পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রথম কর্তব্য হচ্ছে সে দেশের সরকার ও জনগণের। গতকাল রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, কে ক্ষমতায় থাকবে, কে ক্ষমতায় যাবে, সেটা আজ বড় কথা নয়। আজ আমরা যারা আছি, আগামীতে তারা কেউ হয়তো থাকব না। দেশ ও জাতি থাকবে। আজ দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিপন্ন। তাই কালবিলম্ব না করে আসুন, আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলেন। এরপর বিকেল পৌনে ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন বেগম খালেদা জিয়া।
শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন শুক্রবার রাতে গুলশানে ক্যাফেতে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার গুলশানে সন্ত্রাসীদের গুলি-বোমায় দু’জন পুলিশ অফিসার নিহত ও অনেকে আহত হন। রাতেই (শুক্রবার) সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে জিম্মি দেশী-বিদেশী ২০ জন নিরপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই পৈশাচিক সন্ত্রাসী হামলা ও নারীসহ দেশী-বিদেশী নির্দোষ নাগরিকদের এভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা করার কোনো ভাষা নেই। আমরা গভীর বেদনাহত ও ক্ষুব্ধ। কোনো অজুহাতেই শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার সুস্থতার লক্ষণ নয়।
ওই হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটি এবং সন্ত্রাসীদের সামর্থ্য প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
উগ্রবাদীদের হামলায় ধারাবাহিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের এই শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশে ভয়াবহ সন্ত্রাসের দানব গোপনে বেড়ে উঠেছে। তারা এখন পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই ভয়ঙ্কর ছোবল হানছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দৃশ্যমান শত্রুর তুলনায় অদৃশ্য শত্রুর হামলা মোকাবিলা এবং তাদের দমন করা অনেক কঠিন। এ কথা জানি বলেই আমরা এতটা উৎকণ্ঠিত।
গুলশানের বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনার অবসানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের হত্যা, সন্দেহভাজন জঙ্গি আটক, জিম্মিদশা থেকে ১৩ জন দেশী-বিদেশী নাগরিক উদ্ধারে স্বস্তি প্রকাশ করে খালেদা জিয়া সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও অগ্নিনির্বাপক দলের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে তাদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই জাতীয় জীবনে এমন সঙ্কটে তাদের সামর্থ্য ও অনিবার্য প্রয়োজন আরেকবার প্রমাণ করার জন্য। গণমাধ্যমের কর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
হামলা চালালে রাতভর গুলশানে আর্টিসান বেকারিটি পুলিশ, র্যাব, বিজেবি ঘিরে রাখার পর শনিবার সকালে সামরিক বাহিনী যুক্ত হয়ে কমান্ডো অভিযানে জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়। ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামের সমন্বিত এই অভিযান সকালে ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় শেষ হয়। অভিযানে একজন জাপানি, দু’জন শ্রীলংকান নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত এবং ২০টি লাশ উদ্ধার করা হয়।
সন্ত্রাসীদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিন বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ওই ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুস্থতাও কামনা করেন তিনি।
সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ইতালীয়, জাপানি ও ভারতীয় নাগরিক হত্যায় তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং সেসব দেশের সরকারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা ও নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিতে পারে না। কোনো আর্দশ কিংবা ধর্মই এ ধরনের কা-জ্ঞানহীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনুমোদন করে না। শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী। সংযম সাধনার মহিমান্বিত রমজান মাসে এই রক্তপাত প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে স্তম্ভিত করেছে।
সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদের এই সঙ্কট মোকাবিলায় যেসব বন্ধু দেশ বাংলাদেশকে সহানুভূতি ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে তারা সন্ত্রাস মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তবে নির্দিষ্ট ভূখ-ে সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রথম কর্তব্য হচ্ছে সে দেশের সরকার ও জনগণের। বর্তমানে আমরা সন্ত্রাসের যে চিত্র দেখছি সেটা নিছক আইনশৃঙ্খলাজনিত মামুলী কোনো সমস্যা নয়। এই সঙ্কটের শেকড় আরো অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।
তিনি বলেন, সারাদেশে সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত। মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মগুরু ও যাজক, ভিন্নমতের লেখক-প্রকাশক-ব্লগার, খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছে। কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। এই আতঙ্ক ও হত্যালীলা থামাতে হবে। বন্ধ করতে হবে রক্তপাত। আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতে হবে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
খালেদা জিয়া মনে করেন, গণতন্ত্রহীন দেশে স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য-বঞ্চনা ও সুশিক্ষার অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এই সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশই জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।
ঈদের প্রাক্কালে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ‘ঈদ মোবারক’ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা, সাবেক এমপি হেলেন জেরিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।