পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) থেকে মুজিবুর রহমান ভুইয়া ঃ একসময় পাহাড়ের ঢালুতে আর খালের পাড়ে বনজ ফল লটকন চোখে পড়লেও সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে দিনের পর দিন ব্যাপক হারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি’র ফল লটকন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের সমতলের বিভিন্ন জেলায় লটকন’র ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে আম-লিচু চাষাবাদ হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ থেকে পিছিয়ে আছে ‘লটকন’। আম-লিচু চাষে পরিচর্চাসহ মোটা অঙ্কের পুঁজি লাগলেও লটকন ফলে কোনো পুঁজি বা পরিচর্চার প্রয়োজন হয় না। ফলে কম পরিশ্রম আর পুঁজিতে অধিক আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে ‘লটকন’ ফল।
স্থানীয় বাঙালিরা লটকন নামে চিনলেও চাকমা ভাষায় ‘পচিমগুল’, মারমা ভাষায় ‘ক্যানাইজুসি’, ত্রিপুরা ভাষায় ‘খুচমাই’ নামে পরিচিত সুমিষ্ট ‘লটকন’। ইংরেজিতে ইঁৎসবংব মৎধঢ়ব নামে পরিচিত লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম ইধপপধঁৎবধ ৎধসরভষড়ৎধ ।
জুন মাসের মাঝামাঝি পরিপক্বতা লাভ করতে শুরু করে লটকন। একই সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে ফলটি। এটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল কৃষি পণ্য। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায় ‘লটকন’ ফল। টক-মিষ্টির লটকন ছোট-বড় সবার কাছেই প্রিয়।
পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রতিটি জনপদেই অপরিকল্পিতভাবে কম-বেশি লটকনের উৎপাদন হচ্ছে। লটকন চাষের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের মাটি অনেক বেশি উপযোগী বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তাদের মতে থোকা থোকা সোনালি রংয়ের এ ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি দেখতেও সুন্দর।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন জনপদে অপরিকল্পিতভাবে স্বল্প-পরিসরে আর ব্যক্তি উদ্যোগে লটকনের চাষাবাদ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। বর্তমানে এটি স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৬০/৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনা আর পাহাড়ের ঢালুতে গাছে গাছে ঝুলছে লটকনের সোনালি রঙয়ের থোকা। মাটিরাঙ্গার নবীনগর গ্রামের মো: চান মিয়া’র বাড়ির পাশেই পাহাড়ের ঢালুতে মাঝারি আকারের প্রায় অর্ধ-শতাধিক লটকন গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে লটকনের ব্যাপক ফলন হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর লটকনের ফলন কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ফলন কম হলেও বিনা প্ররিশ্রমে তা খুব কম নয়। তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে স্থানীয় পাইকাররা লটকন ফল কিনতে আসতে শুরু করেছেন। দাম-দরও জানতে চাইছেন। এক একটি গাছের লটকন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
কথা হয় দুর্গম পাহাড়ি পাড়া তৈকাতাং থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে লটকন ফল বিক্রি করতে আসা অনিল বিকাশ ত্রিপুরার সাথে। তার বাড়ির আশপাশে অন্তত ৩০টি গাছে লটকন ফল ধরেছে দাবি করে বলেন, এ বছর লটকন ফল বিক্রি থেকে তিন লাখ টাকা আয় করবেন। স্থানীয় বাজারমূল্যেও সন্তুষ্ট লটকন চাষী অনিল বিকাশ ত্রিপুরা।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো; শাহ আলম মিযা জানান, মাটিরাঙ্গার প্রায় সব এলাকাতেই ব্যক্তি উদ্যোগে কম-বেশি লটকন চাষ হচ্ছে। লটকনের ফলনও ভালো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিক পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে বলেও মনে করেন তিনি।
সরকারিভাবে ‘লটকন’ ফলকে পরিচিত করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় চাষীরা বলেন, এখনও আমাদেও দেশের অনেক জেলায় এ ফলটির সঙ্গে মানুষের পরিচয় হয়নি। সরকারি উদ্যোগে দেশ-বিদেশে টক-মিষ্টি’র সুস্বাদু এই ফলটির গুণাগুণ তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করলে হয়তো বিশ্ববাজারে নিজের জায়গা করে নিবে লটকন ফল। আর বিদেশে রপ্তানি করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে পারে পাহাড়ি এ জনপদের অর্থনীতির চাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।