Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একুশে বইমেলায় কঠোর নিরাপত্তা

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মেলার আশপাশ এলাকার ফুটপাতে কোন দোকান বসতে দেয়া হবে না। শুধু তাই নয়, এবারের বইমেলায় আলাদাভাবে লেখক ও লেখক, প্রকাশক ও ব্লগারদের নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। এ জন্য একটি পুলিশের একটি বিশেষ তালিকায় এরই মধ্যে স্থান পেয়েছে তাদের নাম। সেই তালিকা ধরে পুলিশ তাদের নিরাপত্তা বিধানের কাজ করবে।
গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বই মেলার নিরাপত্তা নিয়ে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, তারপরেও কেউ নিরাপত্তাহীন মনে করলে এবং তা পুলিশকে জানালে তাকে বিশেষভাবে নিরাপত্তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।
আজ সোমবার থেকেই মাসব্যাপী এই বইমেলা শুরু হচ্ছে ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, এবারের নিরাপত্তাকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্রাইম বিভাগ ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক বিভাগ কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার জানান, অতীতে বেশ কিছু অনাকক্সিক্ষত ঘটনার অভিজ্ঞতার আলোকেই এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্তা সাজানো হয়েছে। গত বছর অভিজিৎ হত্যাকা-ের সময় বইমেলায় লাইটিংয়ের ঘাটতি ছিল বলে পুলিশের মনে হয়েছে। তবে এবার পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ, দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও ফায়ার টেন্ডার ও লাইটিং ইউনিট মোতায়েন থাকবে। কমিশনার জানান, মেলা চলাকালে শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত কোনো হকার বসতে পারবে না।
এছাড়া এবারের বইমেলায় পৃথক প্রবেশ এবং বাহিরপথ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে গেট থাকবে। মেলায় আগত সবার ব্যাগ তল্লাশি করা হবে। বিশেষ করে নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগ তল্লাশি করবে নারী পুলিশ সদস্যরা। এবারের মেলায় পুলিশের যৌন নিপীড়নবিরোধী বিশেষ টিম থাকবে। চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে জানিয়ে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এবারের বইমেলায় নিরাপত্তায় ২ শতাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যা দুইটি কন্ট্রোলরুম থেকে পুলিশের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবেন।
তিনি বলেন, অধিকতর নিরাপত্তার লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক ৭টি ক্রস ফুট প্যাট্টোল টিম ও মেলার বাইরে শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ৬টি ক্রস ফুট প্যাট্রোল টিম থাকবে। ২৪ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ফোর্সসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। বিদেশি স্টল ও আগত বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি থাকবে বোম ডিস্পোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, ৯টি ওয়াচ টাওয়ার। মেলাকে কেন্দ্র করে পোশাক পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি থাকবে। এছাড়া মেলার বিদেশি স্টল ও অতিথিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহণের কথা জানান তিনি। এ সময় জননিরাপত্তা ও পুলিশের দায়িত্ব পালনে নগরবাসীর সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
গতবছর বইমেলায় ব্লগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এমনিতেই এবারের বইমেলায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে নতুন করে এবারের বইমেলায় লেখক, প্রকাশক ও ব্লগারদের আলাদাভাবে নিরাপত্তা দেয়া হবে। বিশেষ করে ব্লগাররা যাতে বইমেলায় এসে আতঙ্ক বোধ না করে সে বিষয়টি বিশেষভাবে নজর দেয়া হবে। অন্যদিকে প্রকাশকরা যেহেতু অনেক ব্লগারের বই ছাপিয়ে থাকে, সেজন্য তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি মাথায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া লেখকদেরও এর আওতায় আনা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে একটি তালিকা রয়েছে। যে তালিকাটি কয়েকদিন আগেই করা হয়েছে। তালিকায় থাকা নাম ধরে মেলায় নিরাপত্তা দেয়া হবে। তবে কত দিন বা কোন সময়ে তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। তালিকা অনুযায়ী জানা গেছে, ইমরান এইচ সরকার, আরিফ জেবতিক, সবাক ব্লগার, অমিয়, সূধাকর, বাংলার বাণীসহ কয়েকজনের নাম ওই তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া নাম করা লেখক ও প্রকাশকসহ কয়েকশজনের নাম ওই তালিকায় স্থান পেয়েছে। তবে কীভাবে কোথায় তাদের নিরাপত্তা বিধান করা হবে তাও স্পষ্ট করা হয়নি।
গোয়েন্দা পুলিশের অন্য একটি সূত্র বলছে, এবারের বইমেলায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। নাশকতার ব্যাপারটিও মাথায় নেয়া হয়েছে। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তত গোয়েন্দারা। সব প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের টহল ও পেট্রোল টিম জোরদার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অপরাধের শনাক্ত হলে অপরাধীকে যেন ঘটনাস্থলেই পাকড়াও করা যায় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে এবারের বইমেলা উপলক্ষে মেলা ও মেলার আশপাশে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা অতীতের যেকোনো নিরাপত্তার তুলনায় একটু বেশি। এর আগে মেলাগুলোতে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা ২০ থেকে ২৫টি থাকলেও এবারে তা বেড়ে শতাধিক হয়েছে। এর আগে শুধু মেলা প্রাঙ্গণজুড়েই এ ক্যামেরা ছিল। এবার তা মেলা ও মেলার আশপাশের রাস্তাতেও থাকছে। পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যদের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি না হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। এর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদকে একইভাবে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। কয়েক মাস চিকিৎসার পর তিনি জার্মানিতে গবেষণা করতে যান। পরে সেখানে তিনি মারা যান।
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা প্রাঙ্গণ, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, টিএসসি এবং শাহবাগ মোড় পর্যন্ত পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এরই মধ্যে এসব এলাকায় ১২০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো এলাকায় ২৫০টি ক্যামেরা বসানো হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে মেলা প্রাঙ্গণ, প্রবেশ গেট, দোয়েল চত্বর, টিএসসি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আটটি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। তা ছাড়া মেলাপ্রাঙ্গণে র‌্যাবের পক্ষ থেকে আলাদা একটি ওয়াচ টাওয়ার বসানোর কাজ শেষ। বইমেলায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি কন্ট্রোল রুম এবং র‌্যাবের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএসসিতে পুলিশ ও র‌্যাবের একটি সমন্বিত কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মেলার নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মেলার আয়োজকরা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য চারটি গেট স্থাপন করা হয়েছে। পুরো এলাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মেলার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিৎ দু’জনকেই ফুটপাতে কোপানো হয়েছিল। তাই এবার মেলার বাইরে ফুটপাতে কোনো দোকানপাট বসতে দেওয়া হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একুশে বইমেলায় কঠোর নিরাপত্তা

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ