Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ার মোকামে ফের বেড়েছে চালের দাম

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

মাঠ পর্যায়ে চাষীর ধানের দাম না বাড়লেও কুষ্টিয়ার মোকামে ফের বেড়েছে চালের দাম । মাসখানেক কুষ্টিয়ায় খাজানগর মোকামে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকার পর ফের বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। চিকন চাল কেজিতে এক টাকা ও মোটা সব ধরনের চালে কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। আমন মৌসুম চলাকালে এ নিয়ে দুই দফা দাম বাড়ালেন মিল মালিকরা। মিলগেটে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের চালের খরচ কিছুটা বাড়ল। দাম বাড়লেও বাজার মনিটরিং করতে দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
খাজানগর মোকামের একাধিক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার কারণে মাসখানেক আগে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের বাজার কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছিল। ধানের বাজার বাড়ায় নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। মিনিকেট চাল কেজিতে এক টাকা ও মোটা সব ধরনের চাল কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত মিলগেটে দাম বেড়েছে। ধানের বাজার বাড়লে চালের বাজার সমন্বয় করতেই এ দাম বাড়ানো হয় বলে জানান তারা। লিয়াকত রাইস মিলের মালিক হাজি লিয়াকত হোসেন বলেন, ধানের বাজার প্রতিমণে ৫০ টাকা বেড়েছে। সে কারণে চালের দাম মিলগেটে বেড়েছে। সব জাতের মিনিকেট চাল ২৫ কেজির প্রতি বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচেছ এক হাজার ১২০ টাকা থেকে এক হাজার ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে ৫০ কেজির বস্তার দাম হচ্ছে দুই হাজার ২৬০ টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৪৫ টাকা ২০ পয়সা, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা। কোথাও আরও বেশি। এ ছাড়া কাজললতা ৩৬ টাকা, আটাশ ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা ও মোটা জাতের স্বর্ণা ২৭ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মিলগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ধানের দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় মিলমালিকরা এখন ধান কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, বেশি ধান কিনে স্টক করে চাল তৈরির পর বাজারে ছাড়লে দাম পাওয়া যাবে। তবে সরকার যে কোনো সময় বাইরে থেকে কম দামে আমদানির সুযোগ দিলে তখন দেশি চাল বিক্রি কমে যেতে পারে। তখন লোকসানে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ কারণে অটো চালকল মালিকরা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রতিদিন ধান সংগ্রহ করছেন। যে দামে ধান কিনছেন সেই অনুপাতে উৎপাদন করে বাজারে চাল ছাড়ছেন। এছাড়া গত বছর মিলগুলোতে অভিযানের পর থেকে মিলমালিকরা দৃশ্যমান গোডাউনগুলোতে ধান রাখছেন না। অনেক মিলমালিক অন্য জেলায় তাদের যেসব গোডাউন রয়েছে সেখানে ধান মজুদ করছেন।
মিয়া ভাই রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, বাসমতি, মিনিকেট, কাজললতা ও স্বর্ণা ধানের দাম প্রতিমণে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। সে কারণে চালের বাজার সমন্বয় করা হয়েছে। কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে চালের বাজার।
খাজানগর মোকামে মিনিকেট চাল মিলগেটে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যা কয়েকদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে সাড়ে ৪৩ টাকায়। একই ভাবে কাজললতা ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা, আটাশ ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা এবং স্বর্ণা ২৪ থেকে বেড়ে বর্তমানে ২৭ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে আমন মৌসুম চলাকালেও এক দফা চালের বাজার বেড়ে যায়। সে সময় এখনকার বাজার থেকে চালের বাজার আরও কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কম ছিল।
এদিকে খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়লেও মনিটরিং টিমকে এখন পর্যন্ত কোনো মিলে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। মনিটরিং জোরদার করা হলে বাজার স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি দামও কমে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। মিলগেটে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। পৌরবাজারসহ সব বাজারে চালের দাম কেজিতে তারা দুই থেকে তিন টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। খাজানগরে দাম বাড়ায় দেশের সব চালের বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তবে অনেক মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীর গোডাউনে বিপুল পরিমান চাল ও ধান মজুদ আছে। দাম বাড়ার সুযোগে তারাও কম দামে কেনা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাড়তি ফায়দা লুটে নেবেন।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, বছরের একটা সময় আসে যখন মিল মালিকরা হুট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন। তারা দু-এক সপ্তাহে ফায়দা লুটে নেন লাখ লাখ টাকা। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। এবারও এমন ঘটনা ঘটেছে। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে চাল তৈরি করে রাখেন অনেক মিল মালিক। সুযোগ বুঝে বেশি দামে ছেড়ে দেন। এ বিষয়টি কড়াভাবে মনিটরিং করতে হবে। তাহলে হুট করে বাজার বাড়বে না।
জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, অযৌক্তিক কারণে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসন থেকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হয়ে থাকে। ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে যদি কোনো মিল মালিক অতিরিক্ত লাভ করে থাকেন, তাহলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়ালেও মনিটরিং টিমকে এখন পর্যন্ত কোনো মিলে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। মনিটরিং জোরদার হলে বাজার স্থিতিশীল থাকার পাশপাশি দামও কমে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ