পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শেখ হাসিনাকে মোদি, আবের ফোন
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : রাজধানীর কূটনীতিকপাড়ায় একটি রেস্টুরেন্টে জিম্মি করে রাখা বিদেশীদের হত্যাকা-ের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে শোক, সমবেদনা এবং পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন বিশ্বনেতৃবৃন্দ। সেই সাথে সবরকম সহায়তার কথাও জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন।
গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ঢাকা আসছেন জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা। গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, নেপালি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলিও এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাট্টেও রেনজি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, এ ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের ঘটনাবলির ওপর নজর রাখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশকে সহায়তারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় হতাহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তারা সব সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল সকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন। তারা দু’জনই গত রাতের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং সরকারের গৃহীত ত্বরিত ব্যবস্থার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানান এবং জিম্মি উদ্ধারে সরকারের নেয়া ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। ভারত ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত থেকে শুরু করে যেকোনো পর্যায়ে সাহায্য করতে ভারত প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহত জাপানি নাগরিকের যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গুলশানের ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি আশা করছেন এই সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার সম্ভাব্য সব কিছুই করবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়াশুদা সুগা বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা দূতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দেয়ার জন্য জাপান থেকে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ সরকার উগ্রপন্থীদের দমনে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশকে জাপানের অন্যতম বন্ধু উল্লেখ করে সুগা বলেন, দেশটির এই সঙ্কট মোকাবেলায় জাপান সব সময় পাশে থাকবে। ৯০৬ জন জাপানি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি।
গতকাল জাপানের সংবাদমাধ্যম এনএইচকে জানায়, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ঢাকা আসছেন জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা। ইতোমধ্যে তারা ঢাকায় আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। দেশত্যাগের আগে নারিটা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কিহারা বলেন, ঘটনা আসলে কী হয়েছে সেটা জানার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তিনি। উদ্ধারকৃত জাপানি নাগরিক এবং নিখোঁজ হওয়াদের উদ্ধারে কাজ করবেন তারা। ইতোমধ্যে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ দল পাঠিয়েছে দেশটির সরকার। সেখানে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তার রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক টুইট বার্তায় বলেন, ঢাকায় এই হামলা আমাকে বর্ণনাতীত ব্যথিত করেছে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে এই কাপুরুষোচিত হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। ভারত বাংলাদেশী ভাইবোনদের পাশে আছে। নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইট বার্তায় গুলশানের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। ১৮ বছর বয়সী তারুশী জেইন নামের ভারতীয় এক তরুণী নিহত হয়েছেন বলেও টুইট বার্তায় উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও গতকাল শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে বলেন, এই আক্রমণ মানবজীবনের যাবতীয় নীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। গভীর শোক প্রকাশ করে সোনিয়া গান্ধী বলেন, এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, যারা এর পেছনে রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সংঘবদ্ধ হয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে কংগ্রেস দৃঢ়ভাবে সমর্থন নিয়ে আছে বলে বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন।
ভারতীয় দলের হেড কোচ ও সাবেক ক্রিকেটার অনিল কুম্বলেও টুইট করে আক্রান্তদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। গুলশান হামলার পর বাংলাদেশকে নিয়ে চালু হওয়া হ্যাশট্যাগে (#উযধশধঅঃঃধপশ) অনিল কুম্বলে আক্রান্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে লিখেছেন, সন্ত্রাসবাদের আরেকটি কা-জ্ঞানহীন কারবার। ঢাকা আক্রমণে আক্রান্তদের ঘিরেই রইল যত ধ্যান ও প্রার্থনা। এছাড়া এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিভিন্ন পোস্ট দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেক তারকা।
বাংলাদেশে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ঢাকার ভয়াবহ হামলাকে মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টির আরেকটি উপায় বলে অভিহিত করেন। এ নিয়ে তিনি বেশ কিছু টুইট করেছেন। তাতে তিনি সবাইকে মনে করিয়ে দেন সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম বা জাত নেই। সন্ত্রাসীরা মুসলিম নয়। মুসলিম বিশ্বে তাদের কোনো জায়গা নেই। সত্যিকার মুসলিম হিসেবে শর্তহীনভাবে তাদেরকে আমাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যারা ইসলামের অপব্যবহার করে।
এদিকে দ্য হিমালয়ান পত্রিকা জানিয়েছে, নেপালি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলিও গুলশানে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, গুলশানে হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এ হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশকে সহায়তারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
তবে গুলশানের রেস্তোরাঁয় ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলা চালিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে আইএস যে এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে, সে ব্যাপারে দেশটি অবগত রয়েছে। হামলার বিষয়টি জেনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।
জন কিরবি এ হামলায় বাংলাদেশী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ওবামার সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা লিসা মোনাকো গুলশানে হামলার বিষয়টি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এ হামলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলেছেন। পরিস্থিতির উন্নতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন গুলশানের হলি আর্টিজেন রেস্টুরেন্টে হামলার পর এক টুইট বার্তায় উদ্বেগ জানিয়ে তিনি হামলাকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা কখনই এ ধরনের হামলায় ভীত হয়ে মাথানত করব না। এছাড়া টুইটে তিনি ভেতরে আটকে পড়া জিম্মিদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করছেন বলেও জানিয়েছেন। হিলারির টুইটার অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখা যায়, তার সর্বশেষ টুইটটি তিনি গুলশান হামলার পরপরই করেছেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাট্টেও রেনজি অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে বলেন, একটি সরকারি বিমান বাংলাদেশের রাজধানীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। শনিবার রোমে এক সংবাদ সম্মেলনে গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান তিনি।
তিনি বলেন, মৌলবাদী ইসলামী ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হয়েছি... উন্মাদনার মুখেও আমরা প্রাত্যহিক জীবন থেকে মুখ ফেরাবো না। মাট্টেও রেনজি বলেন, আমরা ভিন্ন ধরনের ফলাফলের আশায় ঢাকার ঘটনার ওপর সারারাত নজর রেখেছি। গত শুক্রবার রাতে হামলার সময় গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ার ওই রেস্টুরেন্টে ১০-১১ জন ইতালীয় নাগরিক আটকা পড়েন। জিম্মিদশা থেকে পালিয়ে আসা এক ইতালীয় নাগরিকের বরাত দিয়ে মাট্টেও রেনজি এ তথ্য জানান।
এদিকে গতকাল রাত ১টায় ইউরোর তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে মুখোমুখি হবে ইতালি এবং জার্মানি। সেখানে গুলশানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামে ইতালির ফুটবলাররা।
এক টুইটার বার্তায় শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় শ্রীলঙ্কার দুই নাগরিকও জিম্মি ছিলেন। তাদের জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টুইট বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র বলেন, উদ্ধারকৃত জিম্মিদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার ২ নাগরিক রয়েছেন। শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তারা অক্ষত ও নিরাপদে আছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।