Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চোরাচালান কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না খুলনা নগরীর বিপণি বিতানগুলো চোরাচালানি পণ্যে সয়লাব

প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি ঃ রোজার শুরু থেকেই চোরাচালান পুরোদমে শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহকাল ধরে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল ও সীমান্ত অঞ্চলে র‌্যাব কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা পুলিশ ও বিডিআর চোরাচালানি পণ্য উদ্ধার করলেও শাড়ি কাপড়, মসলা ও মাদক চোরাচালান কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। কোনো না কোনো পথে প্রতিনিয়ত চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে, প্রায়ই ধরা পড়ছে। তবুও অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট চক্রটি। চোরাকারবারীরা প্রতি মুহূর্তে রুট বদলাচ্ছে। কিন্তু গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে পারে না। তিন কোটি কখনও সাত কোটি টাকার মাল ধরা পড়ার পরেও চোরাকারবারীরা বেপরোয়া। সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত খুলনাঞ্চলে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিচ ও কাপড়-চোপড় এবং গরম মসলাসহ বিভিন্ন মালামাল আসছে। নগরীর বিপণি বিতানগুলোতে ভারতীয় শাড়ি কাপড়ে সয়লাব। তাদের গোডাউনে রয়েছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। অপরদিকে ঈদকে সামনে রেখেই কথিত ফিলিংসের জন্য ফেনসিডিল-গাঁজা, হেরোইন, বাংলা মদ ঢুকছে। চোরাকারবারীরা ফুলেফেঁপে কোটিপতি হচ্ছে। আর যুবসমাজ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মাদকের কারণেই বৃহত্তর খুলনার অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চারদিকে খুন, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। ঈদের পূর্ব মুহূর্তে নেশার টাকা যোগাতে মাদকসেবীরা তৎপর হয়ে উঠেছে।
সূত্র মতে, গত বুধবার সকালে আমড়াখালী নামক স্থানে বিজিবি দু’টি পৃথক অভিযান চালিয়ে ১৩ কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় মালামাল জব্দ করেছে। এই মালামাল পরিবহন কাজে নিয়োজিত ট্রাকটিও আটক করা হয়।  সম্প্রতি পশ্চিম জোনের সিজি স্টেশন রূপসার একটি টহল দল অভিযান চালিয়ে খুলনার রূপসা সেতুর টোল প্লাজা এলাকা থেকে অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ি কাপড় উদ্ধার করে। সাম্প্রতিককালে খুলনাসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় অবৈধ ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালানী বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকাসমূহে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক টহল জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া পবিত্র ঈদ উপলক্ষে চোরাচালানীর আনাগোনা ও কার্যক্রম তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম  জোনের অপারেশন কর্মকর্তা জানান, একটি চক্র অবৈধ ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালানী  করে আসছে। চোরাচালানী বন্ধে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়।
এদিকে, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে খুলনা ও সীমান্ত অঞ্চলের চোরাচালান সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত শাড়ি কাপড় ও মাদকদ্রব্য চোরাচালান করছে। জানা গেছে, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এই বাণিজ্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করে একটি চক্র একের পর এক কালোবাজারী করলেও কেন তাদের আইনে সোপর্দ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাচ্ছে না তা জনগণের বোধ্যগম্য নয়।
বর্তমান সরকার চোরাচালান রোধে অত্যান্ত আন্তরিক। অথচ ফাঁক-ফোকর দিয়ে প্রতিনিয়ত খুলনাঞ্চলে চোরাচালান চলছে। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য বেমালুম চেপে যাচ্ছে। বাকিং রুট ওপেন করে দিচ্ছে।
এদিকে, খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকায়  চোরাচালান সিন্ডিকেট এখন সক্রিয়। ২০/২৫ জনের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুলনাঞ্চলে চোরাচালানে এখন শীর্ষে রয়েছে ফেনসিডিল।  বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে রোজার শুরু থেকেই ব্যাপকভাবে ফেনসিডিল ঢুকছে বলে সূত্র গুলো জানায়। প্রতিনিয়ত ফেনসিডিল ধরা পড়ছে। এছাড়া হেরোইন গাঁজা ও ভারতীয় নিম্নমানের মদ আসছে দেদারছে। খুলনাঞ্চলের তরুণ, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে একশ্রেণীর শিক্ষিত সমাজের কাছে ফেনসিডিল সেবনের জনপ্রিয়তা রয়েছে। খুলনা মহানগরীর ৫০টি স্পটে ফেনসিডিল পাচারকারীরা তাদের এজেন্টের মাধ্যমে দেদারছে বিক্রি করছে। সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে আসা মাদকদ্রব্যের মধ্যে সামান্য ধরা পড়েছে র‌্যাব ও পুলিশের  হাতে। দু’একজন এজেন্ট ধরা পড়লেও মুল গডফাদাররা কেউই ধরা পড়ছে না। চোরাচালান সিন্ডিকেট চক্র পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে। প্রতি মাসে আয় করছে কোটি কোটি টাকা।
খুলনা নাগরিক সমাজের নেতা মো: আব্দুল হালিম বলেন, চোরাচালান দেশের মেরুদ- ভেঙে দেয়। ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ে। আর একটি চক্র রাতারাতি কোটিপতি হয়। এদেরকে রুখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সজাগ হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চোরাচালান কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না খুলনা নগরীর বিপণি বিতানগুলো চোরাচালানি পণ্যে সয়লাব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ