Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আওয়ামী লীগ জঙ্গি দল : খালেদা জিয়া

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই, জনগণের আস্থা উঠে যাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে জঙ্গি ও লজ্জাহীন দল আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
জঙ্গি দমনের পক্ষে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা জঙ্গি ধরার পক্ষে, জঙ্গিদমন আমরা সমর্থন করি। কিন্তু এই জঙ্গি সব আওয়ামী লীগের সঙ্গে। জঙ্গিদের দল হলো আওয়ামী লীগ। এদের কাছে অস্ত্র, বন্দুক, গোলা বারুদ, দেশী-বিদেশী সব রকমের অস্ত্র পাওয়া যায়। কাজেই ওই জঙ্গিদের ধরতে পারলেই সত্যিকারের বিচার করা হবে, দেশে শান্তি-নিরাপত্তা আসবে।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে জঙ্গিদমনের নামে সারাদেশে যে ‘সাঁড়াশি অভিযান’ হয়েছে, তাতে গ্রেফতারকৃতদের প্রায় সকলেই সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতা-কর্মী’ বলে দাবি করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ওই অভিযানে (সাঁড়াশি অভিযান) ১৫ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এদের মধ্যে অধিকাংশই নিরহ সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে তিন হাজারের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মী। আমরা অবিলম্বে তাদের মুক্তি চাই।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে সহস্রাধিক সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী এতে অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শওকত মাহমুদ।
বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চাওয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সময়ে আমার মামলা ছিলো ৫টা, হাসিনার মামলা ছিলো ১৫টা। নাইকো মামলা একসঙ্গে আছে। কাজেই সেই নাইকো মামলায় হাসিনার অভিযোগ উঠে যায়, আমার মামলা তারা কী করে চালায়? হাসিনার সময়ে তা নির্দেশে নাইকো চুক্তিসহ সব কিছু হয়েছে। আমার সেখানে কোনো ভূমিকাই নাই। তারপরও তার মামলা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কেবল তাই নয়, হাসিনার ১৫টি মামলা কিভাবে উঠে যেতে পারে? তার মামলা উঠে গেলে অন্য কারো মামলা থাকতে পারে না। হাসিনার মামলা গুলো অবৈধ ছিলো, সেজন্য আদালত সেগুলো তুলে নিয়েছে। আর আমাদের মামলাগুলো রেখে দিয়েছে। আমরা বলব, ন্যায় বিচার এখানে নেই।
তিনি বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। অন্যায়ভাবে বিচার করা হচ্ছে। যেখানে বিচার বিভাগের ওপরে জনগণের আস্থা উঠে যাচ্ছে। আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই।
বিচার বিভাগের ওপরে সরকারের হস্তক্ষেপ হচ্ছে মন্তব্য করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ বলেছেন, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যাবে না। সাদা কাপড় পরে কাউকে অ্যারেস্ট করা যাবে না। কিন্তু এখন নিয়ত সাদা কাপড় পরে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং মানুষকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্রসফায়ার আদালত নিষিদ্ধ করেছে। প্রমাণ না হলে সেটা ক্রসফায়ার হতে পারে না। যেখানে একটা লোককে আদালত থেকে ১০ দিনের রিমান্ডে এনেছে, সেখানে ডিবি (গোয়েন্দা অফিস) কিভাবে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় তাকে গুলি করে ফেলে দেয়া হয়। আর বলা হয়, ক্রসফায়ার। এটা ক্রসফায়ার নয়, এটা হত্যা করা হয়েছে। এর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সম্পৃক্ততা আছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, মঈনুদ্দিন-ফখরুউদ্দিনের যে সরকার ছিলো, সে সরকার যেসব মামলা দিয়েছে, সেসব মামলায় এখনো আমাদের নেতা-কর্মী কারাগারে। এখনো আমাদের প্রতিটি মামলা রয়েছে। যেখানে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই সেখানে নিরপেক্ষ বিচার পাওয়া যায় না, ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না।
সাংবাদিক ইউনিয়নকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ইফতার করতে না দেয়ায় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। বলেন, আজকে সারা দেশে কী চলছে? শুধু লুটপাট আর দখলের মহাৎসব চলছে। আজকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। সাংবাদিকরা সেখানে ইফতার মাহফিল করতে পারে না। সেখানে তারা (জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ) নির্বাচন দিতে ভয় পায়।
বর্তমান সরকারকে ‘অনির্বাচিত ও গণধিক্কৃত’ সরকার হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের ব্যর্থতার সমালোচনাও করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
বিএনপি প্রধান বলেন, তারা (সরকার) নির্বাচিত নয়। জনগণের রায় নেই তাদের যদি সম্মান ও লজ্জাবোধ থাকতো, প্রতিদিন যেভাবে দেশী-বিদেশী পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, তাহলে তারা ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দেয়ার ব্যবস্থা করতো। কিন্তু তাদের লজ্জা নেই।
বক্তব্যের পর সদ্য কারামুক্ত বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এমএ আজিজ, ডিইউজে সভাপতি আব্দুুল হাই শিকদার, নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদকে নিয়ে একই টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
এছাড়া ছিলেন, বিএনপির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর মসিউল আলম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহীন হাসানাত প্রমুখ ছিলেন।
ইফতারে সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে কবি আল মুজাহিদী, নুরুল হুদা, আব্দুুল আউয়াল ঠাকুর, মুন্সি আবদুল মান্নান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক আব্দুস শহীদ, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএনপির অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়া, তৈমুর আলম খন্দকার, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, ২০ দলীয় জোটের খেলাফতে মজলিশের আহমেদ আব্দুুল কাদের, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদের স্ত্রী কবি ফেরদৌসী মাহমুদ অংশ নেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ জঙ্গি দল : খালেদা জিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ