পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী জুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে করে সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। প্রতিদিনই এসব সড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের খোঁড়াখুঁড়িতে অনেক সড়ক দীর্ঘদিন যাবত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। এসব রাস্তায় চলাচলে নগরবাসীর বিড়ম্বনার শেষ নেই। দু’য়েকটি দিয়ে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযোগী। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা, পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। বুঝার উপায় থাকে না কোথায় খানখন্দ আর কোথায় সমান। রোদ উঠলে ধুলা-বালিতে দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও এসব সড়কের অনেক জায়াগায় কার্পেটিং, পাথরকুচি ও ইট উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক চলাচলের অনুপযোগি হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি, বিড়ম্বনা ও কষ্টকে সঙ্গী করেই মানুষ রাস্তায় নামছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীর অভিযাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউনের বিভিন্ন রাস্তা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, তেজগাঁও, ফারমগেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারিবাগ, বেড়িবাঁধ, সাতরাস্তার মোড়, নাবিস্ক, মহাখালি, মগবাজার, মধুবাগ, দিলুরোড, মালিবাগ, খিলগাঁও, বাসাবো, নন্দিপাড়া, দক্ষিণগাঁও, শাহজাহানপুর, কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা, মুগদাপাড়া, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ি, পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা, মতিঝিল, শাহবাগ, এ্যালিফেন্ট রোড, হাতিরপুল, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট সরজমিনে পরিদর্শন করে এসব এলাকার সড়কগুলোর বেহাল দশা দেখা গেছে।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ, মেট্টোরেলের কাজ, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ি করছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। এমনকি এক প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পরদিন আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে খুঁড়ছে। আর অনেক রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়। এ রাস্তা মেরামত করার কোন নাম নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমন সমন্বয়হীনতায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানীবাসী। নগরবাসীর এই বিড়ম্বনা দেখার যেন কেউ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা বা দুর্বলতার জন্যই নগরীর এই বেহাল দশা।
গত বর্ষায় রাজধানীর অনেক সড়ক ভেঙ্গে বেহাল দশা হয়। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোশেনের বাসাবো, মাদারটেক, নন্দিপাড়া, বনশ্রী, মুগদাপাড়া, মায়া কানন ও মানিকনগরের অধিকাংশ সড়কে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ লাইনের উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে এ সমস্ত এলাকার মূল সড়কসহ পাড়া মহল্লার রাস্তাও খোঁড়াখুঁড়িতে চলাচলের অযোগ্য। ভাঙ্গাচোরা এসব সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে কাঁদা-মাটি মিলে একাকার। রোদ উঠলে বাতাসে উড়ছে ধুলাবালি। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, বাসাবো, গোড়ানসহ এর আশেপাশের রাস্তাগুলোর অবস্থা একেবারেই বেহাল। এই এলাকার সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন তো দুরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল করাও সম্ভব হচ্ছে না। সড়ক খুঁড়ে বিশাল বিশাল গর্ত করে রাখা হয়েছে। শাহজাহানপুর ভুমি অফিসের সামনের সড়কে কাজ চলছে গত প্রায় ছয়মাস ধরে। এ এলাকায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে প্রতিদিন অবর্নণীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের। শাহজাহানপুরের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়কটির ভুমি অফিস থেকে খিলগাঁও ফ্লাইওভার পর্যন্ত অংশ খুঁড়ে রাখা হয়েছে গত প্রায় ছয় মাস। মাসখানেক ধরে সড়কটি দুইপাশ থেকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও এই এলাকার প্রায় সড়কেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। যে কারণে সড়কগুলো এখন চলাচলের অনুপযোগী। সেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে রিকশা, ম্যাক্সি, হিউম্যান হলার, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি অংশে সড়কের দুই পাশেই বেহাল অবস্থা। বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। ফলে সেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মেট্রোরেলের নির্মাণ ও সড়কের ড্রেন সংস্কার কাজের জন্য শহরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়িতে চরম দুর্ভোগে নগরবাসী। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল থেকে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজের জন্য প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয় যানবাহনকে। নির্মাণ কাজের কারণে প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থান ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করার কারণে যানবাহন ও পথচারী চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন সময় রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এছাড়া রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা না রেখে নির্মাণ কাজ শুরু করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, গোপীবাগ, মানিকনগর, মুগদাপাড়া ও বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন সংস্কারের জন্য সড়কের মাঝে বড় পাইপ বসানো হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা কেটে রাখার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, উত্তরার একাধিক সড়ক, আব্দুল্লাহপুরের সড়ক এবং মহাখালী হয়ে বনানীর কড়াইল বস্তি পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। বাসাবো, গোড়ান এলাকার কয়েকটি সড়কেও উন্নয়নকাজ শেষ হয়ে গেলেও রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ করা হয়নি।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত নতুন ওয়ার্ডগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলছে। তবে এসব এলাকায়ও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে রাস্তার ওপর বিভিন্ন পাইপ আর গর্ত করে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। যানবাহন দূরের কথা এসব সড়ক দিয়ে মানুষের হাঁটারও অবস্থা নেই। দুই সিটিতে যোগ হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলো শ্যামপুর থেকে সারুলিয়া হয়ে ভাটারার বিভিন্ন সড়কগুলো ও শেখদি আব্দুল্লাহপুর মোল্লা স্কুল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, আগের সেই কর্দমাক্ত জীর্ণশীর্ণ রাস্তগুলো এখনও আগের অবস্থায় পড়ে আছে, কোন কোন রাস্তায় পথচারীদের হাঁটার জায়গা পর্যন্ত নেই। কিছু কিছু রাস্তায় কাজ ধরা হলেও নেই কোন তদারকি। পুরো রাস্তার মাটি খুঁড়ে রাখা। আর রাস্তাজুড়েই বড় বড় পাইপ রাখা। দীর্ঘদিন ধরে এমন মাটি খুঁড়ে রাখা হলেও কাজে অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দিন বলেন, আমাদের পুরনো ওয়ার্ডের অলিগলিসহ বিভিন্ন রাস্তাগুলো অনেকটাই ভাল আছে। তবে নতুন যোগ হওয়া ওয়ার্ডগুলোর সড়ক উন্নয়নে আমরা এখনও ভালভাবে কাজ শুরু করতে পারিনি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নতুন ওয়ার্ডের সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার প্রায় চারহাজার কোটি টাকার বেশি বারাদ্দ একনেকে পাশ করে দিয়েছে। অর্থছাড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা এই সড়কগুলোর উন্নয়নে কাজ ধরবো। আশা করি তখন আর কোন সমস্যা থাকবে না।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, আমরা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট টাইম বেঁধে দিই। এর পরও কেউ কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়িতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর ১২ নম্বও সেকশন থেকে ১১ নম্বও সেকশন পর্যন্ত সড়ক। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে। আবার ব্যস্ততম এ প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে অলি-গলি দিয়ে যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থাও নেই। সেখানে খোঁড়াখুড়ি না থাকলেও দীর্ঘ সময় মেরামত না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর জনগণের ভোগান্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় এখন সিটি কর্পোরেশনের অধীনে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। এসব কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে আমি খোঁজ নেব। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সব কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেব। জনগণের ভোগান্তি আমাদের কাম্য নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ বোরহানউদ্দিন বলেন, রাজধানীর পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে এই মুহূর্তে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ চলছে। এই কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে আমাদের ওপর নির্দেশ রয়েছে। আমরাও নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশার সড়কগুলোও খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়ে অচল হয়ে আছে প্রায় এক বছরের মত। রাস্তা খুঁড়ে রাখার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। এই রাস্তাতেও পাইপ বসানোর কাজ চলছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই এলাকায় এসে অফিস করেন। সবাইকেই এখন চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা রাশিদা জাহান লিপি জানান, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। তিলপাপাড়া এলাকায় প্রবেশের মূল সড়কটি ছয় মাস আগে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এই রাস্তাটি এখন পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়েছে। খিলগাঁও বালুমাঠ থেকে সিটি কর্পোরেশন অফিসের দিকে রাস্তা, পোস্ট অফিস গলি, তালতলা মার্কেটের বিপরীত পাশসহ ‘এ’ ব্লক, ‘সি’ ব্লক, তিলপাপাড়া আলী আহমেদ স্কুলের পাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিশাল এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নগর পারিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানী শহরে যে সমস্ত উন্নয়ন কাজ চলছে তার সঠিক তত্ত্বাবধায়ন ও সমন্বয় হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের সঠিক তত্ত্বাবধায়ন ও সমন্বয় থাকলে সড়কের এই বেহল দশা হতো বলে আমার মনে হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।