Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমব্রেলা প্রজেক্টে স্পিকারের নিষেধাজ্ঞা সংসদ ভবন সংস্কারের নামে লুটপাট

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৭ পিএম, ২৬ জুন, ২০১৬

আজিবুল হক পার্থ : জাতীয় সংসদ ভবনের মূল গাঁথুনির ইট খুলে নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে। তবে এই সংস্কার নিয়ে এরই মধ্যে তুলকালাম কা- ঘটে গেছে। সংসদ ভবনের সংস্কারের খবর জানেন খোদ সংসদ সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আর এই সংস্কারের নামে মোটা অঙ্কের টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন সংস্কার কাজ বন্ধ করতে বলেছেন। আর পেছনে খবর জানতে মাঠে নেমেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের অনন্য সৃষ্টি বিশ্বের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন জাতীয় সংসদ ভবন সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গত বছরের জুন মাসে সংসদ কমিশনের বৈঠকে। ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জাতীয় সংসদের পূর্তকাজ, বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সিস্টেমের উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের একটি আমব্রেলা প্রকল্প অনুমোদন পায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দও দেয়া হয়। আগামী জুন মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ১০ মাসে সংস্কার কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখন মেয়াদান্তে তড়িঘড়ি করে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার আর কিছুটা ঘষামাজা করেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার পাঁয়তারা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফরমায় (ডিপিপি) ইট প্রতিস্থাপনের কোনো কাজ না থাকলেও শুধু বরাদ্দের টাকা খরচ করার জন্যই ভালো ইট তুলে সেখানে নতুন ইট বসানোর কাজ শুরু করে সংসদ ভবন দেখভালের দায়িত্বে থাকা শেরে বাংলানগর গণপূর্ত বিভাগ-১। নতুন এই ইটের মানও যাচাই-বাছাই করা হয়নি। এমনকি বিষয়টি স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ অন্যদের জানানোও হয়নি। অথচ নিম্নমানের ইট লাগানো ছাড়াও এই কাজে সংসদ ভবনের ঐতিহ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ ভবনে নষ্ট হয়ে যাওয়া মার্বেল পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়। সামান্য কিছু মার্বেল পাথর নষ্ট হলেও তা প্রতিস্থাপনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। সেন্ট্রাল এসি মেরামত করার কথা থাকলেও সেটা এখনো হয়নি।
সূত্রমতে, সিভিল ও ইলেকক্ট্রিক্যাল বিভাগ মিলিয়ে প্রকল্পটির ১০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বেশীর ভাগই বরাদ্দ দেয়া হয় ইলেকট্রিক্যালে। এখানেই চলে বেশি অনিয়ম। প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম ও শাখাওয়াত হোসেন সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে বসেই কাজের নামে লুটপাট করে নেন সিংহভাগ টাকা। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেন শেরে বাংলানগর গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল হক। আর বিশেষ সুবিধা নিয়ে কাজের অনুমোদন দেন ঢাকা জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্তের অতিরক্তি প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা জোনের ২৮টি ডিভিশনের টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে সব প্রকলে। পর টেন্ডারে তার অনুমোদন লাগে। আর এই অনুমোদন নিতে সংশ্লিষ্টদের মোটা অঙ্কের কমিশন দিতে হয়। অভিযক্তিদের অনেকের বক্তব্য, প্রকল্প অনুমোদন নিতে টাকা দিতে হয়। যে কারণে পুরো টাকার কাজ করা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হচ্ছে না। লোকসান দিয়ে তো আর কাজ করা করা যাবে না।
সংসদ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার যেখানে লুই আই কানের মূল নকশার আলোকে ভবনটি সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে এ ধরনের কাজ মেনে নেয়া যায় না। সেখানে কেউ কারো ইচ্ছামতো সংস্কারকাজ করতে পারে না। মূল নকশা আসার পর সবার সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু জুনের মধ্যে বরাদ্দের টাকা শেষ করতে অপ্রয়োজনীয় সংস্কার করা হচ্ছে। বিল-ভাউচার তৈরির মাধ্যমে বরাদ্দ অর্থ আত্মসাৎ করতে সংসদ ভবনের জন্য ক্ষতিকর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাদের মতে, এসব কাজের আগে সুনির্দিষ্টভাবে সংসদ কমিশনের অনুমোদন নেয়া প্রয়োজন ছিল। অন্তত সংসদের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের জানানোর কথা। কিন্তু বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজটি হাতে নেয়ায় সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। আর যেসব ইট বসানো হচ্ছে তা সাধারণ ইট। অথচ তুলে ফেলা ইটগুলো আরো ৫০ বছরেও কিছু হওয়ার কথা নয়।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এরই মধ্যে এসব অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। অবশ্য স্পিকারের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত কাজ স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে এসব অনিয়মের বিষয় তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটিও। কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, শুধু বিল-ভাউচার বানিয়ে সরকারি অর্থ তছরুপ শুধু অপরাধই নয়, গর্হিত অপরাধ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, যথাযথ তদারকি ও জবাবদিহি না থাকায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। তবে অর্থ আত্মসাতের জন্য সংসদ ভবনের মতো ঐতিহ্যবাহী ভবনকে হুমকির মুখে ফেলার মতো অপকর্ম অনাকাক্সিক্ষত। সংস্কারের নামে এই লুটপাট বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমব্রেলা প্রজেক্টে স্পিকারের নিষেধাজ্ঞা সংসদ ভবন সংস্কারের নামে লুটপাট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ