পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তদন্ত নিয়ে একের পর এক নাটক
রফিকুল ইসলাম সেলিম : পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার তদন্ত নিয়ে একের পর এক নাটক চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হত্যাকা-ের বিষয়ে আজ এক কথা বললেও কাল বলছেন আরেক কথা। এতে করে জনমনে বিভ্রান্তির পাশাপাশি খুনের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে হত্যাকা-ের ২১ দিন পর গতকাল (রোববার) খুনিচক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতারের দাবি করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ওয়াসিম সরাসরি মিতুকে গুলি করে এবং অপরজন আনোয়ার হোসেন এ হত্যাকা-ে সহযোগিতা করেছে বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার।
কিলিং স্কোয়ার্ডে ৭ থেকে ৮ জন ছিল জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃতরা তাদের মধ্যে দুইজন। সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া হত্যাকারী মোটরসাইকেল আরোহী তিনজনের একজন ওয়াসিম। সে মিতুকে কাছে থেকে গুলি করেছিল।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওয়াসিম এ তথ্য দিয়েছে বলেও জানান পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনিচক্রের বাকি সদস্যের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার।
কেন তারা মিতুকে খুন করতে গেল কিংবা খুনের রহস্য কি এ প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব দেননি পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, খুনিরা ভাড়াটে, সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। হত্যাকা-ের রহস্য তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বলা যাচ্ছে না। ফলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের ২১ দিন পরও মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৫ জুন শিশু পুত্রকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন সিএমপির এডিসি থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হওয়া এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। প্রথমে কুপিয়ে ও পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এক মিনিটের কম সময়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে মোটরসাইকেল আরোহী ৩ খুনি।
ঘটনার পর খুনের জন্য জঙ্গিদের দায়ী করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। খুনের জন্য কখনও জঙ্গি কখনও জামায়াত-শিবির আবার কখনও মাদক ব্যবসায়ী ও স্বর্ণ চোরাচালানিদের দায়ী করে বক্তব্য দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বেশ কয়েকজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয় শাহ জামান রবিন ও আবু নসর গুন্নু নামে দুইজনকে। এদের গ্রেফতার নিয়েও পুলিশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে।
কয়েকদিন আগে পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, খুনিচক্রের ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এহতেশামুল হক ভোলা (৩৮), বাবুল আক্তারের কথিত সোর্স আবু মূসা (৪৫), ওয়াসিম, রাশেদ, আরিফ ও রিপনও রয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনকে রাঙ্গুনিয়া থেকে আটক করা হয়। এ ৬ জনকে আটক করে দামপাড়া পুলিশ লাইনে রাখা হয়। তদন্ত সহায়ক বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের সেখানে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বলা হচ্ছে মিতুকে খুনের জন্য দু’টি অস্ত্র সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ভোলা।
জানা যায়, তাদের মধ্যে দুইজনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। টানা ১৪ ঘণ্টা পর তিনি রাজধানী ঢাকার খিলগাঁওয়ে শ্বশুরের বাসায় ফিরে যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার সাংবাদিকদের জানান, কিলারদের কয়েকজনকে ধরা হয়েছে তাদের যাচাই-বাছাই করতে বাবুল আক্তারকে সামনা-সামনি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মিতু হত্যা মামলায় বাদী হয়েছেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। স্ত্রী খুনের পরদিন থেকে রাজধানী ঢাকায় শ্বশুরের বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। তার সাথে মা হারা দুই সন্তানও রয়েছে। হঠাৎ করে মামলার বাদীকে তুলে নেয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আর এর মধ্যে গতকাল বিকেলে পুলিশ কমিশনার হত্যাকা-ের বিষয়ে প্রেসবিফিং করেন।
অন্যসময় লালদীঘির পাড়স্থ সিএমপি সদর দপ্তর সম্মেলন কক্ষ কিংবা মিডিয়া বক্সে প্রেসবিফিং করা হতো। গতকালের প্রেসবিফিং করা হয় সিএমপি সদর দপ্তরের সামনের খোলা মাঠে। সেখানে পুলিশ কমিশনার মিতু হত্যাকা-ের কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করার বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি জানান, ওই মুহূর্তে তারা খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, হত্যাকা-ের ঘটনায় শনিবার রাতে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, আনোয়ার ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল। ওয়াসিম মিতুকে সরাসরি গুলি করেছে। তাদের দু’জনের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়।
ইকবাল বাহার আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খুনিরা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। কার নির্দেশে, কেন তারা এ খুন করেছে, তা তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। দু’জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অনেক তথ্য দিয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অপরাধীরা পেশাদার। খুনে সাত থেকে আটজন অংশ নিয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি বলে জানান পুলিশ কমিশনার।
হত্যাকারীরা জঙ্গি কি না বা জঙ্গিরা এ কাজ করিয়েছে কি না, জানতে চাইলে ইকবাল বাহার বলেন, এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। খুনের নেপথ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব কিনা সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয় বলে জানান পুলিশ কমিশনার।
গভীর রাতে পুলিশ পাহারায় বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ঘটনার পর থেকে বাবুল আক্তারের নিরাপত্তায় পুলিশ ছিল। তদন্তের স্বার্থে মামলার বাদী হিসেবে তার সঙ্গে তদন্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার সাথে রাতে দিনে যেকোন সময় আলোচনা হতে পারে। বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এ কথাটা আমি মানতে পারি না। সে মামলার বাদী মামলার বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা হয়েছে।
বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন কিনা এবং মামলার মূল তদন্ত ঢাকায় না চট্টগ্রামে হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, অবশ্যই মামলার তদন্ত চট্টগ্রামে হচ্ছে। তবে ঢাকায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন কিনা সে বিষয় এড়িয়ে যান পুলিশ কমিশনার।
বাবুল আক্তারের পরিবারের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে কমিশনার বলেন, তারা কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছে জানি না। মামলাটির সঠিক তদন্তে সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। বাবুল আক্তারকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে নজরদারির প্রশ্ন কেন?
খুনের রহস্য নিয়ে পুলিশ একসময় এক কথা বলছে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা শুরুতে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছি। তবে আমরা সব আশঙ্কা খতিয়ে দেখেছি। যখন যেটা সামনে এসেছে তখন সেটা বলেছি। আমাদের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসিনি। আমাদের মূল টার্গেট ছিল খুনিদের ধরা, রহস্য উদ্ঘাটন করা। আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। এ মামলায় অন্য কোন আসামি আটক আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করেছি, কাউকে আটক করিনি। রবিন ও আবু নসর গুন্নু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত এ হত্যাকা-ের ব্যাপারে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। মামলা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনকিছু বলা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।