পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও মঞ্জুরীকৃত সহস্রাধিক পদের অধিকাংশই শূন্য
নাছিম উল আলম : মঞ্জুরিকৃত পদের অর্ধেকেরও কম সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় সরকারি চিকিৎসা সেবা (?) চলছে না চলার মত করেই। এমনকি পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হলেও বছরের পর বছর ধরে তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ বর্ধিত জনবল মঞ্জুর করা হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দেড় যুগ পরেও অনেক জেলা সদরের হাসপাতালগুলোর জন্য জনবল মঞ্জুরির প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
উপজেলা সদরে ইতোপূর্বের ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও তার জন্যও কোন চিকিৎসকসহ জনবল মঞ্জুরি নেই। এমনকি ঐসব হাসপাতালে ৩১ শয্যার জন্য মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের এক-তৃতীয়াংশও কর্মরত নেই। উপজেলা সদরের বাইরের অতি জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকাগুলোতে হাতেগোনা যে কয়েকটি ১০ থেকে ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে, তার জন্যও দীর্ঘদিনে কোন জনবল মঞ্জুরি দেয়া হয়নি। এমনকি এসব হাসপাতালগুলোর বেশীরভাগই আজো রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত না হওয়ায় সেখানে ১/২জন চিকিৎসককে প্রেসনে নিয়োগ করে কোন মতে চিকিৎসা ঘরের বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরে পর্যন্ত জনবল সংকট প্রকট। মাত্র ৮জন কর্মকর্তা ও ১২জন কর্মচারী নিয়ে ৬টি জেলা ও ৪২টি উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাসহ পুরো চিকিৎসা পরিসেবার দেখভাল করছে(?) স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর মধ্যে বিভাগীয় অফিসটির উপপরিচালকসহ ১জন সহকারী পরিচালকের পদও শূন্য দীর্ঘদিন ধরে।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় বর্তমানে চিকিৎসকের মোট মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ১হাজার ৮৫জন হলেও কর্মরত চিকিৎসক মাত্র ৫২৩। তবে এ ৫২৩ জনের মধ্যে সম্প্রতি ৩৩তম বিসিএস থেকে বরিশালে বিভাগে ২৭৯ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়। আর ৩৪তম বিসিএস-এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৭ জন। এর আগে এডহকে নিয়োগকৃতদের মধ্যে থেকেও কিছু চিকিৎসক এ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ দেয়া হলেও তার বেশীরভাগই প্রেসনে এবং ওএসডি করে ঢাকা ও এর আসেপাশে বদলী হয়ে চলে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রনালয়ে তদবিরের মাধ্যমে একটি মহল সর্বদাই এ অঞ্চল থেকে চিকৎসকদের রাজধানী ও এর আশেপাশে বদলী বাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশষ হিসেব অনুযায়ী বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার ২২৩টি চিকিৎসক পদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত কর্মরতের সংখ্যা ১৩৬জন। শূন্যপদের সংখ্যা ৮৭। এরমধ্যে অবশ্য বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ জেলা সদরের হাসপাতালটির হিসেব ধরা হয়নি। এছাড়া বরিশাল মহানগরীতে টিবি ক্লিনিক ও হাসপাতালটিতেও চিকিৎসক স্বল্পতা রয়েছে। সেখানে মঞ্জুরিকৃত মাত্র ২জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন ১জন। তবে জেলার ২২৩টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ৮৭টি শূন্য থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার মধ্যে এখনো বরিশাল জেলায়ই তুলনামূলকভাবে চিকিৎসক সংকট কম বলে জানা গেছে।
পটুয়াখালীতে ২২৯টি চিকিৎসক পদের বিপরিতে কর্মরত মাত্র ১০১জন। ১২৮টি পদই শূন্য দীর্ঘদিন ধরে। উপরন্তু জেলা সদরের হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তা চলছে পূর্বের ১শ’ শয্যার জনবল দিয়েই। এমনকি জেলার কুয়াকাটার ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের পরে দ্রুততম সময়ে রাজস্বখাতে স্থানান্তর হলেও এখানে মঞ্জুরিকৃত ৬জন চিকিৎসকের স্থলে কর্মরত মাত্র ২জন। সাগর পাড়ের পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন একমাত্র এ হাসপাতালটির ৪টি পদই শূন্য। একই জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঠালতলী ২০ শয্যার হাসপাতালটি নির্মাণের এক যুগ পরেও এখনো তা স্থায়ী রাজস্ব খাতভূক্ত হয়নি। আর এখানের ৬টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র একজন চিকিৎসক। জেলার দুমকী উপজেলায় এখনো ৫০ শয্যার হাসপাতাল হয়নি। আর এখানে বরাদ্বকৃত ৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন মাত্র ৩ জন।
সর্ব দক্ষিণের উন্নয়ন বঞ্চিত বরগুনা জেলা সদরে ২শ’ শয্যার একটি হাসপাতাল এখনো নির্মাণাধীন। এখানে চলমান ১শ’ শয্যার হাসপাতালটিসহ জেলায় চিকিৎসকের মোট মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ১৬২ হলেও কর্মরত মাত্র এক-চতুর্থাংশের কিছু বেশী, ৪৫ জন। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় সদর থেকে দুরত্বের কারেন এখানে কোন চিকিৎসক যেমনি আসতে চায়না, তেমনি স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ও এ জেলাটির প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জনপ্রতিনিধিরাও জেলার স্বাস্থাসেবা নিয়ে খুব মনযোগী নয় বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। জেলার তালতলী উপজেলায় কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। দীর্ঘদিনের পুরাতন থানা সদর উপজেলায় উন্নীত হবার পরেও সেখানে একটি স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্রের মাধ্যমেই বিশাল জনগোষ্ঠীর কথিত স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান করছে সরকার। আর ঐ উপ-কেন্দ্রটির জন্য বরাদ্বকৃত ৬জন চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র দু’জন।
দ্বীপজেলা ভোলাতে ২শ’ চিকিৎসক পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ৯৬ জন। অর্ধেকেরও বেশী শূন্যপদ নিয়ে জেলার ৭ উপজেলায় সরকারি চিকিৎসা পরিসেবা চলছে। এমনকি ভোলা জেলা সদর হাসপাতালটি প্রায় দেড় যুগ আগে ৫০ শয্যা থেকে একশ’ শয্যায় উন্নীত হলেও তার জন্য চিকিৎসকসহ কোন জনবল মঞ্জুরি হয়নি এখনো।
জেলার সর্বদক্ষিণের সাগর পাড়ের চর আইচা ২০ শয্যা হাসপাতালটি নির্মাণের দেড় যুগ পরে আজো রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হয়নি। ফলে কোন জনবলও মঞ্জুরি নেই। দূরের চরফ্যাশন উপজেলা হাসাপাতাল থেকে প্রেষণে নিয়োগকৃত ঙ্গ জন চিকিৎসক গিয়ে সেখানে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
সাতটি উপজেলার পিরোজপুর জেলায় চিকিৎসকের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ১৬৮ হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৮৫ জন। জেলার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে ৮১টি চিকিৎসকের পদ শূন্য দীর্ঘদিন। জেলা সদরের ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১৯৮৩ সালে ১শ’ শয্যায় উন্নীত হলেও তার জন্য কোন জনবল মঞ্জুরি হয়নি বিগত ৩৩ বছরেও। ফলে ৫০ শয্যার জন্য বরাদ্দকৃত চিকিৎসকসহ কর্মচারী দিয়ে ১শ’ শয্যার হাসপাতালটি চলছে। উপরন্তু ৫০ শয্যার জন্য মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকেরও অধিকাংশ পদ শূন্য।
ঝালকাঠী জেলা সদরসহ ৪টি উপজেলার জন্য মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ১০২ হলেও কর্মরত ৬০জন। বরিশাল মহানগরীর কাছাকাছি থেকে ও জেলায় কাজ করতে খুব বেশী অনাগ্রহী নয় চিকিৎসকগণ। উপরন্তু রাজনৈতিক তদবীরের জোরেও এ জেলায় মঞ্জুরিকৃত পদের অন্তত ৬০ভাগ চিকিৎসক কর্মরত আছেন। তবে জেলা সদর হাসপাতালটি ২০০৫ সালে ১শ’ শয্যায় উন্নীত হলেও তা এখনো চলছে ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই। উপরন্তু বর্তমান শয্যা সংখ্যার অর্ধেকের জন্য যে চিকিৎসক মঞ্জুরি ছিল, তারও অনেকগুলো পদই শূন্য দীর্ঘদিন ধরে।
ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়ক সরঞ্জামের পাশাপাশি চিকিৎসক সংকটের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি চিকিৎসা সেবা (?) এ অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কোন সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারছে না। একজন রোগী ও তার নিকটজনেরা শরীর এবং মনের অত্যন্ত নাজুক সময়ে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেখানে যদি চিকৎসকই না থাকে, তখন মুমূর্ষ ঐসব রোগী ও তাদের নিকটজনের অবস্থা কি হয়? এ প্রশ্ন সবার। যারা অর্থ বিত্তের মালিক তারা পয়সা খরচ করে বিভাগীয় সদর বরিশাল বা প্রয়োজনে ঢাকায়ও ছুটতে পারেন। কিন্তু বিত্তহীন মানুষ তো সরকারি হাসপাতালেই পৌঁছতে পারেন। তাদের স্বাস্থ্য সেবার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
এসব বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল মহলে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করাসহ তা স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ মন্ত্রণালয়কে অবিহিত করার কথা জানান। সেখান থেকেও চিকিৎসকের সংখ্যাল্পতার মধ্যেও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে জানান দায়িত্বশীল মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।