Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান জুড়েই অস্থিতিশীল বাজার

প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শেষ মুহূর্তেও অস্থির চিনি বাজার
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন উদ্যোগই কাজে আসেনি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ, ব্যবসায়ীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক, দ্বিগুণ-তিনগুণ মজুদের ঘোষণা, সারা দেশে ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রিসহ কোন উদ্যোগই কাজে আসেনি। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে পুরো রমজান ধরেই অস্থির ছিল রোজার বাজার। শেষ মুহুর্তে এসে আরো বেশি অস্থির হয়েছে চিনির বাজার। রোজার শুরুর আগ থেকেই বাড়তে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। রোজার শুরুতে আরেক দফা বৃদ্ধি পায় সব ধরনের পণ্যের দাম। তবে মাসের শুরু থেকেই অস্থির হয়ে উঠে চিনির বাজার। কোন কিছুতেই কাজে আসছে না। খোলা বাজারে বিক্রি করেও নিয়ন্ত্রণ আনা যায় নি।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রোজার শুরু ১৫ দিন আগে চিনি দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৭২ টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিনির সরবরাহ কম থাকায় দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অবশ্য দেশের সবচেয়ে বেশি চিনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ বলছে, তারা প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৯০০ টন চিনি সরবরাহ করছে। এ ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি দর নেওয়া হয়েছে ৪৮ টাকা ৭৬ পয়সা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৪-১৫ লাখ টন। অন্যান্য মাসে এক লাখ টনের মতো চাহিদা থাকলেও রমজান মাসে তা বেড়ে হয় আড়াই লাখ টনেরও বেশি। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে প্রায় ১৭ লাখ টন চিনি ঢুকেছে। ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘাটতি বাদ দিলে প্রায় ১৬ লাখ টন চিনি উৎপাদিত হওয়ার কথা। অন্যদিকে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের কাছে রমজান মাসের আগে প্রায় এক লাখ টন চিনি ছিল।
এদিকে ঈদে বাড়তি চাহিদার কারণেই কয়েকটি মসলার দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, ঈদকে ঘিরে মানুষ এখন পোশাকসহ অন্যান্য জিনিস কেনাকাটায় ব্যস্ত। ফলে চাহিদা কম থাকায় সবজির দাম কিছুটা কমতির দিকে। তবে চাহিদা বাড়ায় মসলার দাম কিছুটা বেড়েছে।
খুচরাতে মসলার দাম কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। গত সপ্তাহে যে জিরা প্রতি ২৫০ গ্রাম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায় এখন তা ১৩০ টাকা থেকে ১২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচ, কিসমিস, দারুচিনির দামও কিছুটা বেড়েছে। বাজারে প্রতি ১০০ গ্রাম এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এটি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। এছাড়া বিক্রেতরা প্রতি ১০০ গ্রাম দারুচিনি ৫০ টাকা, কাজু বাদাম ২২০ টাকা, কাঠ বাদাম ১০০ টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
এদিকে রোজা শুরুর পর থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে কয়েক দফা বাড়ে সবজির দাম। যে ধারা গত সপ্তাহ পর্যন্তও অব্যাহত ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাতে সে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বাজারে পটল, বেগুন, ঢেড়স, টমেটো, গাজর, শিমসহ বেশকিছু সবজির দাম কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা কমেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কাচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গতসপ্তাহে কেজি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া ঢেড়স বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এছাড়া কাকরোলের দামও কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। দাম কমার তালিকায় আরও রয়েছে শিম, বরবটি, পটল ও করলা। প্রতিকেজি শিম ১৮০ টাকা থেকে কমে ১২০ টাকা, পটল ৩৫ টাকা, বেগুন ৪৫-৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা, শশা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০ টাকা দরে।
বাজারে কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৩০-৪০ টাকা, চালকুমড়া ৩০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া প্রতি ফালি ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহস অন্যান্য নিত্যপণ্য। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, আমদানি করা মোটা পেঁয়াজ ২৫ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা, আমদানি করা মোটা রসুন ১৬০ টাকা, আলু ২৫ টাকা ও আদা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদি পণ্যের মধ্যে দেশি মসুর ডাল প্রতিকেজি ১৪০-১৫০ টাকা, আমদানি করা মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, খোসাযুক্ত ছোলা ৯০-১০০ টাকা, খোসা ছাড়া ছোলা ১০০-১১০ টাকা, ডাবরি বুটের ডাল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৫ টাকা কমে ৮৫ টাকা, সুপার ৭৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি ৫ লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে ৪৪৫ টাকা থেকে ৪৫৫ টাকার মধ্যে। এছাড়া মান ভেদে প্রতি কেজি খোলা সরিষার তেল ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। চলতি সপ্তাহে রুই, কাতলা, শিং, তেলাপিয়াসহ বেশিরভাগ মাছই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৮০-৪৫০ টাকায়। তবে ছোট রুই পাওয়া যাচ্ছে ২০০- ৩০০ টাকার মধ্যে। বড় আকারের কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। এছাড়া তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, আকারভেদে প্রতিকেজি গলদা চিংড়ি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, বড় শিং মাছ ৫৬০ থেকে ৬৮০ টাকা, দেশি মাগুর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, বেলে মাছ ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা ১০০০ টাকা, বাটা মাছ ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এডিদকে ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৪০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৪২০ টাকায় ও খাসির মাংস ৫৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে লেয়ার মুরগির দাম। ব্রয়লার প্রতিকেজি ১৮০ টাকা, লেয়ার প্রতিকেজি ২২৫ টাকা। দেশি মুরগির পিস ৩৫০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগির পিস ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি করছেন ৩২ থেকে ৩৮ টাকা দরে। এছাড়া মিনিকেট ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৪২-৪৪ টাকা, পারিজা ৪২ টাকা, নাজিরশাইল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং লতা ৩৮ থেকে ৪৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান জুড়েই অস্থিতিশীল বাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ