Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুনিরা পুলিশের হাতে তদন্তে নাটকীয় মোড়!

প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : মামলা তদন্তে নাটকীয় মোড় নিয়েছে। খুনিচক্রের ৫ সদস্য পুলিশের হাতে। হত্যাকা-ের যাবতীয় তথ্য ও আলামতও নাগালে। খুনিদের যারা ভাড়া করেছে তারাও গোয়েন্দা জালে। পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার রহস্য উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে এখন পুলিশ। এমন তথ্য জানিয়ে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, যেকোনো মুহূর্তে ভালো খবর দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন এসব কর্মকর্তা। পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার এ বিষয়ে এখনও কিছু বলতে নারাজ। তবে তিনি আশাবাদী তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়েছে, খুব শিগগির ভালো খবর দেয়া যাবে।
গত ৫ জুন সকালে শিশুপুত্রকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন সিএমপি থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হওয়া জনপ্রিয় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। মোটরসাইকেল আরোহী খুনিচক্রের সদস্যরা তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, হত্যাকা-ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল তাদের প্রায় সবাই এখন পুলিশের হাতে। হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা আলামতও জব্দ করা হয়েছে। কোথায় বসে খুনের পরিকল্পনা হয়েছে, সে পরিকল্পনায় কারা ছিল, কারা অস্ত্রের জোগান দিয়েছে, কারা খুনিদের ভাড়া করেছে, কে মোটরসাইকেল চালিয়ে হত্যা মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে, খুনের পর তারা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে সব তথ্য এখন পুলিশের হাতে। তবে এখন পর্যন্ত খুনের রহস্য পুরোপুরি স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।
হত্যাকা-ের পরপর পুলিশের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের প্রতি সন্দেহের আঙুল তোলা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বাবুল আক্তার কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সফল হয়েছিলেন। বিশেষ করে নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এবং হাটহাজারীর আমান বাজারে জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড উদ্ধার এবং বন্দুকযুদ্ধে এক জঙ্গি কমান্ডার নিহতের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে। মিতু খুন হওয়ার সময় চট্টগ্রাম ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে প্রাথমিকভাবে জঙ্গিদের দায়ী করেছেন। তবে গত ১২ জুন চট্টগ্রাম সফরকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানান, মিতু হত্যাকা-ের নেপথ্যে যে জঙ্গিরা জড়িত সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তদন্ত শেষ হলে খুনি কারা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও তখন মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে হত্যাকা-ের পরদিন নগরীর বাদুরতলা বড় গ্যারেজ নামক স্থান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় খুনিদের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ। আর এ ঘটনায় পুলিশের সন্দেহের তীর জঙ্গিদের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের দিকেও ছোড়া হয়। পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেছিলেন, যে এলাকায় হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি পাওয়া গেছে সেটি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। হত্যাকা- শেষে খুনিরা গোলপাহাড় হয়ে বাদুরতলার দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি জামায়াত-শিবিরকে সন্দেহের চোখে দেখেন। পরদিনও হাটহাজারী থেকে মূসাবিয়া দরবারের খাদেম আবু নসর গুন্নুকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। পরদিন বলা হয়, সে সাবেক শিবির কর্মী এবং এ হত্যাকা-ে সে জড়িত থাকতে পারে। অবশ্য মাজারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়, মাজার নিয়ে বিরোধের জের ধরে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিপক্ষ তাকে এ মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এর দুইদিন পর বায়েজিদ এলাকার শীতলঝর্ণা আবাসিক এলাকা থেকে মদ্যপ অবস্থায় রিকশা চালককে মারধর করার অভিযোগে শাহ জামান রবিনকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। মদ্যপ অবস্থায় সে বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে খুন করেছে বলে রিকশাওয়ালাকে হুমকি দিচ্ছিল। পরে গুন্নু ও রবিনকে মিতু হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ। টানা ৭ দিনের জিজ্ঞাসাবাদে রবিনের কাছে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। রিমান্ডে আনা হলেও গুন্নুকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদও করেনি পুলিশ।
জানা যায়, পুলিশ নিশ্চিত হয় এ দু’জনের কেউ মিতু হত্যায় জড়িত নয়। জঙ্গি হিসেবে খুনিদের সন্দেহ করা হলেও পরে সে বিষয়টিও অমূলক বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। সম্প্রতি মহানগরীর বাকলিয়া এলাকা থেকে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে মিতু হত্যাকা-ের ব্যাপারে বেশকিছু তথ্য। এ তথ্যের সূত্র ধরে মোট ৬ জনকে আটক করা হয়। পুলিশের সন্দেহ এরা মিতু হত্যা মিশনে জড়িত। তবে এদের কেউ জঙ্গি নয়।
আইজিপির চট্টগ্রাম সফরের দিন মিতু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও খুনিচক্রের সদস্যদের পাকড়াও করতে মোট ৬টি কমিটি গঠন করা হয়। এ ৬টি কমিটি সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি পুলিশের ৫টি সংস্থা মামলার সার্বিক তদন্ত কার্যক্রম তদারক করছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের চৌকস পুলিশ কর্মকর্তাগণ একের পর এক বৈঠক করে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে তারা নিশ্চিত হয়েছেন মূল অপরাধী নেপথ্যে থেকে ভাড়াটে কিলার দিয়ে এ কাজটি করেছে। নেপথ্যে পরিকল্পনা করেছেন একজন মাত্র ব্যক্তি।
পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নিয়েছে চারজন। জড়িত ছিল নয়জন। এরই মধ্যে মোটরসাইকেলের সেই তিন আরোহীসহ পাঁচজন পুলিশি হেফাজতে আছে। বৃহস্পতিবার বোয়ালখালীর শাকপুরা থেকে একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে মোটরসাইকেলে চড়ে যে তিন জনকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে তাদের পাশাপাশি প্রবর্তক মোড়ে পরিস্থিতি নজরদারিতে আরো একজন ছিল। ‘ম’ আদ্যক্ষরের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। সে জানত কাকে খুন করা হবে। শুধু তাই নয় বাবুল আক্তারের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এক সোর্স হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছিল বলে জানা যায়। তবে তিনি জানতেন না কাকে হত্যায় এ অস্ত্র ব্যবহৃত হবে।
পুলিশ আরও নিশ্চিত হয়েছে, হত্যাকা-ের পরিকল্পনা হয়েছে উত্তর চট্টগ্রামের একটি এলাকায়। পরিকল্পিত এ হত্যাকা- সংগঠনের আগে খুনিরা একাধিকবার তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালায়। তবে হত্যাকা-ের কারণ নিয়ে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুনিরা পুলিশের হাতে তদন্তে নাটকীয় মোড়!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ