Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বাজার

প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চিনির দাম বাড়ছেই প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম
টিসিবি ট্রাকে লম্বা লাইন, নেই পণ্যের সরবরাহ
আজিবুল হক পার্থ : আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে আটঘাট বেঁধে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট চক্র। পাইকারি বাজার, গুদাম, এমনকি খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ফলে রোজার বাজারে নেই কোন স্বস্তি। বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করছে পণ্য। রোজার বাজারে চিনি, গোশতসহ যেসব পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয়েছিল সেগুলাও বিক্রি হচ্ছে না বেঁধে দেওয়া দামে। নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ন্যায্য পণ্য পৌঁছনোর লক্ষ্যে সারাদেশে দেয়া টিসিবির ট্রাকেও রয়েছে কারসাজির অভিযোগ। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প পণ্য সরবরাহ এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই বিক্রি শেষের অভিযোগ উঠেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র রমজান আসার প্রায় একমাস আগে থেকে রোজায় বাড়তি চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েই থামেনি, বাড়ছে রোজার শুরু থেকেই। শুরু থেকে চারটি রোজা পার হতেই নিত্যপণ্যের বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। সবজি থেকে শুরু করে মুদিপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রমজানের আগে কাঁচাবাজারগুলোতে লম্বা যে বেগুন বিক্রি হতো ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, রোজার প্রথম শুক্রবারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। শুধু বেগুনই নয়, ইফতার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার হয় এমন সব সবজির দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর এতে সমস্যায় পড়ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও এ বিষয়ে দায়িত্বশীলরা রয়েছেন দেখে না দেখার ভান করে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম সামান্য বেড়েছে। তবে কৃত্রিম সঙ্কট নয়, আমদানি ঘাটতি থাকায় সামান্য বেড়েছে পণ্যের দাম।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের দাম স্থিতিশীল থাকা সত্ত্বেও রমজান উপলক্ষে দেশের বাজারে বাড়ছে চিনির দাম। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং ভুল তথ্য দিয়ে লাগামহীনভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা জানায়, রমজানে দেশের যে পরিমাণ চিনির চাহিদা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি চিনি আমদানি ও মজুদ রয়েছে। তবু চিনি সরবরাহের তালিকায় সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগসাজশে বাড়ছে এই পণ্যের দাম।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ সপ্তাহে বাজারে ২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বয়লার মুরগি এবং ৪০ টাকা বাড়তি দামে লেয়ার মুরগি। চলতি সপ্তাহে বয়লার প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে দেশি মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে পিস ২৮০ টাকা।
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মান ভেদে কাকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, টমেটো প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্যান্য সবজির দামে তেমন পরিবর্তন হয়নি। প্রতি কেজি পটল ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৩৫-৪০ টাকা, চালকুমড়া ৩০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া প্রতি ফালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, আমদানি করা মোটা পেঁয়াজ ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা, দেশি রসুন ১০ টাকা কমে ১৪০ টাকা, আমদানি করা মোটা রসুন ২০০-২১০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, আদা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদি পণ্যের মধ্যে দেশি মসুর ডাল কেজিতে ১৪০-১৪৫ টাকা, আমদানি করা মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, ছোলা ৯০-১০০ টাকা, ছোলার ডাল ১০০-১০৫ টাকা, ডাবরি বুটের ডাল ৫০ টাকা। এছাড়া মোড়কজাত চিনি প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, ছোলার ডালের বেসন ১১০-১২০ টাকা এবং বুটের ডালের বেসন ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ৯০ টাকা, সুপার ৮৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে প্রতি ৫ লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে ৪৪০ টাকা থেকে ৪৬০ টাকার মধ্যে। এছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি খোলা সরিষার তেল ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ৩২ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৪০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে। রুই, কাতলা, শিং, তেলাপিয়াসহ বেশকিছু মাছ প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। তবে অন্যান্য মাছ বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৮০-৭০০ টাকায়। তবে ছোট আকারের রুই মাছ পাওয়া যাচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা করে বেড়ে ৪৪০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বড় আকারের কাতলা মাছ। এছাড়া তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, গলদা চিংড়ি (আকারভেদে) ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, বড় শিং মাছ ৫৬০ থেকে ৬৮০ টাকা, দেশি মাগুর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, বেলে মাছ ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা ১০০০ টাকা, বাটা মাছ ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়।
রমজানে রাজধানীবাসীর জন্য গোশতের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। গরুর গোশত প্রতি কেজি ৪২০ টাকা এবং খাসির গোশত ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে গরুর গোশত ৪৩০ ও খাসির গোশত ৫৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক খোলা বাজারে পণ্য বিক্রিতে চরম গাফিলতি দেখা গেছে। যেই পরিমাণ পণ্য বিক্রির কথা তা করা হচ্ছে না। তবে যে চাহিদা ধরা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক লম্বা লাইন হচ্ছে। প্রতিদিনই ক্রেতারা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ