পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর এখনো নিখোঁজ রয়েছেন দেশি-বিদেশি অনেক নাগরিক। তবে দেশি-বিদেশি কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। গতকাল (শনিবার) রাতে এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪ জন, ইতালির ১০ জন এবং জাপানের ৭ জন নাগরিক নিখোঁজ থাকার বিষয়টি জানা যায়। বাংলাদেশি ও বিদেশী নাগরিক নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তাদের পরিবার ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে।
রাজধানীর শাহজাদপুরের বাসিন্দা শাহরিয়ার আহমেদ। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় রেস্টুরেন্টে চাকরি করেছেন। এর পরে মালয়েশিয়ার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে যোগ দেন ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারিতে। গুলশানের রেস্টুরেন্টটিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে জিম্মি হন শাহরিয়ারও। কিন্তু শনিবার (গতকাল) সকালে বাসার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠালেও তারপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তার। এভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শাহরিয়ারের চাচা মোস্তাক জাহিদ। মোস্তাক জাহিদ বলেন, শনিবার সকালে শাহরিয়ার এসএমএস করেন- ‘তোমরা আমার জন্য দোয়া করো। আমি ভালো আছি’। এরপর থেকে শাহরিয়ারের ফোন বন্ধ। কোথাও কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে না তার। তিনি বলেন, ‘শাহরিয়ারের বাবা ওসমান আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ছেলের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্য বার বার ফোন করছেন এবং তিনি বলছেন, ‘আমার ছেলে কালো শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা। খবর নিয়ে দেখো কোথায় আছে? ছেলে ছাড়া আমি মরে যাবো’। তিনি আরো বলেন, শাহরিয়ারের বাবাকে জানিয়েছি- ‘সকালে তিনজনকে হলি আর্টিসান বেকারি থেকে বের করা হয়েছে, তাদের সবাই সাদা পোশাক পরা’। ঘটনার পর থেকে জাহিদের মতো আরও অনেকে স্বজনদের নিরাপদে ফিরে আসার অপেক্ষায় গুলশানে অবস্থান করছেন।
আর্টিসান বেকারিতে জিম্মিদের মধ্যে থাকা তিন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর দিয়েছে তাদের পরিবার। এর মধ্যে একজন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন। একজন ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির সাবেক প্রধান ইশরাত আখন্দ, ল্যাভেন্ডারের মালিকের নাতনী অবিন্তা কবীর। লতিফুর রহমানের মেয়ে সিমিন হোসেনের দুই ছেলের মধ্যে ফারাজ সবার ছোট। ফারাজ ট্রান্সকম গ্রুপে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজও করেছিল। শুক্রবার রাতে নিজে গাড়ি চালিয়ে গুলশানের ওই ক্যাফেতে ফারাজ গিয়েছিলেন। ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভসে ছিলেন। তিনি গ্রামীণফোন ও ওয়েস্টিন হোটেলেও কাজ করেছিলেন। অবিন্তা কবিরের দাদা মনজুর মোরশেদ সুপার স্টোর ল্যাভেন্ডারের মালিক।
১০ ইতালীয় নাগরিক নিখোঁজ : গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এখনো ১০ ইতালীয় নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন। তারা সবাই গার্মেন্টস শিল্প ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন দিয়েছেন দেশটির ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত। নিখোঁজ নাগরিকদের বিষয়ে ইতালির সংবাদ সংস্থগুলো খবর প্রকাশ করছে। ইতালীয় সংবাদ সংস্থা আনসা জানায়, নিখোঁজ হওয়া ১০ ইতালীয় নাগরিক গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে পোশাক ক্রয় সংক্রান্ত কাজে তারা ঢাকায় গিয়েছিলেন। রাতের খাবারের জন্য ঐ রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন তারা। এদিকে আর্টিসান রেস্তোরাঁর হামলার ঘটনার পর থেকে ছয়জন ইতালীয় নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছে স্টুডিও টেক্স লিমিটেড। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- বিন চ্যান জো, নাদিয়া বেন ডেপ্তি, আদি, মারাকা, মারিয়া ও সিমনি। তারা স্টুডিও টেক্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় ঘটনাস্থল থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক ফারুক আলম খতিব তাদের নিখোঁজের কথা জানান। তিনি জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই ছয় ইতালীয় নাগরিক গত শনিবার রাতে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে আসেন। তারা দুটি গাড়িতে করে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে যায়। হামলার পর দুই চালক পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পুলিশও তাদের সন্ধান দিতে পারছে না।
৭ জাপানি নিখোঁজ : গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৮ জাপানি নাগরিক নিখোঁজ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জাপানের মন্ত্রিসভার উপসচিব কইচি হ্যাগিউদা গতকাল বলেন, হামলার সময় রেস্টুরেন্টে একসঙ্গেই ছিলেন জাপানের আট নাগরিক। আমাদের এক নাগরিককে জীবিত উদ্ধার করা হলেও এখনো নিখোঁজ আছেন ৭ জন। জাপানের ওই নাগরিকরা হলি আর্টিসান বেকারিতেই ছিলেন বলে জানানো হয়েছে। হ্যাগিউদা আরো বলেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া জাপানি নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। জিম্মি সংকট সম্পর্কে কোনো বিশেষ কথা না বললেও উদ্ধার হওয়া জাপানি নাগরিক কথা বলতে পারছেন বলে জানান তিনি। হ্যাগিউদা বলেন, আট জাপানি নাগরিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার হয়ে তাঁরা একটি প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।