Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘পরিবেশ দূষণে বিপন্ন জলাভূমি’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পরিবেশদূষণ, সম্পদের অতিরিক্ত আহরণ, জনসংখ্যার চাপসহ নানা কারণে এ দেশের জলাভূমি বিপদের সম্মুখীন। হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ নানা উদ্ভিদ ও প্রাণী। বহু জীব বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এ অবস্থায় পালিত হলো বিশ্ব জলাভূমি দিবস। ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসটি পালিত হয়। এ দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য’।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জলাভূমি। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রায় সব কটিই জলাভূমি। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে সুন্দরবন, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, মারজাত বাঁওড় এবং পরে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু এবং গুলশান লেককে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এসব অঞ্চলে ক্ষতিকর কারখানা স্থাপন, মাটি, পানি ও বায়ু দূষণকারী কার্যক্রম, মাছসহ জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ এবং যেকোনো ধরনের পরিবেশদূষণ নিষিদ্ধ। তবে বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। কলকারখানার বর্জ্য, গৃহস্থালি আবর্জনা, পলিথিন ইত্যাদি পরিবেশ দূষণকারী বস্তু প্রতিনিয়ত দেশের জলাশয়কে দূষণ করছে। বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এসব নদী মৃত প্রায়। বালুনদী বিলীন হতে চলেছে। এ অবস্থায় নদী রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতও নির্দেশনা প্রদান করেছে। তবে এ নির্দেশনা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে পরিবেশবাদীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সুবাহান বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে এখন সব নদী ধুকছে। দূষণে দখলে অনেক নদী মৃত্যুর মুখে। এ অবস্থায় বিপন্ন জলজ প্রাণী, বিপর্যস্ত পরিবেশ। নদী ও জলাভ‚মি রক্ষায় আইন থাকলেও তা সঠিক কার্যকর হচ্ছে না।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল এক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, মুজিব বর্ষে যত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি সারাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ। এ লক্ষ্যে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ ও জলাধারসহ সবকিছু যেন সংরক্ষণ হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর রেখে কাজ করার আহ্বচান জানিয়েছেন তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রমতে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের ২০১২ থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। অন্যান্য জলাভ‚মি সংরক্ষণের জন্যও পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীববৈচিত্র্য, কৃষি, মৎস্য, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো জলাভ‚মি। এ দেশের প্রাকৃতিক স্বাদু পানির মাছের প্রধান উৎস হলো হাওরের বেসিন অঞ্চল। জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে এ দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উদাহরণ হলো হাওর অঞ্চল ও সুন্দরবন। এ ছাড়া আড়িয়াল বিল ও চলনবিল এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভ‚মি।

পৃথিবী বিখ্যাত সুন্দরবন সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। শুধু সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষত টর্নেডো, সাইক্লোনের হাত থেকে এ দেশ বাঁচানো এক অতন্দ্রপ্রহরী হলো সুন্দরবন। স¤প্রতি সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে। সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারের কথা বলা হলেও এটি যাতে কোনোভাবেই সুন্দরবনের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে রামসার সাইট (রামসার কনভেনশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত জলাভ‚মি) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের আরেক নিদর্শন হলো টাঙ্গুয়ার হাওর। সুনামগঞ্জের অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওরে ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১৫০ প্রজাতির মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। প্রতিবছর শীতকালে প্রায় ২০০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে এখানে। ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণায় ৩৭৩টি হাওর রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ