পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স থাকলে এসব হত্যাকা- ঘটছে কেন : মওদুদ আহমদ
স্টাফ রিপোর্টার ঃ সরকারের জবাদিহিতার অভাবে দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটছে অভিযোগ করে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে এক আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দলের এই অবস্থানের কথা জানান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার যদি জিরো টলারেন্স হয়ে থাকে তাহলে এসব মৃত্যু কেন ঘটছে প্রশ্ন রাখেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে একদিকে গুম-হত্যা-বিচারবহির্ভূত হত্যা-ক্রসফায়ার-এনকাউন্টার চলছে, অন্যদিকে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। দেশে কোনো জবাবদিহিতামূলক জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই, সেই কারণে আজকে এসব ঘটনা ঘটছে। যা কিছু হচ্ছে একটা নৈরাজ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে এখন। এই কারণে যে, দেশে কোনো সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত সরকার নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় যায়, বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তি গুম হবে না। বিনা বিচারে কাউকে আটক রাখা হবে না এবং কাউকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হবে না। আমরা এটা (বিচারবহির্ভূত হত্যা) বন্ধ কওে দেব।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
আলোচনা সভায় বিএনপির গুম হয়ে যাওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ নেতা-কর্মীদের সন্ধান দাবি করা হয়। দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ভারতের শিলিংয়ে খুঁজে পাওয়া দলের নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের কথাও স্মরণ করা হয়।
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে মওদুদ আহমদ বলেন, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের উত্থানÑ এই যে ব্লগার, প্রকাশক, মসজিদের মোয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, বৌদ্ধদের ভিক্ষু নেতা মারা গেলেন। আপনারা (সরকার) বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের জিরো টলারেন্সের কথা। যদি জিরো টলারেন্স হয়ে থাকে তাহলে এসব মৃত্যু কেন ঘটছে? আর একটা হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত সরকার শুরু করতে পারেনিÑ এটা দেশের মানুষের মনে আজকে মস্তবড় প্রশ্ন।
সত্যিকার অর্থে আপনারা যদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে বক্তব্যটা রাখেন, সেটা সত্য নয়। কারণ আপনারা একটা বিচারও শুরু করতে পারেননি। দেশে বাক-স্বাধীনতা নেই, ভয়-ভীতির কারণে জনগণ সরকারের এসব ব্যর্থতার কথা বলতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ।
দেশে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কেবলমাত্র নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করা গেলেই দেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের অবসান হবে। আর গুম-হত্যা-বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতির অবসান ঘটবে।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গুম-হত্যা-বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ করবে অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, আমরা আইনের শাসনের বিশ্বাস করি বলেই এসব আমরা বন্ধ করব। আর যদি আমরা তা করতে না পারি তাহলে জনগণ আমাদেরকে ধিক্কার দেবে।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, গতকাল পত্রিকায় দেখলাম, এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন যে, চাঁদাবাজি-রাহাজানি যারা করে, তাদের গুলি করার অনুমতি তিনি দিয়েছেন। তাহলে দেশ কে চালাচ্ছে? দেশে কি একটা সরকার আছে? একজন পুলিশ অফিসার কি এটা বলতে পারেন বা কেউ কি বলতে পারেন। কেন বলছেন কারণ দেশে কোনো জবাবদিহিতা নেই।
বিএনপিকে মধ্যপন্থি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল অভিহিত করে মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেই না, একে আমরা ঘৃণা করি। কিন্তু আজকে মিথ্যা অপপ্রচার করে বিএনপিকে অন্যদিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে যে, বিএনপি চরম দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দল। এটা সত্য নয়। এটা আমরা প্রমাণ করেছি। ১০ বছর বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন, তখনও প্রমাণ করেছি। ইনশাল্লাহ আবার সুযোগ পেলে আমরা আবার সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হব।
দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবসটি কেবল ঢাকায় না করে তৃণমূল পর্যায়েও পালনের আহ্বান জানান মওদুদ আহমদ।
আলোচনা সভায় বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে সদস্যরা ‘গুম’ হয়ে যাওয়া ছাত্রদল নেতা পারভেজ হোসেনের শিশু কন্যা রিধি, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন আঁখি, খালেদ হাসান সোহেলের স্ত্রী শাম্মী সুলতানা, নিজামউদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে নিজের স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আকুতির কথা ব্যক্ত করেন। এই সময়ে আলোচনাস্থলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বিএনপির সহ-সভাপতি সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমেদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর স্বজনদের কাছে ফিরে আসা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।