ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
উবায়দুর রহমান খান নদভী
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসা পবিত্র মাহে রমজান বরকত ও প্রশান্তির ছায়ায় ঢেকে রেখেছিল বিশ্বচরাচর। মহানবী (সা.)-এর ভাষায় ‘তোমাদের উপর ছায়াপাত করছে এক মহান মাস।’ এ ছায়া এতই শীতল, এতই প্রাণবন্ত যে, ঈমানদারের হৃদয়মন তা অনুভব করে, তৃপ্তিতে ভরপুর হয় এবং নতুন করে জীবন লাভ করে প্রতি বছর রমজান শরীফে। এ মাসে কোরআন নাজিল হয়। কোরআন এ মাসে পঠিতও হয় সবচেয়ে বেশি। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রমজানে জিবরাইল (আ.) এসে আমার সাথে কোরআন চর্চা করতেন। জীবনের শেষ বছর রমজানে দু’বার আমরা কোরআন আবৃতি করি।’ বিশ্বব্যাপী প্রায় দু’শ কোটি মুসলমান রমজানে কোরআন চর্চা করেছেন। শুধু বাংলাদেশেই কোটি কোটি খতম হয়েছে। শুধু মসজিদেই তারাবীর নামাজে কোরআন খতমের সংখ্যা ১০/১৫ লাখের কম নয়। হেজফখানা, খানকাহ, মাদরাসা, বাড়িঘর ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে খতমের সংখ্যা এর বাইরে।
রমজান শরীফে যে কোন নফল ইবাদতের সওয়াব হয় ফরজের সমান আর ফরজের সওয়াব অন্তত ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। জামাতে নামাজের সওয়াব অন্য নামাজের তুলনায় ২৭ গুণ বেশি। এ হিসাবে জুমার নামায রমজানের ৭০ আর বড় জামাতের ২৭ গুণ মিলিয়ে কত যে পুণ্যময় হবে তা বলে বোঝানো যাবে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, জুমা মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের মত। একটি রমজানে সাধারণত ৪ থেকে ৫টি জুমা পাওয়া যায়। শেষ জুমাটিকে মনে করা হয় রমজানের বিদায়ী ঘোষণা। বলা হয় জুমাতুল বিদা। এ জুমায় থাকে ঈমান আমলের মওসুম ও রহমত মাগফিরাতের সুসময় চলে যাওয়ার বেদনা। থাকে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের প্রার্থনা, আবেগ ও উদ্দীপ্ত অনুভূতি। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ভরদুপুরে দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদে মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে জীবনের সার্থকতা কামনা করেন। পৃথিবীর প্রায় দু’শ’ কোটি মুসলমান এ দিনটিকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উদযাপন করে। রোজা অবস্থায় জুমার নামাজে সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর গুণগান, নবী করীম (সা.)-এর প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সালাম পেশ করে। দীনি আলোচনা শুনে, দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজসহ বহু নফল নামাজ পড়ে, দান-খয়রাত ও দোয়া-মুনাজাত করে। এ যে নবী করীম (সা.)-এর নির্দেশনারই প্রতিফলন, যেখানে বলা হয়েছে রমজানের শুরুতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে আহ্বান করা হয়। বলা হয়, হে কল্যাণের ধারক, অগ্রসর হও। হে শুভ কাজের কর্মী, এগিয়ে চল। আর মন্দের হোতা তুমি একটু থাম। অশুভ শক্তির ধারক, তুমি ধীরে চল। কেননা এ মাসে আল্লাহ অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। তুমি মুক্তির পথে এসো। গজবের পথের যাত্রীরা একটু সংযত হও। থমকে দাঁড়াও। বলা তো যায় না তোমাকেও ক্ষমা করা হবে। পুণ্যবানরা এগিয়ে এসে ক্ষমা লাভ কর। পাপীরা একটু সংযত হয়ে হলেও ক্ষমার প্রার্থী হও। জুমাতুল বিদায় তাৎপর্য, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য এখানেই।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ এখন বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পুরে ফেলেছে। দুনিয়ার বড় বড় মসজিদগুলোর তারাবী, জুমা ও ঈদের জামাত এখন মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ দেখতে পারছে। আমেরিকার তারাবী, অস্ট্র্রেলিয়ার জুমা, ইউরোপের ঈদ জামাত, পূর্ব-পশ্চিম এবং গোটা মুসলিম বিশ্বের ইফতারী এখন মিডিয়ার প্রসারের যুগে ইসলামের জীবন্ত দাওয়াত। মহানবী (সা)-এর মানবিক, পুণ্যময় ও পবিত্রতাপূর্ণ সুন্নাহ বা সংস্কৃতির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। রমজানের রাতে আলোকোজ্জ্বল মরক্কোর বাদশাহ হাসান মসজিদ, আলজেরিয়ার জামে মসজিদ, মিসরের আল আজহার মসজিদ, দামেস্ক জামে মসজিদ, পবিত্র মক্কা ও মদীনার মহান দুই হারামাইন, ইসলামাবাদের বাদশাহ ফয়সাল মসজিদ, লাহোরের শাহী মসজিদ, দাতাসাহেব মসজিদ, দিল্লীর শাহী জামে মসজিদ, কলকাতার নাখোদা মসজিদ, ঢাকার মহাখালী গাউসুল আজম মসজিদ, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া মসজিদ, সিঙ্গাপুরের সুলতানী মসজিদ, জাকার্তার জাতীয় মসজিদ থেকে কী বার্তা আর বাণী পাওয়া যায়? মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর অনুসারী ২০০ কোটি ভক্ত তাদের মন-প্রাণ অনুভব নিবেদন করে যেভাবে সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও নাজাত কামনা করে তার কোন নজির কি কেউ দেখাতে পারবে? বিশ্বশান্তি, মানবতার মুক্তি ও মানুষ হিসেবে নিজ জনমকে সার্থক করার সাধনায় নিমগ্ন মুসলিম উম্মাহর এই প্রার্থনা, ইবাদত, নিবেদন ও পুণ্যময় উদযাপন কি বৃথা যেতে পারে? কখনই না। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা, তারাবীহ, কোরআন চর্চা, পুণ্যময় অনুশীলন, জুমার নামাজ, সাহরি, ইফতার, ফিতরা জাকাত, দান-খয়রাত, পাপবর্জন ঈদের আনন্দময় বার্তা বিশ্বমানবতার প্রতি মুসলিম উম্মাহর উম্মুক্ত দাওয়াত। আল্লাহর পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান। মহানবী (সা.)-এর আদর্শ, সংস্কৃতি ও শিক্ষার অনুসারী হওয়ার পথে প্রাণময় আকুতি। দুনিয়ার মানুষ শান্তি চাইলে ইসলামই তাদের সে পথ দেখাবে। ইহ ও পরজগতে পূর্ণাঙ্গ শান্তি, সাফল্য ও মুক্তি লাভের জন্য ইসলাম তাদের ডাকছে। এই মুক্তির আহ্বান আর শান্তির পয়গাম নিয়েই নাজিল হয় আল কোরআন। বাস্তবে রূপায়িত হয় মহানবী (সা.)-এর জীবনকর্ম ও সাধনায় দীর্ঘ ২৩ বছরের সীরাতে। হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রাতে নাজিল হওয়া এ কালাম পেয়েই রমজান ধন্য, মহিমান্বিত ও শ্রেষ্ঠ। এ রমজানের বিদায় বার্তা ঘোষণার আবেগঘন মুহূর্ত পবিত্র জুমাতুল বিদা। মহিমান্বিত বিদায়ী জুমা।
পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে যাওয়া লাখো মানুষ জুমাতুল বিদা আদায় করবেন মক্কার পবিত্র হারাম শরীফে। পড়বেন পাক মদিনায় মসজিদে নববীতে। দুনিয়ার সবচেয়ে বড়জমায়েত এখন মক্কা-মদিনায়। উমরা করতে লাখো মানুষ সেখানে। ইতেকাফ করছেন হাজারো মানুষ। রমজানের শেষ দশক আল্লাহর দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে পড়ে থাকার নাম ইতেকাফ। দুনিয়ার বহু শাসক, বিত্তবান, প্রভাবশালীই ইতেকাফে আছেন। সউদী বাদশাহ রমজানের শেষ অংশ কাটাচ্ছেন মসজিদুল হারামভুক্ত আস-সাফা প্রাসাদে। নামাজ পড়ছেন সাফা-মারওয়ার পার্শ্ববর্তী মুসল্লায়। তারাবি ও তাহাজ্জুদে শরিক হচ্ছেন কাবাঘর সংলগ্ন কাতারে। বিশ্বের লাখো মসজিদে কোটি মুসল্লি মসজিদে মসজিদে বসেছেন ইতেকাফে। নারীরা বসেছেন গৃহকোণে তাদের নামাজের স্থানে। শকে কদরের তালাশে তারা নিমগ্ন। জুমাতুল বিদা ও শবে কদরে এবার মক্কায় একই জামাতে শরিক হন অন্তত ৬০ লাখ মুসল্লি।
বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসল্লী আবেগভরা উপস্থিতিতে ভরে তুলবেন লাখো মসজিদ। উপচে ওঠা ভিড় নেমে আসবে মসজিদ প্রাঙ্গণে, পার্শ্ববর্তী চত্বর, ফুটপাত রাজপথ ও খোলামাঠে আর দু’একরাত পরে শেষ হয়ে যাবে খতম তারাবীহর অনুপম দৃশ্য। রাজধানীর কর্মজীবী মানুষ বিপণিকেন্দ্র, বাজার, আড়ত, পাবলিক প্লেসগুলোতে পর্যন্ত জামাতে তারাবীহ পড়ছেন। জায়নামাজ, কাগজ, কার্টনের শিট, সংবাদপত্র ইত্যাদি বিছিয়ে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে মানুষ। আছে তরুণ, যুবক, শিশু-কিশোর, আছেন বয়স্ক-প্রবীণ। সারাদেশে নানা শ্রেণী-পেশা ও পরিচয়ের কোটি নামাজি। এমন রোযা, ইফতার, সাহরি, তিলাওয়াত, তাসবি, জিকির, তারাবী, জামাত, জুমার ভরপুর পবিত্রতা যেন আরেকটি বছর পার হয়ে সবার জীবনে ফিরে আসে এই হল মূল প্রার্থনা। এত আবেগ, এত অনুভব মূলত আল্লাহর কাছে রহমত, মাগফিরাত, নাজাত, দীন-দুনিয়ার মঙ্গল, মানবজাতির শান্তির জন্য দোয়া। রমজান সফল ও ফলপ্রসূ হোক। আরো রমজান যেন ভাগ্যে জুটে। শবে কদর যেন পাওয়া যায়। এসব মুনাজাত নিয়েই পুষ্পিত ও মহিমান্বিত জুমাতুল বিদা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।