পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ আসছে কিন্তু আনন্দ নেই ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আক্রান্ত এলাকার দুর্গত মানুষের মাঝে। রোয়ানুর প্রচ- আঘাতে ল- ভ- জনপদ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যাওয়ায় নিয়মিত জোয়ারের পানিতে ভাসছে এসব এলাকা। এর ফলে জোয়ার ভাটার সাথে লড়াই করতে গিয়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না দুর্গতরা। হতভাগ্য এসব উপকূলবাসী পায়নি পর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য। বিধ্বস্ত ঘর পুনর্নির্মাণ করতে পারেনি তারা। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় টিকছে না ক্ষেতের ফসল। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা এসব মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ নেই। সরকারি হিসেবে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ মানুষ রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের পুনর্বাসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে করে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর জলোচ্ছ্বাসে ডুবে গিয়েছিল বাঁশখালীর খানখানাবাদসহ তিনটি ইউনিয়ন। পুকুরের চাষের মাছ ভেসে গেছে। লবণ পানিতে ভরে গেছে পুকুর। আবাদি জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। নিষ্ফলা জমিতে থই থই করছে জোয়ারের পানি এখনো। উপড়ে পড়া গাছ এখনো সাক্ষী হয়ে আছে এখানে সেখানে। শূন্য ভিটি খাঁ খাঁ করছে। বিলীন হওয়া অংশে বসতির সাক্ষ্য দিচ্ছে নারকেল গাছ, খেজুর গাছ, ইট-পাথর। কেউ খুঁটি পুঁতলেও টিন লাগাতে পারেনি এখনো। তারপরও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সাগরপারের সাহসী মানুষ। কিন্তু আসছে ঈদের আনন্দ, আসছে না রোয়ানুর তা-বলীলার সাক্ষীদের ঘরে।
ঈদের জামা কেনা দূরে থাক, দু’বেলা ভাতই জোটাতে পারছে না অনেকে। জাল আর নৌকা হারিয়ে নিঃস্ব কেউ। কারও দুধেল গাভি মারা গেছে। স্বজন হারিয়ে অনেকটা নির্বাক তারা। ঘূর্ণিঝড়ে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের মাথাপিছু ২০ হাজার টাকা দিয়েছে সরকার। ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের সাহায্যে সবকিছু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুর্গতরা বলছেন, তাদের সাহায্যে সরকার কিছুই করেনি। গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ও এর ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের ধকল এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের উপকূলবাসী। অনেক এলাকা ভাসছে সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে। বেড়িবাঁধ আগে থেকে না থাকা, ভাঙাচোরা অবস্থা কিংবা জলোচ্ছ্বাসে আরও বিধ্বস্ত হওয়ার কারণেই বিস্তীর্ণ এলাকা, জনপদ, ফসলের মাঠ, চিংড়ি ঘের ডুবভাসি করছে।
সরকারি হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার উপকূলীয় এলাকার ১০৪টি ইউনিয়নের ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬ জন লোক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৮১ হাজার ৪১১ জন মানুষ। আর আংশিক ক্ষতির শিকার হয় ৪ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ জন মানুষ। চট্টগ্রামে রোয়ানুর আঘাতে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৪৩৭টি পরিবার সম্পূর্ণরূপে এবং ৮৩ হাজার ৬৬০টি পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের হিসাব দিয়ে জানানো হয়, ১৫৪ একর ফসল সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার ৫৪১ একর ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলায় ২০ হাজার ৮৯২টি বসত ঘর সম্পূর্ণভাবে ও ২৫ হাজার ৭৬৬টি ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং ৪৭ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ এবং ১৪৪ একর সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ে ২৭ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ও ৬৬ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদি পশুর মধ্যে ৮০টি গরু ও ৪০ হাজার ৫৫০টি হাঁস-মুরগি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভেসে মারা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।