পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এরশাদ বিহীন জাতীয় পার্টির প্রথম কাউন্সিল আজ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে এই কাউন্সিল। এরশাদ বিহীন দলের নেতৃত্ব ও কতৃত্ব নিয়ে বিরোধ এরশাদের জীবিত অবস্থা থেকেই। উইল করে দলের ‘চেয়ারম্যান পদ’ ছোটভাই জিএম কাদেরকে দিয়েছিলেন। কিন্তু পর্দার আড়ালের শক্তি দিয়ে তা ঠেকিয়ে দেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। পরবর্তীতে পদ ‘ভাগাভাগি’ করে দেবর জিএম কাদের ও ভাবী রওশনের মধ্যে সমঝোতা হয়। কিন্তু কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের নেতার পদ কব্জায় রেখেই রওশন এরশাদ আবার দলের চেয়ারম্যান পদ বাগাতে তৎপর হয়ে উঠেন। সরকারের তল্পিবাহক জাপার কয়েকজন নেতা রওশনকে ‘চেয়ারম্যান’ করতে আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপের তদবির করছেন। কিন্তু দলটির ৮০ থেকে ৯০ ভাগ নেতাকর্মীর আস্থা জিএম কাদেরে। তারা কাদেরের মধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম এইচ এম এরশাদের ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন। তবে রওশন এরশাদ যাতে বাগড়া দিতে না পারেন সে জন্য তার জন্য কাউন্সিলে ‘সম্মানজনক পদ’ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছেন।
স্ত্রী রওশনের উপর আস্থাহীনতার কারণে এইচ এম এরশাদ জীবদ্দশায় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের’র নাম ঘোষণা করে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণার সাংগঠনিক আদেশে এরশাদ বলে গেছেন আমার মৃত্যুর পর কাউন্সিলররা যেনো জিএম কাদেরকেই পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন। যদিও সেই আদেশের পর রওশনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন এরশাদ। একবার ঘোষণা দিয়েও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে রংপুরের নেতাদের আন্দোলনের মুখে ছোটো ভাই জিএম কাদেরকে দ্বিতীয় দফায় ভারপ্রাপ্ত ও ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি সরকারের সুবিধাভোগী রওশনপন্থীরা। এরশাদের মৃত্যুর পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার মনোনয়ন প্রশ্নে দ্বন্দ্ব প্রকাশ হয়ে পড়ে। জিএম কাদের ও রওশন দু’জনেই বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ার নিয়ে টানাটানি শুরু করলে পদ ভাগাভাগি হয়। জিএম কাদেরকে উপনেতা পদ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। প্রকাশ্য গ্রুপিং না থাকলেও ভেতর ভেতর একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজমান। কয়েকজন সিনিয়র নেতা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রওশনকে চেয়ারম্যান পদে বসানোর জন্য। যদিও জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিতর্কিত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্র্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলে বসায় দলটি গণভিত্তি হারিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দলটিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিল হচ্ছে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সংখ্যাধিক্য নেতাকর্মী জিএম কাদেরের পক্ষে একাট্টা। তারা জিএম কাদেরকেই চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান। তবে রওশন বেঁকে বসলে কাউন্সিলে বিশৃঙ্খলার যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। রওশনপন্থী গুটি কয়েক সিনিয়র নেতা ঘোট পাকাতে পারেন এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
কৌশল হিসেবে কাউন্সিলে শো-ডাউন থেকে সরে এসেছে জাতীয় পার্টি। শুধুমাত্র ৮ হাজার কাউন্সিলর-ডেলিগেডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন জিএম কাদের।
পাশাপাশি মহাসচিব পদ নিয়ে জটিলতায় জড়াতে চায় না জাপা। কাউন্সিলের মহাসচিব পদ ঘোষণা না দিয়ে পরে দিতে চায়। যাতে কোনো প্রার্থী লোকজন এনে শো-ডাউন করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি না করে।
১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখলের পর ১৯৮৫ সালের ১৬ আগস্ট এইচ এম এরশাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে নিয়ে জাতীয় ফ্রন্ট গঠিত হয়। জোটের শরীক ছিলেন জনদল, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি, বিএনপি (শাহ) মুসলিম লীগ (সা)। জাতীয় ফ্রন্ট গঠনের সাড়ে ৪ মাস পর ১৯৮৬ সালের পহেলা জানুয়ারি ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। শরীক দলের নেতারা তাদের নিজেদের দল বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব হন অধ্যাপক এমএ মতিন। পার্টির কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত-জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ার জাহিদ। ২১ প্রেসিডিয়ামসহ ৬০১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ’৯০ এর গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের পর দল বিপন্ন হয়ে পড়ে। এরশাদ জেল থেকেই মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন। ’৯১ সালের পহেলা জানুয়ারি গুলশান পার্কে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মাধ্যমে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে দল পুনর্গঠন করা হয়। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলটি রাজপথে গণভিত্তি পায়।
কিন্তু সুবিধাবাদী নেতাদের প্লাটফর্ম হওয় উঠায় দলটি বার বার ভাঙনের কবলে পড়েছে। জাতীয় পার্টি প্রথম ভাঙনের মুখে পড়ে ১৯৯১ সালে, শামসুল হুদা চৌধুরী ও ডা. এম এ মতিন বিউটি সিনেমা হলে সম্মেলন করে ‘জাতীয় পার্টি জাতিয়তাবাদ’ গঠন করেন। পল্টন ময়দানে সম্মেলন করে জাতীয় পার্টি (মিম) গঠন করেন মিজানুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়াস ইনস্টিটিউটে সম্মেলন করে তৃতীয় দফায় ভাঙনের শিকার হয়। চতুর্থ দফায় নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে দ্বিখ-িত হয় দল। সর্বশেষ পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন মরহুম কাজী জাফর আহমেদ ও ড. ফজলে রাব্বী চৌধুরী। বর্তমানে জাতীয় পার্টি, জাপা, জেপি, বিজেপি ও জাপা (জাফর) নামে ৫টি ধারা বিদ্যমান।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পার্টির নেতৃত্বও কতৃত্ব নিয়ে হস্তক্ষেপে আগ্রহী নয়। সে জন্যই কাউন্সিলে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান আর রওশন এরশাদকে সৃজিত সম্মানজনক পদে বসানোর জোর গুঞ্জন চলছে। রওশন এরশাদের জন্য ‘প্রধান উপদেষ্টা’ অথবা ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ পদ গঠনতন্ত্রে যুক্ত হতে পারে। কয়েকজন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বিষয়ে দূতিয়ালি করে যাচ্ছেন। তারা চেষ্টা করছেন একটি সমঝোতার মাধ্যমে কাউন্সিল সম্পন্ন করতে। সিনিয়র নেতা রওশন এরশাদের মর্যাদার প্রশ্নে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে আরেকটি প্রস্তাব উঠেছিল। সেটি হলো রওশনের জন্য চেয়ারম্যান আর জিএম কাদেরের জন্য কার্যকরী চেয়ারম্যান পদ। সেই প্রস্তাব জিএম কাদের নাকোচ করে দিয়েছেন। এখন রওশন এরশাদের সম্মতি পেলেই বিষয়টি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে গঠনতন্ত্রে একাধিক কো চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করাও হতে পারে বলে জানা গেছে। আর সে পদে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে কো চেয়ারম্যান পদে বসানো হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত মহাসচিব পদও সৃষ্টি করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। নাজিউর রহমান মঞ্জুর ভারত থেকে দেশে ফিরে আসার পর ‘অতিরিক্ত মহাসচিব’ পদে বসানো হয়েছিল। পরে ওই পদে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের অনুগত নেতা আনোয়ার হোসেন ও আহসান হাবিব লিংকন দায়িত্ব পালন করার পর পদটি বিলুপ্ত করা হয়। সূত্রের দাবি সম্মেলনে ঝামেলা এড়াতে গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
জাপার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রওশনকে বিশ্বাস না করায় তাকে পার্টির পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নিতে চান না। তবে মর্যাদার দিকে থেকে জিএম কাদের’র নিচেও নামতে চান না। এটাকেই দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন রওশনের ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা। তারা চান না জিএম কাদেরের একচ্ছত্র ক্ষমতা। তারা ক্ষমতা ছেড়ে দিলেও ঘুড়ির নাটাই ধরে রাখতে চাইছেন। তারাই রওশনকে সামনে রেখে খেলতে চেষ্টা করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসচিব পদের দাবিদার কয়েকজন। মশিউর রহমান রাঙ্গা, কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, মাহমুদুল হাসান চৌধুরী, গোলাম মসিহ। তবে গোলাম মসিহ সউদী রাষ্ট্রদূতের চাকরির চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করায় তিনি মহাসচিব পদে আসছেন না। দলের নেতারা বলছেন, কাউন্সিলে কি হয় বলা দুষ্কর তবে নেতাকর্মীদের এখনো আস্থা জিএম কাদেরের উপরই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।