পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : ‘স্যার, পথ চিনি না। ভাড়াও জানি না। আপনি পথ দেখিয়ে নিয়েন। ভাড়া যা হয় তা দিয়েন। আমি ঢাকায় নতুন তো, তাই একটু সমস্যা।’ মালিবাগ চৌধুরী পাড়া থেকে ইত্তেফাক মোড়ে যাবে কি না জানতে চাইলে ঈদ মৌসুমে ঢাকায় রিকশা চালাতে আসা রংপুর সদর থানার বাসিন্দা মোতালেব এ কথা বলেন। তিনি ঢাকায় এসেছেন ৪ দিন হয়েছে। রিকশা চালাচ্ছেন এই ক’দিন। ঈদুর ফিতরের দু-এক দিন আগ পর্যন্ত রিকশা চালাবেন বলে জানান তিনি। তারপরই বাড়ির পথ ধরবেন। গত ৪ দিনে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা রোজগার করেছেন। আগামী ৭-৮ দিনে আরও ১৪-১৫ হাজার টাকা রোজগার করবেন বলে আশা করেন মোতালেব। প্রতিবছরই রাজধানীতে ঈদের এক মাস আগে থেকে দেখা যায় এমন মৌসুমি রিকশাচালকদের। এ সময়ে খেত-খামারে কাজ না থাকায় বাড়তি রোজগারের আশাতেই ঢাকায় আসেন তারা। আর ঈদের আগে তা বেশ ভালোই হয় বলে জানান বাইরের জেলা থেকে আসা এমন কয়েকজন রিকশাচালক।
এমনিতেই রাজধানীজুড়ে শুধু রিকশা আর রিকশা। অভিজাত এলাকা, ভিআইপিসহ সব সড়ক, সংলগ্ন মহাসড়ক, অলিগলিÑসবই রিকশার দখল। এসব রিকশার ৯০ ভাগ অবৈধ। নগরীতে যানজটের প্রধান কারণ রিকশা। প্রতিদিনই শত শত নতুন রিকশা ঢাকায় নামছে। ঈদকে সামনে রেখে এই প্রবণতা বেড়েছে কয়েক গুণ। যানজটের প্রধান কারণ রিকশা উচ্ছেদের দায় কেউ নিতে চায় না। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ। আবার সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী করতে অবৈধ রিকশা উচ্ছেদের দায়িত্ব পুলিশের। তবে সবকিছুর মুলে রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ইন্ধন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকার সমর্থক রাজনৈতিক দলের নামে রিকশার লাখ লাখ প্লেট ছাড়া হচ্ছে। এসব কারণে রিকশা নিয়ন্ত্রণতো দুরের থাক, এর চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রশাসন।
কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরে একটি রিকশার গ্যারেজের ম্যানেজার মোহাম্মদ সোবহান শেখ। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে ঢাকার বাইরে থেকে প্রচুর রিকশাচালক আসেন। বেশি আসেন উত্তরবঙ্গ থেকে। তারা মূলত ঈদের খরচ মেটাতেই মৌসুমি এই পেশা বেছে নেন। তাদের জন্য গ্যারেজের মালিকেরাও মেসের ব্যবস্থা করেন। সোবহান বলেন, ঢাকায় আইস্যা এঁরা ভাবে সিঙ্গাপুর আইছে। গেরামে খেতে বা মাটির রাস্তায় ধানের বস্তা টাইন্যা এঁরার অভ্যাস। এহানকার পিচের রাস্তায় তো টাইন্যা গাড়ি চালায়। তয় টেরাফিকের (ট্রাফিকের) নিয়ম বোঝে না।
তবে এসব রিকশাচালক একটি সাধারণ সমস্যায় পড়েন। সেটি হলো ঢাকার অলিগলি না চেনা। সে ক্ষেত্রে যাত্রীরাই তাদের রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যান বলে জানালেন পাটগ্রামের মোহাম্মদ হামিদুল ইসলাম। অভাবের তাড়নায় চার দিন হলো ঢাকায় এসেছেন তিনি। এবারই প্রথম রাজধানীতে রিকশা চালাচ্ছেন। ভাড়া নেওয়ার আগেই যাত্রীদের বলছেন রাস্তা চিনিয়ে দিতে। যাত্রীরাও আপত্তি করছেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে নতুন করে আর কোনো রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হবে না। যেসব রিকশার বৈধ লাইসেন্স নেই সেগুলোকে ডাম্পিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজধানীতে বৈধভাবে চলাচলকারী রিকশাগুলো তিন বছর অন্তর লাইসেন্স নবায়ন করে। এ খাত থেকে বছরে এক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার আনুমানিক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এরমধ্যে নিবন্ধিত রিকশার পরিমাণ মাত্র ৭৯ হাজার ৫৪৭টি। বাকি রিকশাগুলোর সবাই অবৈধ। বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতির নামে রাজধানী দাপিয়ে বেড়ায় এসব অবৈধ রিকশা।
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধিত রিকশা তিন বছর পর পর নবায়ন করতে হয়। একটি রিকশার নিবন্ধন নবায়নয় ফি সবমিলিয়ে ৩৩০ টাকা। এরমধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি ১০০ টাকা। বাকি টাকা নেওয়া হয় রিকশার মেরামত ব্যয়ের অংশ হিসেবে।
এ নিবন্ধন নবায়ন থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব পায় ১ কোটি টাকা। সে হিসেবে রাজধানীতে চলাচল করা সব রিকশা নিবন্ধিত হলে এ খাত থেকে সরকারের বছরে আরও প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব পেতো। একই সঙ্গে এগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব কর্মী বাহিনীর একটা অংশের বেতন-ভাতা এই রাজস্ব আয় থেকেই দেওয়া সম্ভব।
নতুন রিকশার লাইসেন্স প্রদান করা না হলেও রাজধানীতে অবৈধ রিকশার সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। আর নতুন নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ থাকায় দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারি কোনো সংস্থার কাছে রাজধানীতে কতগুলো অনিবন্ধিত রিকশা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
সিটি কর্পোরেশন বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধন না নিলেও ২৫টি বেসরকারি ও রাজনৈতিক সংগঠনের অধীনে চলছে অবৈধ রিকশা। সংগঠনগুলো থেকে সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে মালিকদের রাজধানীতে নতুন রিকশা নামাতে হচ্ছে।
রাজধানীতে ছোট-বড় ২৫টি সংগঠনের মধ্যে অনিবন্ধিত রিকশার নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রধানত, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ ও বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগ। তবে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের অধীনে কতগুলো রিকশা আছে তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই খোদ সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের।
রিকশা মালিক ও চালকরা সরকারি কোনো সংস্থা বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে নিবন্ধন না পেয়ে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে থাকে। নির্ধারিত ফি দিয়ে এই সমিতি থেকে বিক্রি করা হয় সিরিয়াল নম্বরসংবলিত নিবন্ধন কার্ড। আর এ সব কার্ড পেছনে লাগিয়েই চলছে অনিবন্ধিত রিকশাগুলো।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি রাস্তা ও স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ভাড়ার ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের তেমন একটি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় রিকশা চালকরা তাদের ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছে। ফলে যাত্রী ও রিকশা চালকদের মধ্যে বাক বিতন্ডা লেগেই থাকে। এমনকি মাঝে মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনাও ঘটছে।
কিছু দিন আগেও রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ভাড়া ছিলো ১৫ টাকা। অথচ সেখানে এখন আদায় করা হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। দৈনিক বাংলা থেকে বিজয় নগর পর্যন্ত ১৫ টাকায় যাওয়া যেতো। সেখানে এখন আদায় করা হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। বাংলা মটর থেকে মগবাজার পর্যন্ত ভাড়া ছিলো মাত্র ১০ টাকা। অথচ এখন ১০টাকার কোনো ভাড়া নেই বলেই সাপ জানিয়ে দেয় রিকশা চালকরা। এ নিয়ে রিকশা চালকদেরকে কোনো কারণ জিজ্ঞাস করা যায় না। তাদের এক কথার উত্তর, ‘টাকা দিয়েই রাস্তায় টিকে আছি। বেশি ভাড়া নেব না কেন?’
সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও বলছেন, এখন পর্যন্ত রিকশা ভাড়ার ব্যাপারে তাদের কোনো নিয়মনীতি নেই।
বেসরকারি এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ রিকশার ওপর নির্ভর করে চলছে। এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে অবৈধ রিকশা চালক, মালিক ও সিটি কর্পোরেশনের অসাধু কর্মকর্তারা।
ঢাকা মোটর চালিত রিকশা মালিক চালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ফারুক ভান্ডারী বলেন, ১৯৮৬ সালের পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে অযান্ত্রিক পরিবহনের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রয়েছে। ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর রাজধানীতে ৩৫ হাজার রিকশা ও আট হাজার ভ্যানের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা এখন পর্যন্ত কার্যকর হচ্ছে না। তিনি প্রক্রিয়াধীন রিকশাগুলোর লাইসেন্স দেয়ার জোর দাবি জানান।
রাজধানীতে চলাচলকারী বৈধ ও অবৈধ চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা আছে এমন চালক একশ’তে একজনও মিলবে না। অনেকের হাতে লাইসেন্স থাকলেও তা আবার বৈধ নয়। অবার অনেকই জানেন না কীভাবে লাইসেন্স পাওয়া যাবে। এছাড়া অনেকেই লাইসেন্স না পেয়ে পুলিশের ভয়ে অলিগলিতে সীমাবদ্ধ থাকেন। তারা সচারচর রাস্তায় আসেন না। কারণ পুলিশ ধরলেই জরিমানা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।