Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইইউ-যুক্তরাজ্যের সম্পর্কচ্ছেদ বাংলাদেশের রফতানি খাতে ক্ষতির আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৫ পিএম, ২৬ জুন, ২০১৬

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : বাংলাদেশ থেকে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হয় তার ৫৫ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে। এককভাবে পণ্য রফতানির তৃতীয় সর্বোচ্চ বাজার যুক্তরাজ্যে (১২ শতাংশ)। বাংলাদেশ অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি করতে পারে। তাই ব্রিটেনবাসী ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। তাদের আশঙ্কা, ইউনিয়নের এ ভাঙন তাদেও কোনোপক্ষের নীতিমালায় সামান্য পরিবর্তন আনলেও বাংলাদেশের রফতানি খাতে ক্ষতিগ্রস্ত আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে এই বিচ্ছেদের ফলে ইতোমধ্যে ইউরোর মান কমেছে। বাংলাদেশে আগে রফতানি করে যেখানে ১১৮ টাকা পেত সেখানে এখন ৭০ টাকা পাচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের ব্যবসায়ীদের তিন ট্রিলিয়নের ডলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গণভোটের ফল প্রকাশের পর পাউন্ডের ১০ শতাংশ দরপতনেই বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, রফতানিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করে আগে থেকেই নতুন একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই কমিটি ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পঠিত হবে। এই কমিটি পদক্ষেপ নেবে কীভাবে রফতানি অবস্থান আরো করা যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল মন্ত্রণালয়ে বলেছেন, ইইউ থেকে যে সুবিধা পেয়ে থাকি তা অব্যাহত থাকবে বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান। কারণ যুক্তরাজ্যের সাথেও আমাদের ভালো সম্পর্ক। সুতরাং যে সুবিধা পাই এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। তবে কঠিন একটা অবস্থায় পড়বে আমাদের রফতানিকারকেরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থ-বছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে ২৭ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ব্রিটেনে বর্তমানে বসবাস করছেন পাঁচ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী। এছাড়া, বছরে ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয় দেশটিতে। জোট হিসেবে ইইউর দেয়া শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বা জিএসপির কারণেই রফতানি আয় এত বেশি করা সম্ভব হয়েছে। এখন যুক্তরাজ্য আলাদা হওয়ার কারণে দেশটি জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখবে কি-না, তা এখন বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের অবমূল্যায়ন বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহে মন্দাবস্থা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ইইউ জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের যে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তাতেও বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পণ্য রফতানি, রেমিট্যান্স আহরণ ও জনশক্তি রফতানি এই তিন ক্ষেত্র বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনতে পারে। তাদের পরামর্শ, ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হতে যেহেতু দুই বছর সময় লাগবে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় যা করণীয় বাংলাদেশকে তা এ সময়ের মধ্যেই করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক সংলাপে বক্তারা বলেছে, ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন (ইইউ) হতে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ প্রত্যাহারের গণরায় ইতোমধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যেটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি ইউরোপের ব্যবসায়িক কর্মকা-ের চলমান অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে পারে। তারা আরো বলেছে, বেক্সিট-এর ধাক্কা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার আওতায় পণ্য রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের ধারাকে প্রভাবিত করবে। পাশাপাশি, বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাজ্যের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক বাংলাদেশে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেমন আমাদের প্রধান পণ্যকে জিএসপি সুবিধার বাইরে রেখেছে, যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রেও সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ ছাড়া পাউন্ডের দর কমে যাওয়ার কারণে ব্রিটিশ ব্র্যান্ডগুলো নতুন করে পোশাকের দর কমানোর জন্য চাপ দেবে। এসব কারণে আমাদের শঙ্কা, যুক্তরাজ্যে আমাদের পোশাক রফতানি হোঁচট খাবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেক্সিট অর্থাৎ যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যে গণরায় হয়েছে তাতে আমাদের সামনে নতুন পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব ব্যাপারেও আমাদের অনেক করণীয় আছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি।



 

Show all comments
  • মাইনুল ইসলাম ২৭ জুন, ২০১৬, ২:৫৮ পিএম says : 0
    কি আর করার ??????????????????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইইউ-যুক্তরাজ্যের সম্পর্কচ্ছেদ বাংলাদেশের রফতানি খাতে ক্ষতির আশঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ