Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সেরে উঠছেন ‘বৃক্ষ-মানব’

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সেরে উঠছেন ‘বৃক্ষ-মানব’ বলে পরিচিত আবুল বাজানদার। গত চার মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
হাত-পায়ে শেকড়ের মতো গজিয়ে উঠা বিরল এক রোগের চিকিৎসা দিতে তাকে গত চার মাসে দফায় দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে বিরল এ রোগে ভুগতে থাকা আবুল বাজানদারকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তখন এ নিয়ে অনেকেরই ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আবুল বাজানদারের দু’হাত এবং দু’পা মোটা ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো।
চার মাস আগে আবুল বাজানদারকে যখন এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তার চোখে-মুখে ছিল উদ্বেগ আর আতংকের ছাপ। কিন্তু চার মাস পরে সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠে এখন তিনি আত্মবিশ্বাসী। নিজের পরিপূর্ণ সুস্থতার বিষয়ে বাজানদার এখন আশাবাদী।
বাজানদার বলেন, ওনারা (ডাক্তাররা) সবাই আশা করছেন যে, আল্লাহর রহমতে আমি আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে চলতে-ফিরতে পারবো। গত চার মাসে আবুল বাজনদারের হাতে এবং পায়ে মোট ছয়টি অপারেশন হয়েছে। এখন মোটা ব্যান্ডেজ খুলে তাকে নিয়মিত ড্রেসিং করানো হয়। দফায়-দফায় অস্ত্রোপচার করা হলেও তার হাত-পা এখনো কর্মক্ষম হয়নি।
খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে তাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে আবুল বাজানদারের বাবা-মায়ের সাথে কথা বললে জানা যায়, ছেলের চিকিৎসার বিষয়টি এক সময়ে কল্পনাও করতে পারেননি আবুল বাজানদারের মা আমেনা বিবি। ছেলের সুস্থতার আশায় মাসের পর মাস তিনি হাসপাতালে কাটাচ্ছেন। আমেনা বিবি বলছিলেন, আমি এ ছেলে নিয়ে দশটি বছর মানুষের কাছ থিকি সাহায্য নিয়ে পথে পথে বেড়াইছি। সবাই আশা দেচ্ছে যে, তোমার ছেলে সুস্থ হইয়ে যাবে। আমেনা বিবি জানান, ডাক্তাররা ধারণা দিয়েছেন যে, প্রায় বছর খানেক হাসপাতালে থাকতে হবে।
আবুল বাজনদারের হাতে-পায়ে শিকড় গজিয়ে উঠাকে ‘ট্রিম্যান সিনড্রোম’ বলে বর্ণনা করেছিলেন চিকিৎসকরা। বিরল এ রোগ পৃথিবীতে এর আগে মাত্র দু’একজনের হয়েছিল বলে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন।
গত চার মাসে দফায়-দফায় অস্ত্রোপচার করা হলেও চিকিৎসায় অগ্রগতি কতটা হয়েছে? শেকড় কি আবার উঠবে? এ সম্পর্কে আবুল বাজানদারের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণকারী চিকিৎসক দলের অন্যতম ডা. সামন্ত লাল সেন মনে করেন অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত ভালোই হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রথম দিকে তো তার আঙুলগুলো আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে পারতাম না। কোনটা বুড়ো আঙুল, কানিয়া আঙুল। অপারেশনের মাধ্যমে আমরা তার আঙুলগুলো আলাদা করতে পেরেছি।
তিনি আশা করেন, বাজনদারের হাতে আরো কয়েকবার অস্ত্রোপচার করলে সে হাত দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে, নিজের কাপড় পড়তে পারবে এবং বাচ্চাকে কোলে নিতে পারবে। কিন্তু অস্ত্রোপচার করে শেকড়ের মতো জিনিসগুলো অপসারণ করা হলেও সেটি কি আবারো ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে?
এ বিষয়টি নিয়ে ডাক্তাররা অবশ্য চিন্তিত। তবে এখনো পর্যন্ত অগ্রগতি ভালো বলে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা। ইতোমধ্যে বাজানদার ও পরিবারের সদস্যদের শরীরের টিস্যুসহ কয়েকটি নমুনা পরীক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে। আমেরিকা থেকে সেগুলোকে পরীক্ষার জন্য আবার চীনে পাঠানো হয়েছে।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হতে চান, আবুল বাজনদারের হাতে-পায়ে গজিয়ে উঠা শেকড়ের মতো বিষয়গুলো বাহ্যিক নাকি শরীরের কোষ এবং রক্তে এর অস্তিত্ব আছে।
সামন্ত লাল সেন জানান, যদি তারা (বিদেশি পরীক্ষাগারে) দেখেন যে, এটা আবারো হতে পারে, তাহলে কী করতে হবে সে বিষয়ে তারা পরামর্শ দেবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবুল বাজানদারের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তাকে যদি সুস্থ করা যায়, তাহলে বিষয়টি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হবে বলে আশা করেন চিকিৎসকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেরে উঠছেন ‘বৃক্ষ-মানব’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ