Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩৪ কোটি টাকার কাজে বরাদ্দ না পেয়েও ৪ কোটি টাকা ‘ঘুষ’

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার পাউবো অফিসে তালা ঝুলানোর ঘোষণা
কক্সবাজার অফিস ঃ ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ ও ‘রোয়ানু’ পরবর্তী কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারসহ প্রায় ৩৪ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের বিপরীতে সম্পূর্ণ বরাদ্দের ঘোষণা না পেলে আজ (৩০ জুন) সকাল থেকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঠিকাদাররা। তারা গত মঙ্গলবার দুইদিনের এই সময়সীমা বেঁধে দেন। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতি মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। একই সাথে ঠিকাদার সমিতি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন। এদিকে গতকাল বুধবার আলটিমেটাম শেষ হলেও কক্সবাজার পাউবো বিভাগে সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি।
ওই স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান ঠিকাদারদের সাথে মিথ্যা ও ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে ‘৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে’ বলে কাজ করিয়ে নিয়েছেন। আর ৩৪ কোটি টাকার কাজের কার্যাদেশ দেয়ার সময় নির্বাহী প্রকৌশলী উৎকোচ হিসেবে ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা নগদ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান দাবি করেছেন, অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতে জরুরি ভিত্তিতে করা কাজের অনুমোদন দেয়ার পর বরাদ্দ দেয়া হয়। ঠিকাদাররা সব জেনেই দরপত্রের অংশগ্রহণ করেছেন। পরে ৩৪ কোটি টাকার কাজের বিপরীতে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট বরাদ্দের জন্য চেষ্টা-তদ্বির চলছে।
কক্সবাজার শহরের মোটেল রোডস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেলা উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, বিধ্বস্ত, প্রায় অস্তিত্বহীন বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে মেরামত, সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের জন্য বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান সরকারি ক্রয় নীতিমালা পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে বিভিন্ন প্যাকেজে ৩৪ কোটি টাকার কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। পরে বাছাইকৃত ঠিকাদারদের কাজের কার্যাদেশও দেয়া হয়।
তারা দাবি করেন, ‘দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ প্রদানকালীন সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান ঠিকাদারদের সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে, অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতে ৩৪ কোটি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা কক্সবাজার পাউবোর বিপরীতে ব্যাংকে গচ্ছিত আছে।’
তারা জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর সুস্পষ্ট আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ঠিকাদারগণ কাজ শেষ করে কাজের বিপরীতে বিলের অর্থের জন্য যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী নানা রকম ছল-চাতুরির আশ্রয় নেন বলে তারা দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, ‘আমরা দায়িত্বশীল নানা সূত্রের সাথে যোগাযোগ করে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছি যে, প্রকৃত অর্থে ৩৪ কোটি টাকার কোনো বরাদ্দ অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতে বরাদ্দ হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান ছাড়াও ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, ঠিকাদার সমিতির নেতা হারুনুর রশিদ, রমজান আলী, নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র মতে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলায় ৩৯টি গ্রুপে এই সংস্কার কাজ করা হয়। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, তিনি শুধু কাজের অনুমোদন পেয়েছিলেন, কোনো টাকা বরাদ্দ পাননি। সব জেনেই ঠিকাদারগণ দরপত্রে অংশ নিয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, ঠিকাদারগণ নিশ্চিত তাদের টাকা পাবেন। এখন ৯ কোটি ৪৬ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট টাকা আগামী অর্থবছরে অবশ্যই পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা হয়। ওই সময় তিনি অবশ্য ‘উৎকোচ’ গ্রহণ সম্পর্কে তেমন কোনো জবাব দেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৩৪ কোটি টাকার কাজে বরাদ্দ না পেয়েও ৪ কোটি টাকা ‘ঘুষ’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ