পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম ভেঙে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উচ্চ গবেষনার ডিগ্রির (পিএইচডি) সনদ নিয়েছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও প্রক্টর মোস্তফা কামাল। গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধুপখোলা মাঠে আয়োজিত সমাবর্তনে এ সনদ গ্রহন করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় উপস্থিত একাধিক ডিন ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোস্তফা কামালের ওই ডিগ্রী দেয়ার বিরোধিতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড.মীজানুর রহমান তার নিজ ক্ষমতাবলে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন। এবং ঐ সভায় তাৎক্ষণিকভাবে ভিসি ড.মীজানুর রহমান তার নিজ ক্ষমতা বলে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর (বিশেষ ক্ষেত্রে শুধু শিক্ষক) ক্ষেত্রে ২ বছরেই পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান এবং অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকার যে বিধান তাও শিথিল করে নেন। কিন্তু মোস্তফা কামালের এই ডিগ্রি প্রদানের আগে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করতে ৩ বছরের সময়সীমা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রির জালিয়াতির সংবাদ ওই সময় বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবর্তনে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন।
জানা গেছে, মোস্তফা কামাল জবি’র প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের সাধারণ সম্পাদক ও একজন প্রভাবশালী শিক্ষক। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। একাডেমিক কাউন্সিল সভা ও সিন্ডিকেট সভায় পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদনের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েল সহকারী প্রক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ শিক্ষক ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের ২য় শ্রেণীতে ৫১তম এবং ওই ব্যাচের ৯০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯তম হওয়ার পরও জবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ৩ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ থাকলেও তার অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ১ বছর ৯ মাস। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার উল্লেখ করেছেন। এখানেই শেষ নয় অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই নিয়ম ভঙ্গ করাই যেন তার প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি রুলস অ্যান্ড রেজুশেনের নিয়ম ভঙ্গ করে বাগিয়ে নিয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রী। রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ৪ নম্বর ধারার ‘বি’ নং উপধারায় বলা হয়েছে, একজন থিসিস রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হতে ৩ বছরের আগে পিএইচডি থিসিস জমা দিতে পারবে না। অথচ তিনি ২ বছরেই পিএচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এছাড়াও ঐ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি নীতিমালার ২ এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগের জন্য পিএইচডি করতে হলে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। আর গ্রেডিং পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৩ দশমিক ২৫ সিজিপিএ থাকতে হবে। কিন্তু ওই শিক্ষকের প্রাপ্ত নম্বর মাত্র ৪৯ শতাংশ। আর এসব কিছুই করছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ম্যানেজ করে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্র জানা যায়, মোস্তফা কামাল পিএইচডি ডিগ্রীতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। তিনি ২০১৪ সালের ৯ই ডিসেম্বর পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর ডিগ্রী লাভ করেন গত ২০১৬ সালের ১১ই ডিসেম্বর। ২০১৬ সালের ১১ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে ‘বিভিন্ন ধর্মে নারীর অধিকার : পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার জন্য তার পিএইচডি ডিগ্রী অনুমোদন দেয়া হয়। তার ঠিক চার দিন পর ১৫ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তা চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এ সিন্ডিকেটের আদেশ অনুসারে ২০১৭ সালের ২২শে জানুয়ারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ্ওই একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট মিটিং উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। মোস্তফা কামালের পিএইচডি ডিগ্রীর তত্ত¡াবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল অদুদ। যিনি আরেক বিতর্কিত শিক্ষক। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আল-কোরআন বিভাগের অধ্যাপক থাকাকালীন জামাতপন্থী ওই শিক্ষক নেতার বাসা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামী মুফতি হান্নানের নিজস্ব ডায়েরী উদ্ধার করেছিল যৌথ বাহিনী। যা ওই সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে।
ওই শিক্ষকের একাডেমিক কাগজপত্র ঘেটে দেখা গেছে, তিনি ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষে মৌলিক কোর্স (বাংলা ও ইংরেজি) অকৃতকার্য হওয়ায় পরবর্তী ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেন।
পিএইচডি জালিয়াতির আশ্রয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ও জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টর মোস্তফা কামাল এ বিষয়ে বলেন, আমার তিন শিক্ষাবর্ষেই পিএইচডি ডিগ্রি নেয়া হয়েছে। আমার চেয়েও কম সময়ের মধ্যেও একজন পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। আর পিএইচডি আবেদনের যোগ্যতার বিষয়েই তিনি বলেন বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই আমি আবেদন করি।
মোস্তফা কামালের পিএইচডি তত্ত¡বধায়ক ড. মোহাম্মদ আব্দুল অদুদ মোস্তফা কামালের পিএইচডি আবেদনের যোগ্যতা ও পিএইচডি প্রদানের সময়সীমা নিয়ে বলেন, এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় কর্র্র্তৃপক্ষ ভালো জানেন। তার থিসিসটি শুধু আমি যাচাই বাছাই করেছি। আর তিনি কয় বছরে জমা দিয়েছেন সেটা বিশ^বিদ্যালয় ভালো জানেন। আর ২ বছর না ৩ বছর এটা নিয়ে আপনাদের মাথা ব্যথা কেন।
জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামান বলেন, সিন্ডিকেট মেম্বাররা তার পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদন করেন। আর একই মিটিংয়ে আইন সংশোধন করে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার ক্ষেত্রে কোন ব্যতয় ঘটেছে কিনা সেটা আইন বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।