পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : এক নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী বহু মুসলিম নারী তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে ভীতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশ মুসলিমরা ধর্মভিত্তিক ঘৃণার বিস্ফোরণের শিকার হচ্ছেন। এতে ব্রেক্সিট ভোটের পর বর্ণবাদ তীব্রতর হওয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
অ্যান্টি মুসলিম হেট মনিটরিং গ্রুপ টেল মামা’র বার্ষিক জরিপে বলা হয়, গত বছর ঘৃণাজনিত ঘটনা ৩২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে মসজিদসমূহের গ্রুপ মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন বলে, তারা শুধু গত সপ্তাহেই একশ’টি হেট ক্রাইমের ডোশিয়ের তৈরি করেছে।
ডেভিড ক্যামেরন ও জেরেমি করবিনের মতো রাজনৈতিক নেতারা সোমবার কমনসে এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বিশিষ্ট লেবার নেতা হ্যারিয়েট হারমান বলেন, অনেকেই এখন মনে করেন যে বর্ণবাদীদের জন্য এখন খোলা মৌসুম চলছে। পোলিশ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গ্রুপগুলো সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশের সর্বত্র বেশ কয়েকবার গালাগালির সম্মুখীন হয়। ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিল বলেছে, বৃহস্পতি ও রোববারের মধ্যে একটি পুলিশ অনলাইন হেট ক্রাইম খবর সংক্রান্ত সাইটে চার সপ্তাহ আগে একই সময়ের তুলনায় ৫৭ শতাংশ ঘটনা বৃদ্ধি শনাক্ত করেছে।
তবে টেল মামা বলে, তাদের বার্ষিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মুসলিমবিরোধী ঘৃণা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা ইইউ গণভোটের আগেই।
তাদের জরিপে দেখা গেছে, উগ্র ডানপন্থী অ্যাক্টিভিস্টরা প্রায়ই অনলাইন ঘটনার পিছনে জড়িত থাকলেও বাস্তব জগতে স্কুল ও কলেজে, রেস্তোরাঁ ও গণপরিবহনে বহু হামলার ঘটনা ঘটছে। অফলাইন এসব ঘটনা ২০১৫ সালে ছিল ১৪৬টি, আর এ বছর তা হয়েছে ৪৩৭টি অর্থাৎ ৩২৬ শতাংশ বেড়েছে।
টেল মামা বলে, মুসলিম নারীদের ওপর, বিশেষ করে যারা ইসলামী পোশাক পরিধান করে, তাদের ওপর এ হামলা এত তীব্র যে তাদের অনেককেই দৈনন্দিন কাজ-কর্ম করতেও বাধা দেয়া হচ্ছে।
এ গ্রুপের সভাপতি সাবেক লেবার কমিউনিটি মন্ত্রী শহিদ মালিক বলেন, আমরা একটি অনিরূপিত ভূখন্ডে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনলাইন ও রাস্তাঘাটে মুসলিম বিরোধী ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটার বিবর্ণ চিত্র তুলে ধরে যাতে দেখা যায় যে মুসলিম নারীরা অযৌক্তিকভাবে কাপুরুষ ঘৃণা প্রকাশকারী উন্মাদদের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন।
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় প্রমাণ হয় যে মুসলিম-বিরোধী ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সমাজ হিসেবে আমরা আমাদের বহু নাগরিকের রক্ষায় যথেষ্ট রকম ব্যর্থ হচ্ছি।
তিনি বলেন, ব্রেক্সিট ভোটের প্রেক্ষাপটে এবং বর্ণবাদী ঘটনার বিস্ফোরণ যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সরকারের কোনোই সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে পরিস্থিতি দ্রুত ব্রিটেনের সংখ্যালঘুদের জন্য চরম নিরানন্দকর হতে পারে।
সুতরাং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আমাদের সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং অবশ্যই আমাদের সংবাদ মাধ্যমকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে এবং আমাদেরকে এমন এক ব্রেক্সিট-উত্তর ব্রিটেনের দিকে পরিচালিত করতে হবে যেখানে বিদেশী-আতংক ও ঘৃণা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যাত হবে।
মামা’র রিপোর্টে বলা হয়, সেসব নারী সবচেয়ে বেশী ঘৃণার শিকার হচ্ছেন যাদের দেখে মুসলিম মনে হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে যাদের চলাফেরা এবং ভীতি ও আতংক থেকে মুক্ত থাকার স্বাধীনতা ক্রমাগত ভাবে খর্ব হয়ে চলেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, তারা যেসব ঘটনা রেকর্ড করেছে তাতে দেখা যায়, ৬১ শতাংশ ঘটনার শিকার হয়েছেন নারীরা এবং তাদের ৭৫ শতাংশই হয়েছেন তাদের দেখে মুসলমান মনে হওয়ায়, যেমন হিজাব পরিহিতারা। মহিলাদের উপর বেশীরভাগ হামলা বা দুর্ব্যবহার করা হয় সে সময় যখন তারা গণপরিবহনে করে শহরে, নগর কেন্দ্রগুলোতে কাজে বা কেনাকাটা করতে যান।
১১ শতাংশ ঘটনা ঘটে স্কুল ও কলেজগুলোতে। রিপোর্টে ঘৃণা প্রকাশক মন্তব্য ও শারীরিক হামলার ৩৫টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। টেল মামা বলে, অফস্টেড ও শিক্ষা দফতরের উচিত তাদের স্কুলগুলোতে মুসলিম বিরোধী মনোভাব ও ঘৃণা মূল্যায়নের বিষয় বিবেচনা করা।
এর আগে বহু ঘটনার কথা জানা গেছে। গত নভেম্বরে লন্ডনের এক বাসে এক মহিলাকে এক গর্ভবতী মুসলিম নারীর সাথে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়। সে তাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সমর্থক বলে অভিযুক্ত করে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সে মহিলাকে স্থগিত কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
টেল মামা বলে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নির্যাতকদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এ থেকে বোঝা যায় যে কিছু টিনএজারও উগ্রপন্থী হয়ে উঠছে এবং মূলধারার তাদের বয়সী বহুসংস্কৃতিতে অভ্যস্তদের থেকে পৃথক হয়ে পড়ছে।
সোমবার কমনসে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন গণভোটের প্রেক্ষাপটে বর্ণবাদী ঘটনাগুলোকে নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেন। অন্যদিকে লন্ডন মেয়র সাদিক খান স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে আরো সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন।
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের মহাসচিব ড. শুজা শফি বলেন, গণভোটের ফল জানাজানি হওয়ার পর আমি সকল রাজনীতিককে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেই এবং প্রচারের ফলে সৃষ্ট বিভক্তি নিরসনের আহবান জানাই। এখন আমরা দেশব্যাপী এসব দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে দেখছি ও সংখ্যালঘুরা টার্গেট হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশটি এক রাজনৈতিক সংকট প্রত্যক্ষ করছে। আমার ভয় যে তা সামাজিক শান্তিকে হুমকিগ্রস্ত করবে। সূত্র দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।