পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : খুনিরা চিহ্নিত-পুলিশ এমন দাবি করলেও কারা কী উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করেছে তার উত্তর মিলছে না। এ কারণে আলোচিত এই হত্যা মামলার রহস্যের জটও খুলছে না। পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় মামলার রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আড়ালেই থেকে যাচ্ছে এই ঘটনার নেপথ্য নায়কেরা। মিতুর খুনিরা ছিল ভাড়াটে এবং সংঘবদ্ধ খুনিচক্রের ভয়ংকর সদস্য। এই খুনিদের কে ভাড়া করেছে, সে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। পুলিশ বলছে খুনি চক্রের সদস্য ছিল ৭ জন। তাদের গ্যাং লিডার ছিল মুছা। অর্থের বিনিময়েই মিতুকে খুন করেছে ওই ঘাতক চক্র। ঘাতকদের অর্থও জোগান দেয় মুছা। খুনের আগের রাতে মুছার বাড়িতে বসে তৈরি হয় হত্যার ছক।
নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে হত্যা মিশনের নেতৃত্ব দেয় মুছা। হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘটনাস্থলে যায় মুছা, পেছনে বসা ছিল ওয়াসিম। আগে থেকে সেখানে অবস্থান করে আনোয়ার। ওয়াসিম মিতুর মাথায় গুলি করার পর আনোয়ার কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। খুনের পর মুছা ওয়াসিম ও আনোয়ারকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বাকলিয়ার কালামিয়ার বাজারে চলে যায়। আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেও ঘটনার এমন বর্ণনা দিয়েছে ওয়াসিম ও আনোয়ার।
হত্যা পরিকল্পনায় মুছার সাথে ছিল স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ভোলা। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি অস্ত্রও সরবরাহ করে ভোলা। মুছা কার নির্দেশে কেন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করলো তার কোনো জবাব মিলছে না। কার নির্দেশে হত্যা মিশন সে বিষয়টিও এখনও অজানা। এসব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আলোচিত এই হত্যা মামলার রহস্যের জটও খুলবে না।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, খুনিরা ভাড়াটে এটা নিশ্চিত। তবে কে বা কারা তাদের ভাড়া করেছে এবং হত্যার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ পর্যন্ত তদন্তে ও দুই আসামীর জবানবন্দিতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।
গত ৫ জুন সকালে শিশুপুত্রকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন মিতু। পরদিন এই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করা হয়। হত্যাকা-ের শুরু থেকে এতদিন নানা বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করে পুলিশ। খুনের একুশ দিনের মাথায় রোববার বিকালে দুজনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার প্রেসব্রিফিং করে জানান, খুনি চক্রের ৭ সদস্যের দুজন তারা। তারা হচ্ছেন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭) ও আনোয়ার হোসেন (২৮)।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ওয়াসিম মিতুকে গুলি করে। সেখানে তার সহযোগী হিসাবে উপস্থিত ছিল আনোয়ার। ওয়াসিম রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর গলাচিপা এলাকার আবদুল নবীর ছেলে ও আনোয়ার ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙ্গামাটিয়ার সামশুল আলমের ছেলে। তারা দুজনই হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। রোববার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওয়াসিম ও রাত ৮টা থেকে ৯টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত আনোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওয়াসিমের ১৪ পাতা ও আনোয়ারের ১০ পাতা জবানবন্দি রেকর্ড করেন মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুই আসামি হত্যাকা-ে তারাসহ আর কারা জড়িত ছিল তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন। তারা খুনের বর্ণনাও দেয়। তাদের জবানবন্দিতে এই ঘটনায় জড়িত মুছা, ভোলা, নবী, রাশেদ ও শাহজাহানের নাম আসে।
ঘটনার আগের রাতে ৭ জন মুছার বাসায় মিটিং করে। মিতু জঙ্গিদের অর্থ সহায়তা করে, তাই তাকে মেরে ফেলতে হবে উল্লেখ করে তাকে হত্যা করার মিশন দেয় বলে মুছা ও ভোলা অন্যদের জানান। তবে, কে এই নির্দেশদাতা তারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। মুছা এসব বিষয় জানে বলে উল্লেখ করা হয়। মিতুকে হত্যা করতে পারলে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখানো হয়। এ সময় একটি রিভলবার ও একটি পিস্তল সরবরাহ করা হয়। এ দুটি অস্ত্র ওয়াসিম ও আনোয়ার গ্রহণ করে। রাত গভীর হলে ভোলা রাজাখালীর নিজ বাসায় চলে যান। সকালে ভোলা রিকশাযোগে প্রবর্তক মোড়ে আসে। মুসা ও অন্য একজন মোটরসাইকেলে প্রবর্তক আসে। বাকিরা একটি সিএনজি অটোরিকশায় প্রবর্তক মোড়ে আসে।
এর আগে কালামিয়া বাজারে মুসা সিএনজি ভাড়া বাবদ ৫শ টাকা দেয় ওয়াসিমদের। এভাবে ভোরে ৭ জন প্রবর্তক মোড়ে এসে জড়ো হয়। এরপর তারা হেঁটে গোলপাহাড় এলাকায় পৌঁছে। ওয়াসিম গোলপাহাড় মন্দিরের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মিতু বের হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে। আর মুছা মোটরসাইকেল নিয়ে জিইসির মোড়ে অবস্থান নেয়। ওয়েলফুডের সামনে অবস্থান নেয় আনোয়ার। অন্যরাও গোলপাহাড় থেকে জিইসি মোড়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। যাতে হামলাকারীরা আক্রান্ত হলে অন্যরা ছুটে আসার পরিকল্পনা নেয়।
এরপর মিতু গলি থেকে বের হওয়ার সময় আনোয়ার ও মুছাকে মোবাইল ফোনে কথা বলে মিতুকে শনাক্ত করে দেয়। এরপর মুছা বিপরীত দিক থেকে মোটরসাইকেলে মিতুকে ধাক্কা দেয়। তৎক্ষণাৎ ওয়াসিম গুলি করে মিতুকে। আর আনোয়ার ছুরি দিয়ে কোপায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে তিনজন বাকলিয়ার কালামিয়া বাজারে চলে যায়। সেখানে ওয়াসিমকে ৩ হাজার ও অন্যদের দুই হাজার টাকা করে দেয়। কালামিয়া বাজার পৌঁছার পর রিভলবার ও পিস্তল ভোলা নিয়ে যায়।
জানা গেছে, হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র এখন পুলিশের হাতে। হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া বাকি ৫ জনও পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে পুলিশ কমিশনার সরাসরি বিষটি অস্বীকার করে বলেছেন, ওয়াসিম ও আনোয়ার ছাড়া কেউ পুলিশ হেফাজতে নেই।
এদিকে খুনিচক্রের সদস্য হিসেবে যাদের নাম এসেছে তারা চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তাদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে মুছা সিকদারের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের রানীরহাটে। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত। দীর্ঘদিন সে বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবেও কাজ করেছে। মহানগরীর বাকলিয়ায় বসে ছিনতাই, চাঁদাবাজির পাশাপাশি উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করে সে। হানিফুল হক ভোলার বিরুদ্ধেও খুন, চাঁদাবাজির অসংখ্য মামলা রয়েছে। বাকলিয়া এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ে জড়িত সে। এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও মিতু হত্যার দায় স্বীকারকারী আনোয়ার হোসেন রাঙ্গুনিয়ার দুর্ধর্ষ কিলার। তার সহযোগী মো. ওয়াসিমের হাত ধরেই অপরাধ জগতে আসে সে। ২০১৪ সালে রাঙ্গুনিয়া রানীরহাট বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার খুনের সাথে জড়িত সে। সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনের সহিংসতায় ওই এলাকায় মো. মহসিন নামে এক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায়ও জড়িত সে। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে চাঁদাবাজি করত আনোয়ার।
আন্ডারগ্রাউন্ডের আরেক ভয়ংকর খুনি ওয়াসিম। তার বিরুদ্ধে উত্তর চট্টগ্রামে একাধিক খুনের অভিযোগ রয়েছে। দুটি হত্যা, একটি অস্ত্র ও দুটি ডাকাতি মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচার চলছে। রাঙ্গুনিয়ার অপর সন্ত্রাসী মো. রাশেদও মিতু হত্যায় জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধেও অসংখ্য মামলা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হানিফুল হক ভোলা এবং কিলিং স্কোয়াডের অপর সদস্য আবদুল নবীও অপরাধ জগতের ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তাদের দু’জনের বিরুদ্ধেই অসংখ্য মামলা রয়েছে। মিতুকে হত্যার জন্য বাছাই করা এসব কিলারদের সমন্বয়ে কিলিং স্কোয়াড গঠন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।