Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রিজার্ভ চুরির দায় কে নেবে : অর্থমন্ত্রীকে রওশন

সামাজিক অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে সংলাপের আহ্বান

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। এর দায়দায়িত্ব কার? এই রিজার্ভ চুরির দায় কে নেবে? অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, সামাজিক অস্থিরতা রয়েছে বলে মন্তব্য করে এই সামাজিক সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে বুধবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেন।
রওশন এরশাদ বলেন, সরকারি ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এটা কার সাহায্যে হয়েছে। এই টাকা ফিরিয়ে আনার কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে এটা দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এই টাকা কার? এ টাকা দেশের জনগণের। এ টাকা ফিরিয়ে আনার কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? উনি (অর্থমন্ত্রী) কি এর উত্তর দেবেন।
প্রস্তাবিত বাজেট কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ বাজেটে আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা কিভাবে আদায় হবে। দেশে এখনো অনেকেই আয় বেশি হলেও কর দেয় না। তাদের করের আওতায় আনতে হবে। তা ছাড়া অর্থ লুটপাট বন্ধ করতে বিশেষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় রওশন বাজেটে কৃষি ও কৃষকসহ দরিদ্র মানুষের সুবিধার জন্য, শিল্প উন্নয়নসহ এসব খাতে কর কমানোর দাবি জানান।
রওশন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে রাস্তায় মেরে ফেলল। কী করে হলো? গুম, শিশু-নারী হত্যাÑ এগুলো চলছে। কর্মসংস্থানের অভাবে এগুলো হচ্ছে। এর শেষ দেখতে চাই। দেশে শান্তি দেখতে চাই। দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, সামজিক অস্থিরতা আছে।
তিনি বলেন, পুলিশ দিয়ে এগুলো বন্ধ করা যাবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বন্ধ করতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই আলোচনায় বসলে উপায় খুঁজতে পারব। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মিলেমিশে সমাধান করতে হবে।
বাজেট আলোচনায় দেশে শুধু অর্থনৈতিক ঘাটতি নয়, আর্থ-সামাজিক খাতে, মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ঘাটতি আছে উল্লেখ করে রওশন বলেন, মিটিং-মিছিল-ইফতার-বিয়েতে আমরা অন্য দলের লোকদের সঙ্গে কথা বলি না; এড়িয়ে যাই। এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
কৃষককে আবার কেন কর দিতে হবে
কৃষকদের করের আওতায় আনার যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দিয়েছেন তার বিরোধিতা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, কৃষক জমির মালিক নয়। কৃষকের ওপর অর্থমন্ত্রী কর ধরার চিন্তা করছেন।
কৃষক লুঙ্গি পরে। নেংটির ওপর কাপড় নেই। ভর্তার ওপর তরকারি নেই। এত নিচুতলার লোক কিভাবে কর দেবে। তারা তো এমনিতেই কর দিচ্ছে, পরোক্ষ কর দিচ্ছে। আবার কেন কর দিতে হবে?
দেশের ১৬ কোটি লোকের মধ্যে এক কোটি লোক কর দিতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদেরকে কেন ধরছেন না? মোটর মালিক সমিতি, এফবিসিআই-বিজিএমই অনেক আছে। তাদের আয়-ব্যয় কী? হিসাব নেন।
গরিীবের ওপর কর দিয়ে ঘাটতি মেটাতে পারবেন না। কৃষক ন্যায্য মূল্য পায় না। সামান্য ঋণ নিয়ে মামলা হয়। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মামলা হয় না। এই কৃষকদের মামলা প্রত্যাহার করা হোক আর এই টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হোক।
আমরা অধম হলে আপনি উত্তম হবেন না কেন
বক্তৃতার একপর্যায়ে বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা ছিলাম ২৫ বছর আগের সরকার। এখন আমরা দেখতে পারছি আপনাদের সরকারের কর্মকা-। আপনি বলতে পারেনÑ আমাদের সময় কী ছিল? আমাদের সময় কী করেছি, সেগুলো হয়তো ২৫ বছর আগে ঠিক ছিল। ২৫ বছর পর হয়তো ঠিক নাও হতে পারে। আমরা যদি অধম হই আপনি উত্তম হবেন না কেন?
ঘাটতি প্রসঙ্গে রওশন বলেন, এত ঘাটতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী কিভাবে স্বপ্ন দেখলেন। গত বাজেটে সমৃদ্ধির সোপানে উঠতে চেয়েছিলেন। সেটা কতটুকু উঠতে পেরেছিলেন? স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে তো আর স্বপ্ন দেখি না। অর্থমন্ত্রী অনেক কিছু গোপন করলেও উচ্চাভিলাষ গোপন করতে পারেননি। সমস্যা হচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়ন কিভাবে হবে?
রূপপুর নিয়ে উদ্বিগ্ন রওশন
বাজেট আলোচনায় পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশেষজ্ঞ ছাড়া হ্যান্ডেল করা যাবে না। কে করবে? রাশিয়াতে ১০০ ভাগ লোক শিক্ষিত। সেখানকার চেরনোবিল এখন মরুভূমি। কিছু যদি লিকেজ হয় হাজার হাজার মানুষ মরে যাবে। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে করতে হবে। এর বর্জ্য কে নেবে? তার জন্য কি চুক্তি করা হয়েছেÑ হয়নি। জাপানে কিন্তু লিকেজ হয়েছে সুনামিতে। তারা বন্ধ করে দিয়েছে। চিন্তা-ভাবনা করে করতে হবে।
আলোচনায় তিনি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি এর মানোন্নয়নে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একই সঙ্গে মেডিটেশন, পাউরুটি ও বিস্কুটের ওপর থেকে প্রস্তাবিত কর তুলে নেয়ার দাবি জানান রওশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজার্ভ চুরির দায় কে নেবে : অর্থমন্ত্রীকে রওশন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ