পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ছাত্রীর সাথে সবসময় আপত্তিকর বিষয়ে কথা বলতে চাইতেন : অভিযোগ করা
হলে রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়েছেন’
স্টাফ রিপোর্টার : প্রথম থেকেই আমার শিক্ষক আমাকে পোস্টমর্ডানিজম এবং লিবারেলিজমের ওয়ের্স্টান থিওরি বোঝাতে চাইতেন। তার ভাষ্যমতে, আমি নিজেকে যতটা ইজি করতে পারি ততই আমার এমফিল থিসিসের স্ট্যান্ডার্ড বৃদ্ধি পাবে। এমফিলে এডমিশন নেয়ার প্রথম থেকেই তিনি আমার ‘পার্সোনাল এবং সেক্সুয়াল লাইফ’ নিয়ে তার সাথে খোলামেলা হতে বলতেন। তিনি বলতেন, মানবিক সকল সমস্যা মূলত শরীরকেন্দ্রিক অর্থাৎ যৌনজীবনকেন্দ্রিক। হিউমেন বডির স্যাটিসফেকশন/ডিসস্যাটিসফেকশন হতেই সকল সমস্যা।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে গিয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই তুলে ধরেন এক ভুক্তভোগী ছাত্রী। ক্লাস ও রিসার্চের আলোচনার নামে ওই ছাত্রীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে অশালীন আলোচনা ও যৌন হয়রানি করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার। অভিযোগ করতে গেলে রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে ভয়-ভীতি ও হুমকিও দিয়েছেন। উপায় না পেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা ছাত্রীটি নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারী বলেন, একজন ছাত্রী এ ধরনের বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিল এবং পরে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি অবহিত করে একটি পত্র দিয়েছিল। তবে তার মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি পরবর্তী চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দেবেন।
ছাত্রীটি ওই অভিযোগপত্রে আরো বলেন, গত দেড় বছরে (প্রায়) যখনই একাডেমিক কাজে বা সেমিনার উপলক্ষে তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে, তিনি আমার ‘সেক্সুয়াল লাইফ’ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রায়ই আমি বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছি। তিন-চার দিন তিনি আমার হাতের রেখা দেখার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো একসময় তিনি জ্যোতিষশাস্ত্র শিখেছিলেন। কিন্তু হাতের রেখা দেখার পর আমি আমার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে একদিন তিনি উত্তর দিলেন। প্রথমবার যেদিন হাত দেখলেন সেদিন কিছু বলেননি। আমি জানতে চাওয়ার পরও এড়িয়ে যান। পরে আরেকদিন জানতে চাইলে তিনি আমাকে উত্তর দিলেন, সব ভালো, উন্নতি করবে তুমি। কিন্তু এখানে একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে। তোমার পার্টনার তোমাকে ফিজিক্যালি/সেক্সচুয়াল স্যাটিসফেকশন দিতে পারছে না।’
ছাত্রীটি অভিযোগপত্রে বলেন, গত ১ জুন শিক্ষক শান্তনু মজুমদার ওয়ের্স্টানাইজেশন প্রসেসের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ওইদিন কলাভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে তিনি আমাকে থিসিসের কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন করলেন। আমি বললাম, স্যার, আমরা থিওরিটিক্যাল এক্সাম এখনো শেষ করিনি এবং জব রিলেটেড পড়াশোনা একটু করতে হয়...। থিসিসের কাজে পুরোপুরি হাত দেব থিওরিটিক্যাল ফাইনাল এক্সামের শেষে। এরপর ড. শান্তনু মজুমদার বলা শুরু করলেন, আমার স্ট্যান্ডার্ড ও সবার স্ট্যান্ডার্ড তো এক নয়। এরপর তিনি আয়েশিভাবে বন্ধুসুলভভাবে বলা শুরু করলেন, এখানে একজন আমেরিকান প্রফেসর হলে কী বলত জান? ‘কিক এস’ এবং ‘ফাক ইউ’। শেষের শব্দটি বলার পর মুহূর্তেই তিনি আমাকে বোঝাতে চাইলেন, ফাক ইউ কিন্তু এখানে জেনারেল মিনিংয়ে নয়। আজকাল কারো প্রতি হতাশা প্রকাশ করলে ‘ফাক ইউ’ বোঝানো হয়। একপর্যায় তিনি বললেন, চলো রুমের দিকে যাব। তোমার সময় আছে? যাবা? রুমে যাওয়ার পর তিনি বলা শুরু করলেন, তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। আমি বললাম, আপনি যে শাস্তি দেবেন আমি মেনে নেব। তিনি বললেন, শক থেরাপি দেব যেটা তোমার ব্রেনে আগুন ধরিয়ে দেবে। এরপর তিনি গ্রাফ তৈরি করে শাস্তির পরিমাপ গঠন করেন। শাস্তির ধরন কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তুমি ঠিক করো কী শাস্তি নিতে চাও। সর্বোচ্চ শাস্তিটাই নিতে চাই বলার পর ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি মনে করো ফাক ইউ, অর্থাৎ সেক্সুয়াল শাস্তি। তিনি বলেন, শাস্তির গ্রাফ থেকে যা চাইবে তুমি তাই পাবে। আজকেই পাবে সেটা। তুমি কী চাও আমার কাছে বলো। আবারও অস্বীকৃতি জানালে তিনি বলেন, তোমার মাথাটাকে সেন্টার পয়েন্ট ধরে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ থাকো। মাথা থেকে হাত দিয়ে মেপে নিচের দিকে আসতে বললেন। তিনি একের পর এক অশ্লীল উচ্চারণ করতে থাকলেন। তার সামনে হার্টের মাঝখান থেকে... কাঁধের দূরত্ব মাপতে বললেন। অভিযোগপত্রের শেষে ছাত্রীটি প্রশ্ন করেনÑআধুনিকতা ও উদারতার নামে এ ধরনের অশ্লীল আচরণ ও মানসিক নির্যাতন কতদিন চলবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাছে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়তই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর কোনোটি প্রকাশ পাচ্ছে, কোনোটি সম্মানের ভয়ে কিংবা হুমকিতে ভীত হয়ে ছাত্রীরা চেপে রাখছেন। গত পাঁচ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই এ ধরনের ২০টিরও অধিক অভিযোগ উঠেছে, যার কোনো কোনোটির বিচার হয়েছে। আর কোনো কোনোটি আড়াল করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সরকারদলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তার কোনো বিচার হয় না। আবার বিরোধী দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের আগেই চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটেছে।
তবে সম্প্রতি যৌন নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রী শিক্ষকের হুমকি উপেক্ষা করে বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেনÑরাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার। জানা গেছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ড. শান্তনু মজুমদারের তত্ত্বাবধানে ২০১৪-১৫ সেশনে এমফিল কোর্সে ভর্তি হন এক ছাত্রী। তার স্বপ্ন ছিল ডিগ্রি অর্জন করে দেশ ও সমাজের সেবা করবেন। কিন্তু ক্রমেই সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে। শিক্ষকের নোংরা ও বিকৃত মানসিকতার শিকার হয় ছাত্রীটি। বিবাহিত এই ছাত্রী শিক্ষকের ক্রমাগত লালসার শিকার হলেও নিজের সম্মানের কথা বিবেচনা করে সব মুখ বুঝে সহ্য করতেন। সর্বশেষ গত ১ জুন নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছায়। আর সহ্য করতে না পেরে তিনি মৌখিকভাবে এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুরুল আমিন বেপারীর কাছে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে ওই ছাত্রী ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বরাবরও একটি অভিযোগপত্র লেখেন। কিন্তু অভিযোগপত্রের বিষয়ে জানতে পেরে ড. শান্তনু মজুমদার তাৎক্ষণিকভাবে ওই ছাত্রী ও তার স্বামীর কাছে ক্ষমা চান। পরে অভিযোগপত্র যাতে ভিসিকে না দেয়া হয় সেজন্য ওই ছাত্রীকে রাজনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা ছাত্রীটি অভিযোগপত্র জমা দেয়নি। গত ২৭ জুন বিভাগের চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে হুমকির বিষয়ে অবহিত করে ছাত্রীটি।
অভিযুক্ত শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার বাবার অসুস্থতার কারণে মানসিকভাবে নিজেকে অপ্রস্তুত দাবি করে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।