Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কদমবূসী : হাত-পা ইত্যাদিতে চুমু খাওয়া

মুফতী মোঃ আবদুল্লাহ্ | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

১১। তাবারানী ইয়াহইয়া ইবন হারিস সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি ওয়াসেলা ইবন আসকা‘ রা. এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তাঁকে বললাম, আপনার এই হাত রাসূল স. এর হাত মুবারকে স্পর্শ করে বায়‘আত নিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, আপনার হাতটি এগিয়ে দিন, আমি তাতে চুমু খাবো। তিনি আমার আবেদন রক্ষা করলেন এবং আমি তাঁর হাতে চুমু খেলাম। হাফেয হায়সামী র. বর্ণনাটি উদ্ধৃত করে বলেন, বর্ণনা সংশ্লিষ্ট সনদের সব কয়জন ব্যক্তিই নির্ভরযোগ্য’ (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: মুফতী শফী র., খ-১, পৃ.১৯০-১৯১)।

১২। মুহিব্বে তাবারী নিজ গ্রন্থ ‘কিতাব আর-রিয়াদুন্নুদ্রাহ্’ এর মধ্যে হযরত আবূ বকর রা. এর ফাযায়েল প্রসঙ্গে, আবূ রাজা আতারাদী এর বরাতে উদ্ধৃত করেছেন, তিনি বলেন, আমি মদীনা শরীফে প্রবেশ করে লোকজনের একটি সমাবেশ দেখতে পেলাম। সেখানে দেখলাম, একজন লোক অন্য আরেকজনকে তার মাথায় চুমু দিচ্ছিল এবং এমনটি বলছিল, আমি আপনার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, আপনি যদি না হতেন আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম।

আমি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি কে, যার মাথায় চুমু দেয়া হচ্ছে? আর যিনি চুমু দিচ্ছেন, তিনিই বা কে? লোকজন জবাবে বলল, উনি হলেন আবূ বকর সিদ্দীক রা. আর যিনি চুমু দিচ্ছেন তিনি হলেন উমর ইবন খাত্তাব রা.। এ ঘটনা তখনকার যখন যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রশ্নে হযরত আবূ বকর রা. এর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল এবং হযরত উমর রা. প্রমুখ সাহাবী তাতে আশঙ্কাবোধ করছিলেন; যে কারণে তাঁরা কয়েকজন শুরুতে দ্বিমত করছিলেন। কিন্তু যখন সিদ্দীকে আকবার রা. এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক জিহাদ পরিচালিত হল এবং তাতে উত্তম ফলাফল সামনে এল; তখন হযরত উমর রা. হযরত আবূ বকর রা. এর সঠিক সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের নিমিত্তে তেমনটি করেছিলেন’ (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: মুফতী শফী র., খ-১, পৃ.১৯০-১৯১)।

১৩। হাফেয ইবন হাজার র. ‘ইসাবা’ গ্রন্থে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রা. এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে ইবনে মুবারক এর বর্ণনা সূত্রে এই ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন, একবার হযরত যায়েদ ইবন সাবিত রা. ঘোড়ায় আরোহণ করেন। তখন হযরত ইবন আব্বাস রা. সম্মান প্রদর্শনার্থে তাঁর ঘোড়ার লাগাম আকড়ে ধরলেন। হযরত যায়েদ রা. বিনয়ার্থে এ বলে নিষেধ করছিলেন যে, হে রাসূল স. এর চাচাতো ভাই! আপনি এমনটি করতে যাবেন না। কিন্তু হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রা. বললেন-

“আমাদের এমনটাই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা যেন আমাদের মধ্যকার আলেমগণের সঙ্গে এমনই সম্মানজনক আচরণ করি”। হযরত যায়েদ ইবন সাবিত রা.-ও হযরত ইবন আব্বাস রা. এর হাত ধরে তাতে চুমু খেলেন এবং বললেন,

“আমাদেরকেও এমনই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, আমরা যেন আমাদের নবী’র আহলে বায়ত এর সঙ্গে এমন সম্মানজনক আচরণ করি” (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: মুফতী শফী র., খ-১, পৃ.১৯০-১৯১)।

উক্ত একই ঘটনা ‘মুসতাদরাকে হাকিম’ গ্রন্থের গ্রন্থকার ‘সাহাবা পরিচিতি’ অধ্যায়ে, ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনা সূত্রে উদ্ধৃত করে বলেছেন, এর সনদসূত্র সহীহ মুসলিম এর শর্ত মোতাবেক সহীহ। হাফেয যাহাবীও বর্ণনাটি সম্পর্কে অনুসন্ধানকেন্দ্রিক কোন সমালোচনা করেননি। বরং চুপ থাকার মাধ্যমে তাঁর মৌণ সম্মতি প্রদান করেছেন। তা ছাড়া, এই একই ঘটনা শামসুল আয়েম্মা সারাখসীও তাঁর মাবসূত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ( আল-মাবসূত: সারাখসী: খ-১৬, পৃ.৭৩; ব. হা. জাওয়াহিরুল ফিকাহ: মুফতী শফী র., খ-১, পৃ.১৯০-১৯১)।

১৪। বায়হাকী দ্বেরার ইবন উমর এর সূত্রে হযরত আবূ রাফে‘ রা. হতে বর্ণনা করেছেন, হযরত উমর ইবন খাত্তাব রা. রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদের লক্ষ্যে একদল সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন হুযাফা রা.-ও ছিলেন। (তবে ঘটনা দাঁড়াল, তাদের শক্তি ছিল বেশী) তারা এ কয়জন মুসলমানকে বন্দী করে ফেলল। আর রোমান বাদশাহ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন হুযাফাকে আদেশ দিল, তুমি খ্রিস্টান হয়ে যাও! তা হলে আমি তোমদেরকে আমার রাজত্ব পরিচালনায় শরীক করে নেব। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন হুযাফা রা. তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তখন বাদশাহ নির্দেশ দিলেন, একে শূলীতে চড়াও এবং তারপর চারদিক থেকে তার ওপর তীর বর্ষণ করবে। তারা তা-ই করল, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হল; কিন্তু হযরত আবদুল্লাহ ইবন হুযাফা রা. শূলীতে চড়া কালীনও বেশ প্রফুল্ল মনে হচ্ছিল, ভয়-ভীতির কোন চিহ্ণ তাঁর মধ্যে দৃষ্টিগোচর হল না।

বাদশাহ আবার নির্দেশ দিল, তাকে শূলী থেকে নামিয়ে নাও! তারপর নির্দেশ দিলেন, বড় এক ডেগ পানি গরম করে নাও! আর তা টগবগ করে ফুটিয়ে নাও! পানি যখন খুব ফুটন্ত অবস্থায় টগবগ করতে লাগলো, তখন নির্দেশ দিলেন, অন্য একজন বন্দীকে এনে তাতে নিক্ষেপ কর। তাই করা হল, আর তাৎক্ষণিক ওই লোকটির সব গোশত হাড় থেকে পৃথক হয়ে হাড়গুলো চকচক করতে দেখা গেল! (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ