পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে উচ্চ গতির বুলেট ট্রেন ও পাতাল রেল চালুর প্রত্যাশার কথা শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেই দিন বেশি দূরে না। ইনশাআল্লাহ, আমরা বাংলাদেশে করতে পারব। পাতাল ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে পাতাল রেলও করতে পারব। দুর্গম এলাকাসহ দেশের সবক’টি জেলাতেই রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হবে। ভবিষ্যতে দেশে বুলেট ও পাতাল ট্রেন চলবে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব সম্ভাবনার কথা বলেন। সাম্প্রতিক নিজের জাপান সফরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কবে হাইস্পিড বুলেট ট্রেন করতে পারব?
তিনি বলেন, জাপানের বুলেট ট্রেনের প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিল। যতবার জাপানে গিয়েছি, সেখানে বুলেট ট্রেনে উঠতাম। সেদিন বেশি দূরে নয়, আমরা দেশেই এই বুলেট ট্রেন চালু করতে সক্ষম হব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন বাংলাদেশের যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নবতর অধ্যায়ের সংযোজন। নতুন ট্রেনে করে বাড়ি গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের মজাটাই আলাদা হবে বলেও এ সময় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এদিন যান চলাচলের সুবিধার জন্য খিলগাঁও ফ্লাইওভারে স্থানীয় সরকার বিভাগের তৈরি খিলগাঁও ফ্লাইওভারের লুপ খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন এবং কমলাপুর থেকে ফেরার পথে প্রগতি সরণি-বনশ্রী সংযোগ সড়কে নেমে প্রধানমন্ত্রী হাতিরঝিল প্রকল্পের সাউথ ইউ-লুপের ফলক উন্মোচন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর প্রেসক্রিপশনে দেশের রেল সার্ভিসকে প্রায় বন্ধই করে দিতে বিভিন্ন রুট থেকে রেললাইন পর্যন্ত তারা সরিয়ে ফেলে। সে অবস্থা থেকে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার সরকার রেল পুনর্গঠনে উদ্যোগী হয়। সেক্ষেত্রে তার সরকার বুলেট ট্রেন এবং পাতাল ট্রেন চালুর উদ্যোগও গ্রহণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রেলপথ এবং নদ-নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং দাতাগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব স্বার্থে এই যোগাযোগের সহজ এবং সাশ্রয়ী মাধ্যম দুটিও বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দেয়। তারা বঙ্গবন্ধু সেতুতেও রেললাইন স্থাপনে রাজি ছিল না। কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেননি বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দাতারা অর্থ সহায়তা দেবে, কিন্তু আমাদের ভাল-মন্দ আমাদেরই বুঝতে হবে। তারা কিন্তু বুঝবে না। এ প্রসঙ্গে নিজস্ব সিদ্ধান্তে অটল থাকায় এখন বিশ্বব্যাংক বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে একটি পৃথক রেলসেতু নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশটা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাক। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য জীবন দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে রেলওয়ের যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেরও নির্দেশ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধী যারা তারা যেন রেলের সুবিধা পেতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জন্য কাজ করে এবং কিসে কল্যাণ কিসে উন্নয়ন তা ভালো করে জানে। উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ২০৪১ সালে আমরা উচ্চ আয়ের দেশ হবো।
প্রধানমন্ত্রী রেলের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, তার সরকার রেলের আন্তঃদেশীয় এবং আঞ্চলিক সংযোগ সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপই গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর তার সরকারের রেলের উন্নয়নে ৬২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার ৫৫টি নতুন প্রকল্প গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরবর্তীতে এ খাতে ৪২ হাজার ৬০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫টি সংশোধিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- নতুন রেল লাইন স্থাপন এবং পুরাতন লাইন সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন, জনবল নিয়োগ এবং ডবল লাইন নির্মাণ প্রভৃতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের মেয়াদে ৯৮টি নতুন ট্রেন সংযুক্ত হয়েছে এবং ২৬টি যাত্রীসেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। ২০টি নতুন মিটারগেজ এবং ২৬টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ১২০টি যাত্রীবাহী কোচ, ১৬৫টি ব্রডগেজ এবং ৮১টি মিটারগেজ ট্যাংক ওয়াগন, ২৭০ মিটারগেজ ফ্লাট ওয়াগন, ২০ সেট মিটারগেজ ডেমু ট্রেন প্রভৃতি রেলের বহরে সংযুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পদ্মা সেতুতে রেললাইন সংযুক্তিকে তার সরকারের উদ্যোগ পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে রেললাইন মায়ানমারের ঘুনধুম পর্যন্ত যাবে।
বরিশাল পর্যন্ত রেলযোগাযোগের আওতায় আনা তার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুতগামী ট্রেন চালু করা সম্ভব হলেই অচিরেই তা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে পাতাল রেল চালু এবং বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জাইকা এবং ভারত সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দাতাগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে এগিয়ে আসায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে, ভারত সরকারের ‘এলওসি’ হিসেবে ৩ বিলিয়ন ডলার প্রদানে তিনি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এটি আঞ্চলিক সহযোগিতার এক অনন্য নজীর বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী পরে রেলের বিভিন্ন কম্পার্টমেন্ট ঘুরে ঘুরে দেখেন।
উদ্বোধন হওয়া নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আজ রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে। শনিবার ছাড়া এটি নিয়মিত চলাচল করবে। ট্রেনটি সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুর পৌনে ১টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছবে। আবার চট্টগ্রাম থেকে বিকাল ৫টায় ছেড়ে রাত পৌনে ১১টায় ঢাকায় পৌঁছবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৬ বগির বিশেষ ট্রেনটি ৭৪৬ সিটের। ৪ বগিতে আছে ২২০টি আসন, শোভন চেয়ার ৪২০টি এবং এসি বার্থ আসন ৬৬টি। এছাড়া, দু’টি খাবার গাড়ির সঙ্গে ৪০টি আসন রয়েছে। বগিগুলো ইন্দোনেশিয়ার তৈরি বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।
এলজিআরডির এবং সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, রেলসচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা মিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভারত ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তায় নির্মিত ১৬ বগির এই সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি চলাচল করার পথে কেবল বিমানবন্দর রেল স্টেশনে খানিক যাত্রাবিরতি করবে। এটি ৫ ঘন্টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পৌঁছবে। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটের প্রথম আন্তঃনগর বিরতিহীন ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।