পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : বাসাবোর আক্কাস আলী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। পবিত্র রমজানে রোজা রেখে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির কারণে এতটাই অসন্তুষ্ট যে, ক্ষোভের কথাটা পত্রিকা অফিসে ফোন করেই জানালেন। তার প্রশ্নÑগ্রাহকের কষ্টের কথা না ভেবে খেয়াল-খুশিমতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, আর গ্রাহকরা বর্ধিত দামেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে; এরপরও কেন লোডশেডিংয়ের যাতনা ভোগ করতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এই কাঠফাটা গরমে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সরকার নাকি আরও এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে। ঈদের পরেই মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটা জোরদার হবে, এমন আলোচনা এখন সব মহলে।
আক্কাস আলীর ক্ষোভ যাই থাক, বিদ্যুৎ নিয়ে যে ভোগান্তির শেষ নেই, এটা বাস্তবতা। একদিকে প্রচ- তাপদাহ। আরেকদিকে দিনে ও রাতে সমান তালে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা চলছে। পবিত্র রমজান মাসেও লোডশেডিং থেমে নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে মিটিং করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল যে, রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইফতারের সময়, তারাবির নামাজের সময়, সেহেরির সময়ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়ছে। অফিস, আদালত, বাসাবাড়ি, শিল্প-কারখানা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বত্রই লোডশেডিংয়ের যাতনা। ঢাকাতেই বিদ্যুৎ নিয়ে যেখানে সীমাহীন ভোগান্তি চলছে, সেখানে জেলা শহরগুলোর অবস্থা আরও অমানবিক, এটা অকপটেই বলা যায়।
লোডশেডিংয়ের যাতনায় অতিষ্ঠ মিরপুরের বাসিন্দা মো. আবদুস সোবহান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমার পরও বিদ্যুতের দাম কমেনি, বরং বেশি দামেই বিদ্যুৎ কিনে ব্যবহার করছি। তারপরও বিল দিতে দেরি হলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। অবস্থা যেখানে এরকম, সেখানে বিদ্যুৎ নিয়ে তো ভোগান্তি হওয়ার কথা নয়।
অপরদিকে গাজীপুরে একটি কুটিরশিল্পের মালিক আক্তার হোসেন বলেন, অল্প পুঁজি নিয়ে আমার লেদ মেশিনের ব্যবসা। বিদ্যুৎ ভোগান্তির কারণে কয়েকদিন যাবৎ ব্যবসা লাটে উঠেছে। আর ক’দিন পরেই ঈদ। বিদ্যুতের অভাবে যদি শ্রমঘণ্টার অপচয় হতে থাকে, তাহলে কীভাবে শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করব। তিনি আরও বলেন, এভাবে চললে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, ব্যবসা গুটিয়ে পালাতে হবে।
গত দু’দিন আগে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে জানানো হয়েছে, তারা ৮ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। রেকর্ড যাই থাক, তাই বলে লোডশেডিং কিন্তু থেমে নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনায় উৎপাদন অনেক কম। প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটের ওপর ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি মোকবিলা করতেই এতটা লোডশেডিংয়ের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। ঢাকায় যে হারে লোডশেডিং চলছে, জেলা শহরগুলোতে এই চিত্র আরও ভয়াবহ।
এমন দুরবস্থায় বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদার সাথে উৎপাদনের যে ফারাক দেখানো হয়, তাতে যথেষ্ট শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। পিডিবি এই অসহনীয় গরমেও গড় চাহিদা ৮ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট দেখালেও কার্যত চাহিদা কোনোভাবেই সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নয়। এক্ষেত্রে চাহিদার সাথে উৎপাদনের ঘাটতি রয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার মেগাওয়াট। এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব না হওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে চলছে এই ভোগান্তি।
তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য লোডশেডিংয়ের বিষয়টিকে দেখছেন অন্যভাবে। তার মতে, ট্রান্সমিশন সমস্যার কারণে কিছু জায়গায় লোডশেডিং হচ্ছে। এই সমস্যা কেটে গেলে খুব শিগগিরই লোডশেডিং সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, এ সমস্যা দূর করতে সময় লাগবে। তার মতে, বর্তমানে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। উৎপাদন বাড়িয়ে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার পর্যন্ত করা সম্ভব হবে। তার মতে, ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। গ্রাহক যখন চাইবে তখনই বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে বিতরণ লাইনও একটি বড় সমস্যা। তিনি বলেন, শহরে তুলনায় বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি সমস্যা রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চাহিদার অনুপাতে লোডশেডিং সবচেয়ে কম হয় ঢাকা অঞ্চলে চাহিদার শতকরা ১২ ভাগ। আর ন্যাশনাল গ্রিড ডেসপাচ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মোট চাহিদার ১৬ শতাংশ করে লোডশেডিং হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগ কাগজে-কলমে উৎপাদন ও লোডশেডিংয়ের যে হিসাবই দিক না কেন গ্রাহক পর্যায়ে পরিস্থিতি ভিন্ন। দিনে চাহিদার ১২ বা ১৬ শতাংশ লোডশেডিং হলে প্রতি ৬ বা ৮ ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হওয়ার কথা; কিন্তু এখন দিনে সাত থেকে আটবার লোডশেডিং হচ্ছে এলাকাভেদে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে সরকারিভাবে বিদ্যুতের চাহিদা এবং লোডশেডিংয়ের যে হিসাব দেয়া হয় তা সঠিক নয়।
রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, সাতারকুল, উলন, শাহাজাদপুর, গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, লালবাগ, বকশিবাজার, সুত্রাপুর, কোতয়ালি, যাত্রাবাড়ী, সেনারপাড়, মানিকনগর, গুলবাগ, গোড়ান, খিঁলগাও, তিলপাপাড়া, বাসাবো, মেরাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনে তিন থেকে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকার বাইরে বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, চাপাইনবাবগজ্ঞ, সিরাজগজ্ঞ, পাবনা, টাঙ্গাইল, মানিকগজ্ঞ, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, নিলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ দেশের প্রতিটি এলাকাতেই চলছে লোডশেডিং। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা ও মানিকগঞ্জ জেলার পল্লী বিদ্যুতের জিএম পৃথকভাবে ইনকিলাবকে জানান, প্রচ- তাপদাহে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এই চাহিদার তুলনায় তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাচ্ছেন। এ কারণে লোডশেডিং বেড়েছে।
বিদ্যুতের লোডশেডিংকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ যখন চরমে, তখন বিতরণ কোম্পানিগুলো আরও একদফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা পেশ করেছে বিইআরসি’র কাছে। বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ডিপিডিসি, ডেসকোসহ সকল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের সাত বছরের শাসনামলে ৮ দফা বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হলো।
এ ব্যাপারে এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেও এর মূল্য কমানো হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এরপর বিদ্যুতের দাম কমে যাবে। কিন্ত আমাদের প্রত্যাশা সরকার পূরণ করছে না। তিনি বলেন, সরকারকে লোডশেডিং কমাতে হবে। অন্যথায় শিল্পখাতে শ্রমঘণ্টার যেমন অপচয় হবে, তেমনি উৎপাদনেরও ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
অপরদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ম. তামিম বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে এর আগে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ জ্বালানি তেল দিয়ে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার সময় বলা হয়েছিলÑএখন উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে, তাই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি দেশীয় বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক হবে।
রাজধানীর বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ বিতরণ করে ডিপিডিসি। লোডশেডিং প্রসঙ্গে ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা জানান, চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তাদেরকে লোডশেডিং বাড়াতে হয়েছে। এই কর্মকতার মতে, গরমে ট্রান্সফরমার গরম হয়ে যাওয়া; মাটির নিচ দিয়ে নেয়া ক্যাবল এবং ওপর দিয়ে নেয়া বৈদ্যুতিক লাইন গরম হয়ে যাওয়ায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে করেও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। গরমের কারণে এসি, ফ্যান, পানির মোটর যেভাবে চলছে, তাতেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর ইজিবাইকের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র যেভাবে রিকশায় বিদ্যুৎখেকো ব্যাটারি ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ফলেও বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।