পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
তৈরি পোশাক কারখানা সংস্কার নিয়ে মালিকপক্ষ ও ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ঘুচিয়ে স্থায়ী উদ্যোগ হিসাবে গঠন করা হয়েছে আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিল (আরএসসি)। মঙ্গলবার একর্ডের সঙ্গে বিজিএমইএর একটি সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে নতুন এই তদারকি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করল। ওইদিন একর্ডের ঢাকা অফিসে সমঝোতা চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো একর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আরএসসি প্রথমবার নেয়া একটি জাতীয় উদ্যোগ, যা দেশীয় শিল্প, ব্রান্ড এবং ট্রেড ইউনিয়নকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত কমপ্লায়েন্সের মানদন্ড নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে অদ্যাবধি অর্জিত সাফল্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে এই আরএসসি শিল্প সম্পর্ক, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত বিষয়কে নিজেদের কার্যপরিধির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবে। এতে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ এবং অ্যাকর্ড পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, আরএসসি গঠন বিজিএমইএ’র জন্য খুশির সংবাদ। কোনো রকম ঝামেলার মধ্যে না গিয়ে সমঝোতায় উপনীত হয়ে চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছে সবাইকে একই সুরে, একইভাবে কাজ করতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সব সিদ্ধান্ত নেব। রুবানা হক বলেন, আরএসসি গঠনের মধ্য দিয়ে একর্ডের বাকি কাজগুলো বুঝে নিয়ে তারাই সংস্কার কাজ চ‚ড়ান্ত করবে।
জানা গেছে, একর্ড ১৬শ কারখানার মধ্যে মাত্র ২০০টি কারখানার সনদ দিয়েছে। বাকি কারখানাগুলোর সংস্কার কাজ ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে একর্ড দাবি করছে। একারণে এসব কারখানাগুলোতে ক্রয় আদেশ না পাঠাতে বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিচ্ছে একর্ড। নতুন আরএসসি গঠনের মধ্য দিয়ে এসব কারখানার দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার কাজ চূড়ান্ত করা হবে। সেই তদারকিতে একর্ডের প্রকৌশলীদের পাশাপাশি বিজিএমইএর নিয়োগ করা প্রকৌশলীরাও থাকবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকান্ড এবং ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় একর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে একর্ড নামে পরিচিতি পায়। ২০১৮ সালের মে মাসে একর্ডের কার্যকারিতার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ে একই লক্ষ্যে গঠিত আমেরিকার ক্রেতাদের জোট এলায়েন্স নির্দিষ্ট সময়ের পর ফিরে গেলেও কাজ শেষ হয়নি বলে আরও তিন বছর সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় একর্ড, যাতে আপত্তি তোলে বাংলাদেশের কারখানাগুলো। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বিরোধিতার কারণে একর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির ওই উদ্যোগ আদালতে গড়ায়। পরে গত ৮ মে একর্ড ও বিজিএমইএ যৌথভাবে আরও ২৮১ কর্মদিবস কাজ করতে একটি সমঝোতা চুক্তিতে সই করে। গত বছরের ১৯ মে এই সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ উভয়পক্ষকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়। এরপরও একর্ড ও কারখানা মালিকদের মধ্যে বিরোধ দূর হয়নি। সংস্কারের নামে একর্ড মালিকদের হয়রানি করছে এবং রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ মালিকপক্ষের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।