পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : সোনার বাংলা জাগছে আজ। বিলাসবহুল আন্তঃনগর এ ট্রেনের আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহু প্রতিক্ষিত এই ট্রেন নিয়ে মানুষের মধ্যে আশা যেমন জেগেছে তেমনি হতাশাও ভর করেছে। সোনার বাংলা’র ঐতিহাসিক যাত্রার জন্য প্রস্তুতির যেন কোনো কমতি নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। পুরো ট্রেন ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে অর্ধশতাধিক রেল কর্মচারী এই কাজেই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ধোঁয়া-মোছা ছাড়াও প্রতিটি কোচে সাঁটানো হয়েছে লালের আভায় লেখা ‘সোনার বাংলা’ স্টিকার। কমলাপুর রেল স্টেশনের ৩ নম্বর প্লাটফরমে দাঁড়ানো সুসজ্জিত ট্রেনটিকে ঘিরে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যেও অন্যরকম উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। মন্ত্রী, মহাপরিচালকসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ট্রেনটি পরিদর্শন করেছেন।
আগামীকাল রোববার সকাল ৭টায় ট্রেনটি প্রথম চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। নতুন কোচ নিয়ে চালু হওয়া সোনার বাংলার রানিং টাইম নিয়ে যাত্রীদের সাথে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও হতাশ। অনেকের মতে, ইচ্ছা করলেওই রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেনটির রানিং টাইম সুবর্ণ’র চেয়ে কমিয়ে এনে নতুন ইতহাস সৃষ্টি করতে পারতো। কিন্তু তা না করে বরং সুবর্ণ’র চেয়ে ১০ মিনিট সময় বেশি করে এর অমর্যাদা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে। চট্টগ্রাম থেকে বিকেল পাঁচটায় ছেড়ে আবার ঢাকার পৌঁছাবে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে। একই রুটে চলাচলকারী আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস এর চেয়ে ১০ মিনিট কম সময় নিয়ে চলাচল করছে। ১৬টি বগির এই ট্রেনে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৭৪৬ জন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) মোট আসন ২২০টি, শোভন চেয়ারের মোট আসন ৪২০টি, এসি বাথের আসন রয়েছে ৬৬টি। এ ছাড়া দুটি খাবার গাড়ির সঙ্গে ৪০টি আসন রয়েছে। ১৬টি কোচের মধ্যে শোভন চেয়ার ৭টি, এসি স্নিগ্ধা কোচ ৪টি, এসি বার্থ ২টি, পাওয়ার কার ও নামাজের ঘর ১টি, গার্ড ভ্যান, খাবার কোচসহ শোভন চেয়ার আরও দুটি কোচ। সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে এসি চেয়ারের ভাড়া ১১০০ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১০০০ টাকা ও শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেনে যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। এজন্য ২৮ জন দক্ষ কর্মী নিয়োজিত থাকবেন যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করার জন্য। প্রতিটি ট্রেনে ১৪ জন করে নিয়োজিত থাকবেন। যাত্রীদেরকে খাবারের কোন বিল দিতে হবে না। টিকিটের দামের সাথেই খাবারের দাম কেটে রাখা হবে। পর্যটন কর্পোরেশন সূত্র জানায়, চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদেরকে ৫ রকম খাবারের মেনু সরবরাহ করা হবে। এগুলো থেকে যে কোনো একটি বাছাই করতে হবে যাত্রীদের। মেনুগুলো হলো, ১. ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ ও চিকেন কাটলেট, ২. প্লেন কেক, ফ্রুটকেক ও ফ্রাইড চিকেন, ৩. ভেজিটেবল রোল ও ফ্রাইড প্রন, ৪. বোম্বে টোস্ট, ফ্রেঞ্চ টোস্ট ও ফ্রাইড চিকেন এবং ৫. ফ্রাইড রাইস ও ফ্রাইড চিকেন। প্রতিটি আইটেমের সাথে থাকবে ৫০০ মিলি লিটার মিনারেল ওয়াটার। এছাড়া যে সব যাত্রী বাসা থেকে খাবার নিয়ে ট্রেনে উঠবেন তাদের খাবার রাখার জন্য আছে ক্যাটারিং সেকশন। সেখানে ফ্রিজে খাবার রাখা যাবে। আছে খাবার গরম করার জন্য ওভেনের ব্যবস্থা। ট্রেনে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের সাথে তা ঠা-া ও গরম করার ব্যবস্থাও আছে।
৭৮৮ নম্বরের সোনার বাংলা ট্রেনের প্রথম গন্তব্যের পরিচালক ফারুক আহমদ। তিনি জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে আরামদায়ক ট্রেন হবে এটি। যাত্রা হবে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক। স্টেশন থেকে ছাড়ার পর গতিবেগ ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার হলেও যাত্রীরা টেরই পাবেন না। একইভাবে যখন ব্রেক করা হবে তখনও যাত্রীরা টের পাবে না যদি না গ্লাস দিয়ে বাইরে না তাকান। পরিচালক জানান, ট্রেনের ভেতরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব ধরনের ডিভাইস রয়েছে। আছে ডিজিটাল অ্যালার্ম ব্যবস্থা। ট্রেনের পেছন থেকে একেবারে ইঞ্জিন পর্যন্ত যাত্রীরা অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সুসজ্জিত এই ট্রেন দেখতে বহু মানুষ ভিড়। বিশেষ করে যারা ঈদের অগ্রীম টিকিটের জন্য কমলাপুরে এসেছিলেন তারা কেউই তিন নম্বর প্লাটফরমে দাঁড়ানো এই ট্রেন না দেখে ফিরে যাননি। অনেকে আবার ট্র্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীদের বহু দিনের আশার ফসল। এই রুটে ৮ বছর আগে চালু হওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছিল যাত্রীদের একমাত্র ভরসা। কোটা প্রথার জন্য টিকিটের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই সুবর্ণতে নিয়মিত আসা যাওয়া করতে পারেন না। সে কারণেই আরেকটি বিরতিহীন ট্রেনের দাবি ছিল যাত্রীদের। ইন্দোনেশিয়ার তৈরী বিলাসবহুল কোচ দিয়ে সাজানো নতুন এই ট্রেন দুটি ক্ষেত্রে হতাশ করেছে যাত্রীদের। এর একটি এর রানিং টাইম সুবর্ণ’র চেয়েও ১০ মিনিট বেশি। অর্থাৎ এই ট্রেন সুবর্ণ’র চেয়ে ১০ মিনিট বেশি সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে। দ্বিতীয়টি, চট্টগ্রাম থেকে এই ট্রেন ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছার সময় নিয়ে। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, বিলাসবহুল এই ট্রেনের রানিং টাই কমিয়ে অন্ততপক্ষে সাড়ে ৪ ঘন্টা করা যেতো। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কয়েকজন লোকো মাস্টারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কোচের এই ট্রেনের রানিং টাইম সাড়ে ৪ ঘণ্টা করলে কোনো সমস্যা হতো না। তাতে ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার করলেই চলতো। এখন ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে আটকে রাখা হলো। কেউ কেউ মনে করছেন, এই সময় অন্তত ৫ ঘণ্টা করলেও নতুন ট্রেনের একটা মান রক্ষা হতো। এসব বিষয় নিয়ে রেলওয়ের ফেসবুকগুলোকে কয়েক দিন ধরে সমালোচনার ঝড় বইছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ফেসবুকে মাহবুব কবীর মিলন নামে একজনের লেখাতেই অনেক কিছু ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন, “সোনার বাংলা এক্সপ্রেক্স ট্রেন বিলাসবহুল বা লাক্সারিয়াস ট্রেন হবার কারণেই কি ৮ বছর আগে চালু হওয়া বিনা লাক্সারিয়াস সুবর্ণ ৭০২ এর চেয়ে ১০ মিনিট রানিং টাইম বেশি করা হয়েছে? বিশ্বব্যাপী বিলাসবহুল বা লাক্সারিয়াস ট্রেনের আভ্যন্তরীণ ডেকোরেশন, আরামদায়ক সেবা, মানসম্মত খাবার এর সাথে সাথে গতি বা সময়ও একটি বড় এবং অনেক বড় ফ্যাক্টর। আফসোস! সেলুকাস! কি বিচিত্র! ট্রেনটি বিকাল ৪টায় ছেড়ে বিনা ঝর্ঞ্ঝাটে রাত ৯.৪০ মিনিট ঢাকা পৌঁছাতে পারত। এখন ৫টায় ছেড়ে রাত ১০.৪০ এ পৌঁছাবে। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, রাত ১১টা/ সোয়া ১১টার আগে ঢুকতে পারবে না। দেরি হলে আরও রাত! বিলাসবহুল বা লাক্সারিয়াস ট্রেন থেকে স্টেশনে এত রাতে নেমে বাসায় যেতে বিলাসের রেশটুকু ছুটে যাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস-এর টাইম টেবিল করা হয়েছে এককভাবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মতামত ছাড়াই! আফসোস! সেলুকাস! কি বিচিত্র! প্রয়াত জনাব হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের সেই নামকরা নাটকের কথা প্রায়ই মনে পড়ে ‘কোথাও কেউ নেই’...।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।