পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : কৃষিপ্রধান উত্তরের ফসলের ক্ষেত এখন আর কোন সময় খালি থাকে না। শীত গ্রীষ্ম সব মৌসুমেই মাঠ ভরা ফসল। আর শীতকাল মানেই তো শাক-সবজির ভরা মৌসুম। তবে গ্রীষ্মকালও কম যায় না। পটোল ঝিঙ্গে লাউ কুমড়ো এমনকি শীতকালীন সবজি বাধাকপি ফুলকপিরও আবাদ হচ্ছে। একটা মৌসুম শেষ না হতে আরেক মৌসুমের আবাদের জন্য তৎপরতা।
মাঠ ভরা এত ফসল। কৃষকের এত ব্যস্ততা তারপরও তাদের মন ভাল নেই। কারণ ভাল ফলন যেন তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর নগরের হাট-বাজারে তরিতরকারী দাম কিছুটা কম হবার কারণে ক্রেতারা সাময়িক স্বস্তি পেলেও মাঠে এর উল্টো প্রভাব। একদম দাম নেই। দেড় দু’টাকা কেজিতে পটল ঝিঁঙ্গে আর তিন চার টাকায় লাউ কুমড়ো নেবার লোক নেই। ফড়িয়া দালালরা হাট থেকে কমদামে এসব কিনে নিচ্ছে। মাঠ থেকে ফসল তোলার খরচ উঠছে না বলে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
ধারদেনা করে ঘাম ঝরিয়ে কৃষক আবাদ করছে। স্বপ্ন দেখছে ঘুরে দাঁড়াবার। কিন্তু বার বার সে স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে। ঘাম ঝরানো ফসলের এমন বেহাল দশা দেখে গুমরে কাঁদছে। তাদের ঋণের বোঝা আরো আটো সাঁটো হচ্ছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আর নয় কৃষি। কিন্তু বার বার তা পাল্টাচ্ছে কোন উপায় নেই বলে। কৃষিই তাদের ধ্যান-জ্ঞান। যত কষ্ট আর অভিমান থাক না কেন। মাটি যে তাদের ডাকে। রোদ্রে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাটিতে ফসল ফলানোর মধ্যে তাদের আনন্দ আর সুখ স্বপ্ন। আমনের মার খাবার পর আশা ছিল ইরি-বোরোতে তা পুষিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু এবার তা হয়নি। শুরুতে হাটে বাজারে যে দাম মিলেছে তাতে নিজের ঘাম শ্রমের মূল্য তো দূরে থাক মণ প্রতি লোকসান গুণতে হয়েছে দেড় দুশো টাকা। ঠিক এমনটা ঘটেছে বোরো আবাদে। শীতকালীন শাক-সবজির দাম কিছুটা পেলেও এবার গ্রীষ্মকালীন সবজিতে মারাত্মক ধস নেমেছে। ভাল আবাদ যেন কাল হয়েছে। ভাল ফসল দেখে অনেকে স্বপ্ন দেখেছিল এবারের ঈদের আনন্দটা একটু ভালমত করবে। তা দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। লাভ তো দূরে থাক মাঠ পরিষ্কার করার খরচ উঠছে না। পাঁচ মণ পটল ঝিঁঙ্গে বেচে কিংবা একশো কুমড়োতে মিলছে না একটা শাড়ি বা লুঙ্গি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক চাষীরা। তারা জোতদারের জমি বর্গা নিয়ে কেউ বছরওয়ারী বিঘাপ্রতি জমি ভাড়া নিয়ে চাষাবাদ করছে। মহাজন তার প্রাপ্ত এবং ভাড়ার টাকা আগে ভাগে বুঝে নিচ্ছে। জমির ভাড়া অগ্রীম শোধ করতে হয়। লাভ লোকসান সব প্রান্তিক চাষীর ঘাড়ে। এসব দেখার কেউ নেই। তবে এদের নিয়ে আলোচনায় বড় বড় কথা বলার লোকের অভাব নেই। যা এসব প্রান্তিক চাষীদের সাথে উপহাসের সামিল। যাদের দু’শ’ বিঘা জমি আছে তাদের অবস্থা একই রকম। প্রান্তিক চাষীরা সরকারের দেয়া কোন সুযোগ-সুবিধা প্রনোদনা কিছুই ভোগ করতে পারে না। ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মেলে জমির কাগজ যার তার। অনেক জোতদার বর্গা চাষীদের ফসল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অন্য ব্যবসায় লাগায়। আবার স্বল্প জমির মালিকরা কৃষি ঋণ নিতে গিয়ে পড়ে নানা বিড়স্বনায়। বেশ ক’জন কৃষক বলেন ত্রিশ হাজার টাকার ঋণ দিতে গিয়ে এ কাগজ ও কাগজের পরও পাঁচ হাজার টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে। এরপর তো সুদ রয়েছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ক্ষুদ্র চাষীদের খুব একটা উপকারে আসেনি। এসব ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়ে দারস্থ হতে হয় মুখিয়ে থাকা সুদী মহাজন আর এনজিওগুলোয়। এনজিওগুলো সেবা নয় পুরোদস্তর ব্যবসা করছে এসব অসহায় ক্ষুদ্র চাষীদের নিয়ে। এমন নানা অভিযোগ মাঠে প্রান্তরে শোনা যায়। এরপর বাড়তি উপদ্রব হলো ফড়িয়ারা। এরা ফসল ওঠার আগ মুহূর্তে হামলে পড়ে। দর কমিয়ে দেয় সিন্ডিকেট করে। কৃষকের ঘরে ফসল যাবার আগে চলে যায় ফড়িয়াদের গোলায়। ফসল ওঠার সময় দর কমিয়ে কৃষকের ঘর শূন্য করে। ফসল কাটা শেষ হলে ফের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারী খাদ্য গুদামে কখনো উৎপাদিত ফসল প্রান্তিক চাষীরা সরবরাহ করতে পারে না। আগে করত দালাল আর ফড়িয়ারা। এখন এর সাথে যোগ হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। নানা ঝামেলার কারণে কৃষক সরকারের দারস্থ হয় না। লাখ লাখ কৃষক এভাবে প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উপরন্ত ফসল ফলানোর লক্ষ্যে নেয়া ঋণের আঁটোসাটো ফাঁস থেকে মুক্তি পাবার জন্য এক চিলতে জমি গরু বসত ভিটে সবই চলে যাচ্ছে। সব হারিয়ে অনেক কৃষক পেশা বদলেছে। আবার কেউ হয়েছে অন্যের জমির শ্রমিক।
কৃষির অবস্থা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে আলাপকালে কৃষকের কন্ঠে হতাশার সুর শোনা যায়। ঈদ কেমন কাটাবেন জিজ্ঞেস করলে হতাশার সুরে বলেন আমাদের গরীবের আবার ঈদ। আশাছিল ফসল বেচে পরিবার-পরিজনের জন্য নতুন জামা কাপড় কিনব। সেটি এবার আর হলো না। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে পেটের খাবার যোগাড় করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। পবার কৃষক জালাল বলেন আমাদের উপর আল্লা নারাজ হয়েছে। আষাঢ়ের দশ দিন পার হয়ে গেল তবু পর্যাপ্ত বর্ষণ নাই। জমিতে জো আসছে না। আউস লাগানো যাচ্ছে না। বিঘœ ঘটছে রোপা আমনেও।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আরেকজন সমাজকর্মী বেশ ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন আপনারা মাঠ ভরা ফসল দেখে বাম্পার বাম্পার বলে পেপারে টিভিতে প্রচার করেন। সব ভাল দেখেন। কৃষি বিভাগের কর্মীরা আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। কিন্তু এর পেছনের মানুষের কান্না শোনার যেন কেউ নেই। কৃষিতে যে বিশাল ধস নামছে তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। বাজারে সব কিছুর দাম আছে। শুধু দাম নেই প্রান্তিক চাষীর ঘাম ঝরানো ফসলের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কৃষিতে ক্রমাগত লোকসান চলতে থাকলে কৃষক আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। নানা মুখী সংকটের কারণে জমি থাকবে অনাবদি। চাষাবাদে ধস নামলে দেশ পড়বে চরম খাদ্য নিরাপত্তা হীনতায়। ভাল ফলন নিয়ে আত্মতৃপ্তি নয়। এর পেছনের মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে। এরাও যেন ঈদের আনন্দ অন্যদের মত ভাগাভাগি করতে সে ব্যাপারে নজর দেয়া জরুরী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।