পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : ঈদ মানে আনন্দ আর এই আনন্দের প্রস্তুতি নিতেই প্রতি বছরের মতো এবারও আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই কেনাকাটায় আর জমে উঠেছে নওগাঁ শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঈদ বাজার। জেলা শহরের প্রতিটি মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোতে দেখা গেছে ঈদের আমেজ। সব দোকানেই প্রচুর ক্রেতার সমাগম লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে দর্জি পাড়ার কারিগররা। রাতভর সেলাই মেশিনের শব্দে নির্ঘুম হয়ে থাকছে টেইলার্স পট্টিগুলো। কিছু কিছু টেইলার্সের দোকানে সাইনবোর্ড ঝুলছে “ঈদের শেষ আট দিন কোনো অর্ডার নেয়া হবে না”। ছোট থেকে শুরু করে ভিআইপি দোকানের কারিগররা এখন দিনরাত ব্যস্ত। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। তবে গত বারের চেয়ে এবার কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এছাড়া শাড়ির দোকানগুলোতেও রয়েছে সমান ভিড়। শাড়ি ও তার সাথে ম্যাচ করে অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার জন্য সবাই এখন ব্যস্ত। এবারে ঈদে বিভিন্ন মেগাসিরিয়ালে নায়িকাদের পরিহিত পোশাকের নামের পোশাকগুলোর চাহিদা তরুণীদের মাঝে। এবারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাস্তানী, ক্যাটটপ, সাররা, সানমার ইত্যাদি অন্যান্য নায়িকাদের পরিহিত জামাই বেশি ক্রয় করছে বলে বিভিন্ন দোকানি জানান। সবাই এই ঈদে দেশি-বিদেশি কাপড় কেনায় বেশি ব্যস্ত। এলাকার বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে দেখা গেছে দেশি-বিদেশি থ্রি পিচ কেনার জন্য মেয়েদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদ মানে আনন্দ তাই অভিভাবকদের একটু কষ্ট হলেও সন্তানসহ অন্যান্য প্রিয়জনের মুখে হাসি ফুটাতেই শত সমস্যা উপেক্ষা করে কিনে দিচ্ছেন। অপরদিকে, সুযোগ হাতে পেয়ে দর্জিপাড়ার লোকেরা সময় নেই এবং কাজের অনেক ভিড় বলে দ্বিগুণ পারিশ্রমিকে অর্ডার নিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্যান্ট ও শ্যার্ট পিস থেকে শুরু করে থ্রি-পিচ, শাড়ি এবং তৈরি পোশাকের প্রতিটির মূল্য গত বারের চেয়ে এবার হাতের নাগালে আছে বলে অভিভাবকরা জানান। প্রতিটি ম্যার্কেট ও কসমেটিক্স বিপণি বিতানগুলোতে প্রচÐ ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও বেশি দামের জন্য পছন্দের জিনিস অনেকেই নিতে পারছে না। বিপণি বিতান ও মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায় এবারও মার্কেটগুলোতে বিদেশি কাপড়ে সয়লাব।
ভারত, পাকিস্তানি, চীন, জাপান, কোরিয়ার প্যান্ট ও শার্ট পিস এবং ভারতীয় থ্রি-পিচে বাজার ভরে গেছে। দোকানিরা বলছে এগুলো বৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে। ভারতীয় থ্রি-পিচগুলোর বেশিরভাগেরই নাম ভারতীয় ছবির নায়ক ও নায়িকাদের নামানুসারে করা হয়েছে। এবারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাস্তানী, ক্যাটটপ, সাররা, সানমার ইত্যাদি। এদের মধ্যে মাস্তানী পোশাকের দাম ৪ থেকে ১০ হাজার, ক্যাটটপ, সাররা ও সানমাপর ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। কুপনের মাধ্যমে সেরা বিজয়ীদের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্যসহ বিভিন্ন অফার।
আকর্ষণীয় অফারে অনেকেই ছুটছেন সেই সব বিপণি বিতানগুলোতে। বিভিন্ন মার্কেটে ঈদ বাজার করতে আসা মামুন, রিতু, সুমি, রানা, হোসেন, শিউলী, নাজনীনসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, এবার থ্রি-পিচসহ ছেলেদের প্যান্ট ও শার্টের দাম খুবই চড়া। তাই কাপড় কিনে বানাতে দিয়েছেন। তবে মজুরি একটু বেশি।
সানরাইজ টেইলার্সের মালিক স্বপন জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরে ধানের দাম না থাকায় কৃষিপ্রধান এই এলাকায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রয় করতে না পারায় অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে কেনা-কাটা করতে পারছে না বলে চাপ অনেকটাই কম। তবুও শেষ সময়ে এসে চাপটা অনেক বেশি হবে বলে তিনি জানান। লোকজনেরা শেষ সময়ে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাই কারখানায় কর্মরত কারিগরদের রাতভর কাজ করতে হয় বলে তাদের মজুরিও একটু বেশি দিতে হয়। শিলামনি গার্মেন্টস এ স্বত্বাধিকারী উত্তম ঘোষ ও শীতবসন্ত এরফান আলী জানান, আমাদের এই অঞ্চল ধান অধ্যুষিত অঞ্চল। এই এলাকায় দেশের মধ্যে ধানের চাতাল শিল্প বেশি। গত বছর বন্যায় বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার একর জমির ধান নষ্ট হওয়ার ফলে এই এলাকার কৃষকের এবং কৃষি শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের মুখে তেমন হাসি নাই। ইরি ধান ভালো হওয়ায় ধানের দাম না থাকার কারণে অনেকেই ইচ্ছেমত কেনাকাটা করতে পারছেন না। শুরুর দিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় লোকজন তেমন কেনা-কাটায় ব্যস্ত না হলেও শেষ সময়ে কেনা-কাটা জমে উঠেছে। কাপড় ব্যবসায়ী কাশেম স্টোরের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ঈদের বাজার জমে উঠেনি। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের দোকানে একটু ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও ছিট কাপড় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা খুবই খারাপ। মানুষের কাছে টাকা-পয়সা নেই। পয়সা আছে এক শ্রেণির মানুষের কাছে তারা বাজার করে রাজধানী শহরে বা বিদেশে। এই অঞ্চলের মানুষেরা ধানের সাথে জড়িত। জেলার প্রায় ৬০ ভাগ চাতাল ব্যাংকের ঋণের বোঝা নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এর সাথে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিকের ঈদ হবে না। তারা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। জোসনার ফুল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার জানান, এই এলাকার কৃষকের অবস্থা খারাপ। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর এখনো ঈদের কেনাকাটা তেমন জমে ওঠেনি। এই সপ্তাহে কি হবে সেটা দেখার বিষয়। তবে শেষ সময়ে ঈদের কেনাকাটা ভালো হতে পারে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।