Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরো এক নতুন প্রাণী

প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নোবিপ্রবি’র ড. বেলাল হোসেনের কৃতিত্ব
নোয়াখালী ব্যুরো : পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ পানি। এর মাত্র পাঁচ ভাগের অনুসন্ধান সম্ভব হয়েছে। আর বাকি সম্পূর্ণটাই থেকে গেছে অনাবিষ্কৃত। অথচ এ বিশাল জলরাশিতে প্রাণিজগতের নানা প্রজাতির বসবাস রয়েছে। সঠিক গবেষণা আর বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই কেবল পানির তলদেশ থেকে বিভিন্ন আকার ও প্রকৃতির নতুন প্রজাতি খুঁজে আনা সম্ভব। এবার প্রাণিজগতে তেমনি এক নতুন অমেরুদ-ী প্রাণী যোগ হলো। এর নাম ঠরপঃড়ৎরড়ঢ়রংধ নৎঁহবরবহংরং (ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস)। প্রাণীটি আবিষ্কারের দেশ ব্রুনাইয়ের নামনুসারে এ নামকরণ করা হয়।
তবে এ নতুন প্রাণীর আবিষ্কারক ড. বেলাল হোসেন যে একজন বাংলাদেশি সে তথ্য অনেকেরই অজানা। মৎস্য বিজ্ঞানী ড. মো. বেলাল হোসেন। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সামুদ্রিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। দেশের সীমানা পেরিয়ে তিনিই একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পূর্ণ নতুন এ প্রাণীর সন্ধান দিলেন। এ বিজ্ঞানী এশিয়ার ছোট্ট দেশ ব্রুনাইয়ের ‘ব্রুনাই নদীর’ মোহনা থেকে আবিষ্কার করলেন ‘ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস’ নামে নতুন এ প্রাণী। যা আর্থোপোড়া পর্বের অসঢ়যরঢ়ড়ফধ (অ্যামফিপোড়া) বর্গের এবং ঠরপঃড়ৎরড়ঢ়রংধ ভিক্টোরিওপিসা গণভূক্ত প্রজাতি। দেখতে অনেকটা চিংড়ি সদৃশ। স্বচ্ছ বর্ণের ক্ষুদ্র প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ১০.৮ মিমি। অন্যসকল অসঢ়যরঢ়ড়ফং (অ্যামফিপড়স) প্রাণীর মতো তিন খ-ে বিভক্ত। এর দেহের দুই পাশে চৌদ্দ জোড়া পা রয়েছে। যেগুলোকে ‘ওয়াকিং লেগস’ বলে। এগুলো হাঁটা ছাড়াও সন্তরণ, খাবার সংগ্রহ ও নানাবিধ জৈবিক কাজে ব্যবহৃত হয়। ব্রুনাইয়ের উপকূলবর্তী অঞ্চলের খাদ্যচক্রে এরা অন্যতম উপাদান।
ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার ফর মেরিন স্পেসিসের দেয়া তথ্যমতে, এ পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার অ্যামফিপড়স প্রাণী আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু ড. বেলালের নতুন এ প্রজাতি আবিষ্কারের আগে ভিক্টোরিওপিসা গণভূক্ত প্রজাতি ছিল মাত্র তিনটি।  ড. বেলাল বলেন, ২০১৫ সালে অষ্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইন্সটিটিউট এ  পোস্টডক্টরাল গবেষণাকালীন বিশিষ্ট অ্যামফিপড়স টাক্সোনোমিস্ট (অসঢ়যরঢ়ড়ফ ঃধীড়হড়সরংঃ)  ড. লরেন হগস-সহ এ প্রজাতিটি শনাক্ত করেন। পরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য এর গবেষণার ফলাফল ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘জুটাস্কা’ (তড়ড়ঃধীধ) তে পাঠানো হয়। আর ফলাফল চলতি জুন মাসের  প্রথম দিকে প্রকাশিত হয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। এই প্রাণীটির শনাক্তকারী  বৈশিষ্ট্য হলো-ভিক্টোরিওপিসা গণভুক্ত এর শুধু এক জোড়া চোখ রয়েছে, মাথায় পার্শ্বীয় ‘সেফালিক লভ’ (পবঢ়যধষরপ ষড়নব) নেই।  কিন্তু শেষ প্রান্তে সরু সিটা রয়েছে। এছাড়া এপিমেরা নামক খ-ের পশ্চাৎবক্ষীয় অংশে ছোট ও সূক্ষ্ম কাঁটা  রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে খ্যাতিমান এ বিজ্ঞানী নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা হাতিয়া থেকে ঘবঢ়যঃুং নধহমষধফবংযর  (নেফটাইস বাংলাদেশি) নামে এনিলিডা পর্বের অন্য একটি পলিকীট আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তার আবিষ্কৃত ওই প্রাণীটির গ্রুপ নির্ণয়ে গত দুইশ বছর যাবত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও ফলাফল আসে শূন্য। কিন্তু সর্বশেষ যেহেতু বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা থেকে নতুন ওই প্রাণীর সন্ধান মিলেছে তাই বাংলাদেশের নামনুসারে এর নামকরণ করা হয়। ড. বেলাল জানান, এ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় দশ হাজার প্রজাতির পলিকীট আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৯ প্রজাতির তালিকা পাওয়া যায়। আমাদের সামুদ্রিক অঞ্চল অত্যন্ত জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। গবেষণার অপ্রতুলতার জন্য আমরা এখনও আমাদের জীববৈচিত্রের তালিকা তৈরি করতে পারিনি। এমনও হতে পারে যে, জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ও মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি আমাদের আবিষ্কারের আগেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে।
ড. বেলাল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার কেন্দুয়া গ্রামের মৃত আবদুস সোবহান ভূঁইয়া ও দেলোয়ারা বেগমের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স এন্ড ফিশারিজ বিভাগে স্নাতক, যুক্তরাজ্যের হাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ব্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সম্প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আরো এক নতুন প্রাণী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ