পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত গণভোটের পর বর্ণবাদী নিপীড়ন এবং ঘৃণাবিদ্বেষ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গণভোটের পর এধরনের শতাধিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে এবং অধিকাংশ সময় ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ঘৃণা প্রকাশ করেছে হামলাকারীরা। গণভোটের মাধ্যমে ব্রিটেনের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আর ইউরোপিয় ইউনিয়নে থাকতে চায় না। ভোটের কিছু দিন আগেও অনেকে ভেবেছিলেন ইউ-পন্থী শিবির সামান্য ভোটের ব্যবধানে জিতে যাবে। সেটি হয়নি। বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজার টলোমলো। সেনসেক্সে ধস নেমেছে। অর্থাৎ, আশঙ্কা ঘনীভূত। দেখা যাচ্ছে, নানামুখী ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে কট্টর নব্য-নাৎসীবাদী গোষ্ঠীর প্রচারণাকে সঠিক মনে করেছে ব্রিটেনের বৃহত্তর জনগণ। এই গণভোট ও ফলাফল এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে কঠিন অভিবাসী সমস্যা মোকাবেলা করছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদী, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলে সম্ভাব্য আরও কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা জানিয়ে বিশ্ব নেতারা নানা বক্তব্য-বিশ্লেষণ করেছেন।
ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে জাতি-গোষ্ঠীগত বিভিন্ন সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে কখনো বেশি কখনো কম অবস্থায় ছিলো। ইইউ জোট ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপে ওই সব সমস্যা মোটামুটিভাবে মোকাবেলা করা গেলেও ইইউ জোট থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলে তা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, ইইউ ছাড়লে ব্রিটেনের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি পাউন্ড। ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী অসবোর্নের ভাষায় এটি এক কৃষ্ণগহ্বর যা পূরণ করা কার্যত অসম্ভব। তখন জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয় হ্রাস ও কর বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প কোন উপায় থাকবে না। এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী। ব্রিটেনের ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সরাসরি ইইউ বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত, আর ইইউ থেকে প্রতিবছর গড়ে ২৪ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ হয় ব্রিটেনে। ইইউ থেকে ব্রিটেন বের হলে দেশটির অর্থনীতিকে প্রায় ১০ হাজার কোটি ইউরোর ধাক্কা সামলাতে হবে বলে কনফেডারেশন্স অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রি সাবধান করেছে। আর এই ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে যে অসন্তোষ আর অভিবাসীদের ওপরে যে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ চাপ তৈরি হবে, তা অনেকের কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলারপন্থীদের ন্যায় আচরণ ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ইউরোপের বর্ণিল জাতিগত মিশ্রণ থেকে বেরিয়ে এসে শুধুমাত্র ব্রিটিশ নাগরিকদের দেশ তৈরির কট্টর প্রচারণাকে বেছে নিতে যাচ্ছে ব্রিটেন। ইইউবিরোধী নেতারা বলেছেন কঠোর ইমিগ্রেশন আইনের কথা। তারা চান ব্রিটেনে ইমিগ্রেন্টের সংখ্যা ১৯৮০-এর আগে-পরের মতো নামিয়ে আনতে, যা বছরে প্রায় ৪০ হাজারের মতো। গণভোটে ব্রিটেন ইইউকে ছাড়লে ইইউ নাগরিকদের জন্যও পয়েন্ট বেইজড সিস্টেম চালুর কথাও বলেছে তারা। ডেভিড ক্যামেরনও অবশ্য ইইউতে থেকেই ব্রিটেনে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সম্পাদিত লিসবন ট্রিয়েটির ফলে ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করলেও ইইউ ইমিগ্রেন্টদের ফেরত পাঠাতে পারবে না। আবার অনেক ব্রিটিশ নাগরিক ইইউয়ের অনেক দেশে কর্মরত ও ব্যবসা করছে। যারা ইইউ থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে (লিভ ক্যাম্পেইন) প্রচার চালিয়েছিলেন তারাও বলছেন না যে, গণভোটের ফলাফল ইইউর বিপক্ষে যাওয়া মাত্রই তারা ইইউ ইমিগ্রেন্টদের বের করে দেবেন। কিন্তু সামনের দিনগুলিতে বিষয়টি একটি ‘কট্টর ও নাৎসীবাদী’ রুপ নিতে পারে। বৈশ্বিক অভিবাসী অস্থিরতা ও আঞ্চলিক নানা সংঘাতের মুখে ব্রিটেন ইইউ ছেড়ে শুধুমাত্র নিজেদের কথা ভেবে যে পথে হাঁটছে তা অনেকটাই মিলে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অ্যাডলফ হিটলারের চিন্তার সঙ্গে। ইইউ দেশগুলোতে যেমন বহু ব্রিটিশ আছে তেমনি ব্রিটেনেও অনেক অ-ব্রিটিশ ইইউ নাগরিক বাস করে। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে তাদের অবাধ চলাচলের ওই সুযোগও আর থাকবে না। যুক্তরাজ্য নতুন করে এ ব্যাপারে নতুন করে চুক্তি করতে চাইলেও অভিবাসন সমস্যার কারণে বিশেষ করে তুলনামূলক দুর্বল অর্থনীতির দেশ পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া থেকে অভিবাসীদের আগমন সমস্যার কারণে ব্রিটিশ সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা না করার জন্য চাপে পড়বে। তাছাড়া, অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা হারালে ব্রিটেনে ঢোকা কিংবা ব্রিটেনের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে মানুষেরা পাসপোর্ট এবং রেসিডেন্সির নিয়ম-কানুন নিয়ে উদ্বেগে পড়বে। ফলে তারা ব্রিটেনে থাকার এবং কাজ করার অধিকারও হারাতে পারে এবং তাদেরকে দেশে ফেরত যেতে হতে পারে। ফলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। ইইউ ত্যাগে যুক্তরাজ্য মৌলিক দিক থেকে আমূলভাবে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। চারটি ‘দেশ’ (ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড)-এর সমন্বয়ে ব্রিটেনকে বলা হয় ‘ইউনাইটেড কিংডম’। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেলে এই একতা আর দীর্ঘদিন নাও থাকতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, স্কটল্যান্ডের নাগরিকরা ইইউয়ে থাকাকেই সমর্থন করে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।