Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও সঠিক কর্ম-পরিকল্পনার অভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের জন্য জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশল, কর্ম-পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন চালু জরুরী বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে ‘আই এ্যাম এ্যন্ড আই উইল অর্থাৎ আমি আছি, আমি থাকবো, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে সারাবিশ্বের ন্যায় আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০২০।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার’র (আইএআরসি) অনুমিত হিসাব বলছে প্রতিবছর বাংলাদেশে দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরমধ্যে ১ লাখ ৮ হাজারই মারা যান।
এ বিষয়ে ক্যন্সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৫ সালে দেশে প্রথম হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন চালু হয়। যা থেকে ক্যান্সারের ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ গেলেও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছেনা। এজন্য দেশের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার নির্ণয় জরুরী। কারা কোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান জনসংখ্যা ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন দরকার। কারণ এখন পর্যন্ত সরকারের সেক্টর কর্মসূচীতে এই জনসংখ্যাভিত্তিক নিবন্ধন অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। চলমান ৫ বছর মেয়াদি মাল্টি সেক্টোরাল এনসিডি কন্ট্রোল প্লানে ২০২২ সালের মধ্যে ১৯টি পুরনো সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন চালু করার উদ্যোগ নেয়ার পরেও তা থেমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ২০০৯ সালে ৫ বছর মেয়াদি জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়। ২০১৪ সালে যার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এর অর্ন্তভূক্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের খুবই সামান্য বাস্তবায়িত হয়েছে। এমনকি প্রয়োজনীয় আপডেট করা হয় নাই। জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও সঠিক কর্ম-পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিট হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারা দেশের রোগীদের প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। যারা অপারেশনের জন্য গড়ে একমাস, কেমোথেরাপির জন্য ২ থেকে ৩ সপ্তাহ, বিকিরণ চিকিৎসার জন্য ৪ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। ১৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজে রেডিওথেরাপি বিভাগ চালু থাকলেও মাত্র ৯টিতে বিকিরন চিকিৎসার যন্ত্র থাকলেও কারিগরি ত্রুটির ফলে সব মেশিন সক্রিয় থাকেনা।
এছাড়া সহায়ক চিকিৎসক যেমন, শল্যবিদ, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা সত্তেও আন্তবিভাগ সমন্বয় ও রোগীদের আস্থার অভাবে ক্যান্সার রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না এই পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে। অনেকক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকা ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতি সেবা দান বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যদিও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে স¤প্রতি রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার ইউনিট চালু হলেও সেখানে চিকিৎসার ব্যয় অত্যাধিক মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
চিকিৎসকরা বেেলছন, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উপদান হলো প্রাথমিক প্রতিরোধ, সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবা বা পেলিয়েটিভ চিকিৎসা। কিন্তু দেশে ক্যান্সারের জন্য বরাদ্দের সিংহভাগ ব্যয় হচ্ছে অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের পিছনে। ক্যান্সার নির্ণয় ও স্ক্রিনিং খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফলে প্রাথমিক প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান ক্যান্সার পরিস্থিতি উত্তরণে করনীয় সম্পর্কে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিট হাসপাতালের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, প্রাথমিক প্রতিরোধের উপর জোর দিতে সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তথা যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সমাজের সকল শ্রেনী-পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে যার যার জায়গা থেকে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর জন্যই সুপরিকল্পিত কর্মসূচী গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন।
পাশাপাশি এ সমস্যা উত্তরণে সরকার, নীতিনির্ধারক মহল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রন কাউন্সিল পুনর্গঠন ও কার্যকর করা জরুরি। জাতীয় ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র প্রণয়ন বা হালনাগাদ ও এর আলোকে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া ক্যান্সারের সঠিক পরিসংখ্যাণ পেতে জাতীয় ক্যান্সার নিবন্ধন কর্মসূচী গ্রহণ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটে চলমান হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধনকে ডাটাবেজ ও নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে শক্তিশালী করা দরকার। এদিকে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল আজ দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকালে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করে আলোচনা সভা ও ক্যান্সার রোগী ও সারভাইভারদের অংশগ্রহণে ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. কাজী মুশতাক হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ