দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্নঃ রাসূল সা. কিভাবে মিসওয়াক ওযু ও গোসল করতেন?
উত্তরঃ ইসলামে এমন কোন বিষয় নেই, যে বিষয়ে রাসূল সা. দিকনির্দেশনা দেয়নি। পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনসহ মানবজীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে, প্রতিটি কাজে আল্লাহ ও রাসূল সুন্দর পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। মিসওয়াক, ওজু ও গোসলেও রাসূলের অনুপম আদর্শ রয়েছে।
মিসওয়াকের সুন্নতসমূহ: প্রত্যেক অযুতে মিসওয়াক করা সুন্নত। [সুনানে আবু দাউদ, ১/৮]। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) এর বর্ণনা অনুযায়ী মিসওয়াক করার সুন্নত পদ্ধতি হল, ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল মিসওয়াকের নিচে রাখা আর বৃদ্ধাঙ্গুলিকে অগ্রভাগের নিচে রাখা। অন্যান্যআঙ্গুলগুলো মিসওয়াকের উপরে রাখবেন। [শামী, ১/৮৫]
অযুর সুন্নতসমূহ: অযুর মধ্যে ১৮টি সুন্নত রয়েছে। এ সুন্নতসমূহ আদায় করলে উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে অযু আদায় হয়। অযুতে নিয়্যত করা সুন্নত। যথা- এমন নিয়্যত করা যে, আমি নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য অযু করছি। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৪]। বিছ্মিল্লাহির রহমানির রহীম পড়া সুন্নত। কোন কোন রেওয়ায়েতে নিচের দোয়াটি পড়ার কথা আছে, বিছ্মিল্লা-হিল ‘আযীম ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ‘আলা-দীনিল্ ইসলাম। অন্য রেওয়ায়েতে বিছ্মিল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হ পড়ার কথা বলা হয়েছে। অযু করার সময় নিচের দোয়াটিও পড়া যায়: আল্লা-হুম্মার্গ্ফি লী যাম্বী, ওয়াওয়াচ্ছি’ লী ফী দা-রী, ওয়া বারিক্ লী ফী রিয্ক্বী। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১/৫১৩]। দুই হাতের কব্জিসহ তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]। মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুলের সাহায্যে দাঁত পরিস্কার করা। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১০৫-১০৬]। তিনবার কুলি করা সুন্নত। রোযাদার না হলে কলকলার সাথে কুলি করা [আবু দাউদ, ১/১৯/১৪]। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। নাক ভালোভাবে ঝেড়ে পরিস্কার করা ভাল। [সুনানে আবু দাউদ, ১/১৫]। সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া সুন্নত। প্রত্যেক অঙ্গকে তিনবার করে ধোয়া সুন্নত। মুখমন্ডল ধোয়ার সময় দাড়ি ভালোভাবে খিলাল করা। [আবু দাউদ, ১/১৯, সহীহ আল-বুখারী, ১/২৭-২৮]। ফায়দা: দাড়ি খিলাল করার সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে, তিনবার মুখমন্ডল ধোয়ার পর হাতের তালুতে পানি নিয়ে চিবুকের পাশে মুখ গহŸরের নিম্মাংশে পানি দেবেন, তারপর দাড়ি খিলাল করবেন। ডান হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। বাম হাতের কনুইসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। দোন হাতের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নত। [আবু দাউদ, ১/১৯। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা সুন্নত। [ফতওয়ায়ে শামী, ১/২৪৩]। কান মাসেহ করা সুন্নত। [সুনানুন নাসায়ী, ১/২৯]। গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব। গলা মাসেহ করা বিদআত। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৫, ১/১১২]। ডান পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। বাম পায়ের টাখনুসহ তিনবার ধোয়া সুন্নত। দোন পায়ের আঙ্গুলী খিলাল করা সুন্নাত। এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধোয়া। [হাশিয়াতুত তাহাবী আলা মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১৩]। ধারাবাহিকভাবে অযু করা সুন্নত। অর্থাৎ যেটার পর যে অঙ্গ ধুইতে হবে সেটাই ধোয়া। আগে পরে না করা। [মারাকিয়িল ফালাহ, ১/১১২]। ডান পাশের অঙ্গ আগে ধোয়া। [সহীহ আল-বুখারী, ১/২৯]। মাথার অগ্রভাগ থেকে মাসেহ শুরু করা। [সহীহ আল-বুখারী, ১/৩১]। অযু শেষ হওয়ার পর কালিমায়ে শাহাদাত পড়বেন- আশ্হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহ‚ ওয়া রাসূলুহ‚।
তারপর এই দোয়াটি পড়বেন,আল্লা-হুম্মাজ‘আলনী মিনাত তাওয়া-বীনা, ওয়াজ‘আল্নী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। [সুনানে তিরমিযী, ১/১৮]
ফায়দা: উক্ত দোয়া সম্পর্কে মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতের প্রণেতা বলেন, অযুর মাধ্যমে বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জিত হয়। এ দোয়ার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক পবিত্রতা অর্জন করার দরখাস্ত পেশ করা হয় যেন আল্লাহকে একথাই বলা হয় যে, অযুর মাধ্যমে বাহ্যিক পবিত্র তা অর্জন করার সামর্থ আমাদের আছে বিধায় তা আমরা সম্পাদন করেছি। এখন আপনি দয়া অনুগ্রহ করে আমাদেরকে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা দান করুন। [মিরকাতুল মাফাতীহ, ২/১৬]
অযুতে ৪ ফরজ: অযুর মধ্যে কিছু কাজ ফরয। যদি সেগুলোর একটাও বাদ পড়ে যায় বা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তখন অযু হবে না। ১. সমস্ত মুখ ধোয়া। [আল-হিদায়া, ১/১৬]। ২. উভয় হাতের কনুইসহ ধোয়া। [হিদায়া, ১/১৬,ফতওয়ায়ে শামী, ১/২১১-২১২]। ৩. মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা। [হিদায়া ১/১৬, শামী, ১/২১৩]। ৪. উভয় পায়ের টাখনুসহ ধোয়া।
এতটুকু করলে অযু হয়ে যাবে। কিন্তু সুন্নত অনুযায়ী অযু করলে তা উত্তম এবং পরিপূর্ণরূপে আদায় হয়। তাছাড়া এতে সওয়াবও বেশি পাওয়া যায়। [ ফতওয়ায়ে শামী, ১/২১১-২১২] (চলবে)
উত্তর দিচ্ছেন ঃ মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।