থ সরবরাহ করতে পারছেন না অনেকেই। বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট নগদ অর্থ দিতে পারছে না। ইতোমধ্যে গ্রামীণ গ্রাহকদের লেনদেনের জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পর্যাপ্ত অর্থ পেতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেকে। ঢাকা থেকে যারা গ্রামে গিয়েছেন অনেকেই নগদ টাকা না নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিয়েছেন। তারাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী, ব্যাংকের বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চল শাখা গত ২ ও ৩ জুলাই খোলা ছিলো। আজ ৪ জুলাইও খোলা থাকবে। তবে দেশের অন্যান্য শাখা বন্ধ থাকবে। নির্ধারিত শাখাগুলো তিন দিন মাত্র দুই ঘণ্টা করে খোলা রাখার কথা। এ সময় সারা দেশে ১০ হাজার শাখার মধ্যে মাত্র কয়েকশ’ শাখা খোলা থাকবে। বড় শহরগুলোর বাইরে কোনো শাখা বা এজেন্ট ব্যাংক খোলা থাকবে না। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মাত্র ৪০টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৬০টি শাখা খোলা থাকবে। তবে তাদের ফার্স্ট ট্র্যাকগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ সময় সাধারণ গ্রাহকদের এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। সারা দেশে বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখন অনেকটা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে গত বছর ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এটিএম বুথে কার্ড জালিয়াতি ঘটেছিল। এবার এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এটিএম বুথ থেকে যে কোনো অঙ্কের লেনদেন হলেই গ্রাহককে সাথে সাথে এসএমএস এলার্ট নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। একই সাথে পয়েন্ট অবসেল বা পিওএস এবং ই-পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া লেনদেনের মাধ্যমে কেউ যাতে অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ডিএমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যেও আমরা প্রায় ৮০ ভাগ শাখা খোলা রাখব। এটিএম বুথ ও মোবাইল এজেন্টদের টাকা সরবরাহ করতে ঈদের দিনেও বিশেষ ব্যবস্থায় ভল্ট থেকে টাকা সরবরাহ করা হবে। আশা করি গ্রাহকের কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ঈদের ছুটিতে মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম বুথে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ করতে সব ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকার শাখাগুলো ২, ৩, ৪ জুলাই খোলা থাকছে। গ্রাহকদের কোনো সমস্যা হবে না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ কেন্দ্রিক টানা ছুটি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ