পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিরাপদ আশ্রয়ে কূটনীতিকসহ বিদেশী নাগরিকরা ভ্রমণ সতর্কতা জারি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : গুলশানে বিদেশী জিম্মিদের হত্যাকা-ের পর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তায় গুলশান-বারিধারা ও বনানী এলাকায় অতিরিক্ত সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। গতকাল সকালে এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালিয়ে জীবিত জিম্মিদের উদ্ধার করে এবং জিম্মিকারীদের হত্যা করে।
এ প্রেক্ষিত্রে নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাসসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন। ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই কূটনীতিকসহ বিদেশী নাগরিকরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাথে কোন কোন দেশ বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতাও ঘোষণা করেছে। এদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকেও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সারাদেশের নিরাপত্তা বিশেষ করে রাজধানীর কূটনৈতিকপাড়া গুলশানের নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটির ডিসি জসিম উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, শুক্রবারের ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সিকিউরিটি বুস্টআপ করেছি। একইসাথে প্রত্যেকে রায়াট কন্ট্রোল ইকুইপমেন্টগুলো যাতে পরিধান করে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকে সেটা এনসিউর করেছি। আর রাত্রিকালীন আমাদের সিনিয়র অফিসার বিশেষ করে এসি লেভেলের অফিসারদের ডেপ্লয় করেছি টু মনিটর অল দ্য অ্যাম্বেসী। আর দূতাবাসগুলোর সিনিয়র কন্ট্রাক পারসন যারা তাদের সাথে যোগাযোগটা রক্ষা করছি। তারা অমাদের সবকিছু শেয়ার করছি।
তিনি আরো বলেন, সেইসাথে সর্বোচ্চ লেভেলের টহল দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে। এটা যতদিন নিরাপত্তা হুমকি থাকছে ততদিন বজায় থাকবে।
এদিকে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পর ওই ঘটনার প্রভাব পড়েছে পুরো গুলশান ও কূটনৈতিক এলাকাজুড়ে। নিñিদ্র নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের চলাচলও একেবারে সীমিত হয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার গুলশান ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ঘটনাস্থল হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টটি এখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে রেখেছে। কমান্ডো অভিযান শেষে দুপুর দেড়টার দিকে সাঁজোয়া যানগুলো নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে সেনাবাহিনী। তবে কিছু সেনাসদস্য এখনো ওই এলাকায় আছেন। এ ছাড়া র্যাব, পুলিশ, বিজিবি নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে। রেস্টুরেন্ট থেকে অনেকটা দূরে বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গুলশান এলাকার প্রতিটি প্রবেশ পথে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। যানবাহন চলাচল একপ্রকার বন্ধই রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি রিকশা চলতে দেখা গেছে। পুরো এলাকায় দোকান-পাটও তেমন একটা খোলেনি। খুব বেশি কাজ না থাকলে মানুষ ওই এলাকা এড়িয়ে চলছেন। মানুষের চলাচলও খুবই সীমিত দেখা গেছে।
বিদেশি নাগরিকদের সতর্কতা দূতাবাসগুলোর
গুলশানে বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের পর নাগরিকদের সতর্ক করে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, ঢাকার গুলশান ২ এ হলি বেকারিতে গুলি ও জিম্মি পরিস্থিতির খবর পাওয়া গেছে। এক জরুরি নোটিশে দূতাবাস দেশটির নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার এবং বিভিন্ন নিউজ সোর্স থেকে খবর সংগ্রহেরও পরামর্শ দিয়েছে।
হামলার পর ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাই কমিশন গুলশান এলাকায় অবস্থানরত নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। নাগরিকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছে তারা।
অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের ‘উচ্চ মাত্রার সতর্কতা’ অবলম্বন করতে বলেছে দেশটির সরকার। গুলশানের হামলার এলাকা এড়িয়ে চলার পাশাপাশি ঘটনার অগ্রগতি জানতে সংবাদমাধ্যমের ওপর নজর রাখতে বলেছে তারা।
দেশটির ঢাকাস্থ দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতির সারমর্ম অংশে বলা হয়, বাংলাদেশ সন্ত্রাসী হামলার কবলে পরার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক অবস্থাও অস্থিতিশীল। সুতরাং চলাফেরার সময় নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী সঙ্গে নিয়ে চলুন। গুলশানের দূতাবাসে এ ধরনের হামলায় অস্ট্রেলিয়া মনে করছে হামলাকারীরা অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা নাগরিকদের টার্গেট করেছে। সুতরাং তাদেরকেই বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
একই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসও তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতের বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকায় তাদের দূতাবাসে সকল কর্মী নিরাপদে আছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের হাইকমিশন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এ ছাড়া অপরাপর বিদেশী দূতাবাসগুলোও বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের কূটনীতিক ও নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করছে।
বাংলাদেশ ভ্রমণে তিন দেশের সতর্কতা
বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা দেয়া হয়েছে। দেশগুলোর ওয়েবসাইটে দেয়া বার্তায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের গুলশান ২-এর ৭৯ নম্বর রাস্তার এলাকাটি এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেশটির নাগরিকদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল সীমিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বড় লোকসমাগম এবং আন্তর্জাতিক হোটেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও সতর্কতা দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির সরকারী কর্মকর্তাদের এই বলে সতর্ক করে দেয় যে, তাঁদের বিভিন্ন লোকসমাগমের জায়গায় ভ্রমণ, পায়ে হেঁটে, মোটরবাইক, বাইসাইকেল অথবা রিকশায় করে ভ্রমণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া প্রকাশ্য রাস্তায় ভ্রমণের ক্ষেত্রেও মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রায় একই রকম সতর্কতা জারি করে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা বার্তায় বলা হয়েছে, অতীতে বাংলাদেশে বেশ কিছুসংখ্যক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। ওই গোষ্ঠীগুলোর কয়েকটি পশ্চিমা-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। সতর্কবার্তায় বলা হয়, উন্মুক্ত স্থানে যাওয়ার সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত অস্ট্রেলিয়ানদের। আরো হামলা হতে পারে পশ্চিমা স্বার্থের বিরুদ্ধেও। সতর্কতার মাত্রা পরিবর্তিত হয়নি। আপনার (অস্ট্রেলিয়ান) উচিত বাংলাদেশে উচ্চমাত্রার সতর্কতা অনুসরণ করা। একই রকম সতর্কতা জারি করে দক্ষিণ কোরিয়াও দেশটির নাগরিকদের সারা দেশে ভ্রমণ সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।