পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এই হত্যাকা- নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছেই না। পুলিশ বলছে, মিতুর খুুনিরা ভাড়াটে, একটি পক্ষ তাদের টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে। তবে কারা এসব ভয়ঙ্কর খুনিদের ভাড়া করেছে তার উত্তর দিচ্ছে না পুলিশ। কেনই বা মিতুর মতো এক নিরপরাধ পরহেজগার পর্দানশিন গৃহবধূকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো তার উত্তরও এখনও অজানা। খুনি চক্রের সদস্য হিসাবে যারা গ্রেফতার হয়েছে এবং যাদের নাম এসেছে তারা সবাই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী।
কিলিং মিশনের প্রধান হিসাবে যে মুছার নাম এসেছে সে এক দশক ধরে পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে আসছে। হত্যা মিশনে অন্য যারা তাদেরও পুলিশ চেনে। তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। অথচ পুলিশ শুরু থেকে তাদের আড়ালে রেখে মিতু খুনের জন্য কখনো জঙ্গি, কখনো বা জামায়াত-শিবিরকে সন্দেহ করে তাদের অভিযান পরিচালনা করেছে। ঘটনার পরপর পুলিশের হাতে সিসিটিভির ফুটেজ আসে। এখন দাবি করা হচ্ছে, ফুটেজ ধরে আসামীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অথচ তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় ফুটেজ অস্পষ্ট, খুনিদের চেনা যাচ্ছে না। খুনের পর থেকে পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যে ঘেরা। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারাও একেক সময় একেক কথা বলছে। এতে করে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। জনমনে নানা বিভ্রান্তি ও গুজব ডালপালা মেলছে।
বিশেষ করে হঠাৎ করে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মধ্যরাতে বাসা থেকে ডেকে নেওয়া এবং টানা পনেরো ঘণ্টা পর ফের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকে এক নতুন রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সন্দেহÑসৎ, সাহসী, পেশাদার এই পুলিশ অফিসার ষড়যন্ত্রের শিকার। তার সাফল্যে যারা খুশি হতে পারেনি তারাই নির্মম এই হত্যাকা-ের ঘটনাকে পুঁজি করে বাবুল আক্তারকে কোণঠাসা করার চক্রান্ত করছে। আবার আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের লুকোচুরি এবং রহস্যময় আচরণ সেই সন্দেহকে আরও জোরালো করে তুলছে। হত্যাকা-ের পর থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা হত্যাকা-ের মোটিভ এবং এই ঘটনায় জড়িদের বিষয়ে একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে আসছেন।
এক সপ্তাহ আগে থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলে আসছেন সব আসামী তাদের জালে। একে একে সবাই ধরা পড়বেÑআর হচ্ছেও তাই। আরও দুই আসামী ধরা পড়বেÑস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর চট্টগ্রামে মিতু হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করার কথা স্বীকার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি গ্রেফতারকৃত এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া (৪১) অস্ত্র সরবরাহকারী। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করতে অস্ত্র সরবরাহ করে সে। খুনের পর খুনিচক্রের সদস্যরা সে অস্ত্র আবার তাকে ফেরত দিয়ে দেয়। হত্যাকা-ের ছক তৈরি করতে কিলিং মিশনের প্রধান মুছার বাড়িতে আগের দিন রাতে যে বৈঠক হয় সেখানে ভোলাইয়াও হাজির ছিলÑএমন তথ্য পুলিশের হাতে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে ভোলাইয়ার সহযোগী মো. মনির হোসেনের বাসা থেকে মিতু হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র দুটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ডিবির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের একটি বিশেষ টিম আসামী নগরীর বাকলিয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। ভোলাইয়া বাকলিয়া থানার রাজখালী বিশ্বরোডের পাশে ভোলার বাড়ির সিরাজুল হকের পুত্র। মো. মনির হোসেন ওরফে মনিরের (২৮) বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার জানঘর গ্রামে। তার পিতার নাম ওহিদ মিয়া। ভোলাইয়ার দেয়া তথ্যমতে, মনিরের বাসা থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ৩২ বোরের ১টি দেশীয় তৈরি রিভলবার, ১টি ম্যাগাজিন ও ৬ রাউন্ড .৩২ বোরের গুলিসহ মনিরকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বুেলন, মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী ওয়াসিম জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি তারা হত্যাকা-ের আগে ভোলার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল। হত্যাকা- শেষে উক্ত অস্ত্র-গুলি ভোলার নিকট ফেরত প্রদান করে। ওয়াসিমের স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে মামলার আসামীদের গ্রেফতার ও ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের লক্ষ্যে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, ভোলাইয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি সরবরাহ করেছিল বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। হত্যাকা-ের পরে খুনিরা ওই অস্ত্র-গুলি তার কাছে ঘটনার দিন সকাল অনুমান ৯টা-সাড়ে ৯টার সময় ফেরত দেয় বলেও সে জানায়।
পরবর্তীতে ভোলাইয়া পুলিশি অভিযানের ভয়ে ওই অস্ত্র-গুলি তার বিশ্বস্ত লোক মনিরের কাছে জমা রাখে। তার তথ্যের ভিত্তিতে বাকলিয়া থানাধীন রাজাখালী রোডস্থ এরশাদের কলোনীর ৮নং কক্ষে অভিযান পরিচালনা করে মো. মনির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ভোলাইয়া ও মনিরের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে মনিরের খাটের নিচ থেকে এসব অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসামী ওয়াসিম ও মুছা এসব অস্ত্র গুলি তার কাছ থেকে নিয়ে যায়। তিনি জানান, অস্ত্র মামলায় দশ বছরে সাজাপ্রাপ্ত ভোলাইয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র আইন, জননিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে সিএমপির বিভিন্ন থানায় ১৬টি মামলা থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ভোলাইয়াকে মিতু হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। মনিরের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। তাকে এই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, অস্ত্রদাতা হিসেবে ভোলাকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কার নির্দেশে হত্যাকা-টি ঘটানো হয়েছে, এ ব্যাপারে জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে হত্যাকা-ে অংশ নেয়া ওয়াসিম ওরফে মোতালেব ও আনোয়ার নামে আরও দুজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। রোববার দুজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে মিতু হত্যায় তাদের দায় স্বীকার করেছে।
গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যাকা-ের পর থেকেই সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। আইজির নির্দেশে ঘটনা তদন্তে পাঁচটি সমন্বিত টিমও গঠন করা হয়।
রোববার ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতারের আগে শুক্রবার রাতে বাবুল আক্তারকে রাজধানীতে তার শ্বশুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মামলার বাদিকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় হত্যাকা-ের বিষয়ে দেশজুড়ে নতুন কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
ওয়াসিম-আনোয়ারের ভাষ্যে গরমিল
মিতু হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ারের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে পুলিশের ভাষ্য ও মূল জবানবন্দির মধ্যে গরমিল রয়েছে। গরমিল রয়েছে দুই আসামির বক্তব্যের মধ্যেও। পুলিশ কমিশনার আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ওয়াসিমের গুলিতে খুন হয়েছেন মিতু। কিন্তু জবানবন্দি থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ওয়াসিমের দাবি, সে নয় মিতুর কপালে গুলি করে কিলিং মিশনের প্রধান মুছা। অন্যদিকে অপর আসামি আনোয়ার বলছে, ওয়াসিমই মিতুকে গুলি করে। তবে তারা দুজনই জানিয়েছেন মুছা তাদের ভাড়া করে এই কিলিং মিশনে আনে। মুছা ছাড়াও তাদের সঙ্গে ছিলেন নবী, কালু, শাহজাহান ও রাশেদ নামের আরও চারজন। তবে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যার মোটিভ পরিষ্কার করেনি ওয়াসিম ওরফে মোতালেব এবং আনোয়ার হোসেন নামে গ্রেফতার হওয়া দুজন।
শিশু মাহিরের কান্নায়ও গলেনি খুনিদের হৃদয়
জবানবন্দিতে ওয়াসিম জানায়, মিতুকে হত্যার আগে ছেলে মাহির নবীর পা ধরে কাঁদতে থাকে, ‘আম্মুকে তোমরা মেরো না, আম্মুকে মেরো না।’ মুছা ধাক্কা দিয়ে মাহিরকে সরিয়ে দেয়। এ সময় নবী পেছন থেকে মিতুকে প্রথম ছুরিকাঘাত করে। মিতু ঘুরে একবার পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ান। এ সময় নবী তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এ সময় ওয়াসিম ফাঁকা গুলি করলে মুছা তার কাছ থেকে পিস্তল কেড়ে নিয়ে মিতুর কপালে গুলি করে। ওয়াসিম জবানবন্দিতে আরও জানিয়েছে, হত্যাকা-ের পর বাসায় গিয়ে টেলিভিশনের স্ক্রলে এসপি বাবুলের স্ত্রী খুনের বিষয়টি দেখতে পায়। তখনই কেবল সে জানতে পারে, তারা যাকে খুন করেছে তিনিই এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী।
ওয়াসিম জানায়, তখনই সে মুছাকে টেলিফোন করেন। মুছা আমাকে বলে, খবরদার কাউকে বলবি না। বললে একেবারে মার্ডার কেসে ঢুকিয়ে দেব। আমি ভয় পেয়ে যাই। কারণ মুছা পুলিশের বড় সোর্স। অন্যদিকে জবানবন্দিতে আনোয়ার বলে, নবী মিতুকে ছুরিকাঘাত করে। মুছা ফাঁকা গুলি করে আর ওয়াসিম তাকে গুলি করে।
ভোলাইয়া-মনির কারাগারে
এদিকে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যা মামলায় এহতেশামুল হক ভোলাইয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেন চৌধুরী তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বাকলিয়া থানার পুলিশ একটি অস্ত্র মামলায় ভোলাইয়া ও তার সহযোগী মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নওরিন আক্তার কাঁকন দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রিমান্ড শুনানির জন্য এখনো তারিখ ধার্য করেননি আদালত। এ তথ্য নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী।
নগরীর বাকলিয়া এলাকা থেকে দুটি অস্ত্র, গুলিসহ মনিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে সোমবার রাতে ভোলাকে গ্রেফতার করা হয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্রসহ মনির গ্রেফতার হয়। বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয় দুজনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ভোলাকে এসপির স্ত্রী মিতু হত্যায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।