পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলে আসছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। আইনি প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করেও তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয় বলে স্বীকার করেছেন প্রবীণ আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ।
তারপরও বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির আইনজীবী ও সিনিয়র নেতারা আশা প্রকাশ করেছিলেন শারীরিক অসুস্থতার কারণে আদালত তাঁকে জামিন দেবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যাল হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ মেডিকেল রিপোর্ট জমা না দেয়ায় পুনরায় ১২ ডিসেম্বর শুনানি ও রায়ের দিন ধার্য্য করেছে আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলটির আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন তারা। তবে বৃহস্পতিবারের এই ঘটনার পর আদালতের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জামিন যে সম্ভব নয় তা বিশ্বাস করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্পও নেই। তবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখনো পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত আদালতের ওপরই ভরসা রাখতে চান। যদিও বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশে তারা বলে আসছেন বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং সরকারের নির্দেশনা ছাড়া সুবিচার পাওয়া যাবে না। বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন এবং সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার কারণে তাকে জামিন না দিয়ে বার বার জামিনে বাঁধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন। বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলন বিকল্প নেই উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের সিদ্ধান্ত ও কৌশলে ক্ষুব্ধ তারা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির এক নেতা বলেন, দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের একজন সমর্থক পর্যন্ত জানে আদালতের মাধ্যমে দেশনেত্রীর মুক্তি সম্ভব হবে না। কিন্তু তারপরও আমাদের নেতারা আদালতের দিকেই বার বার তাকিয়ে থাকেন কেন? আমাদের বুঝে আসে না।
রাজধানীর পাশের একটি জেলার সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে জীবন দিতেও প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র নেতারা তাদের সম্পদ রক্ষা ও সরকারের সাথে আঁতাতের কারণে বেগম জিয়ার দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী রয়েছেন।
যুবদলে পদপ্রত্যাশী সাবেক এক নেতা বলেন, সিনিয়র নেতারা সভা-সমাবেশে হম্বি-তম্বি ছাড়েন কিন্তু বাস্তবে তার কোন কিছুই দেখি না। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য্য করা হয়েছে কিন্তু জামিন হবে না জেনেও এর বিকল্প কোন কর্মসূচি প্রণোয়ন করা হয়নি। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, সিনিয়র নেতারা কি আদৌও বেগম জিয়ার মুক্তি চান!
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে আটকে রেখেছে। এখন তাঁর প্রাপ্য জামিনের যে অধিকার সেই অধিকার থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা অনতিবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি। আমরা মনে করি আন্দোলন ছাড়া বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। আগামী দিনের আন্দোলনে সরকারের কোনও বাধাই মানবে না বিএনপি। যেখানে পুলিশের ব্যারিকেড আসবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
সিনিয়র নেতাদের এসব হুঙ্কার এবং আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা না করায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আঃ আউয়াল খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তো আইনি প্রক্রিয়ায় আটক না। তাকে যে মামলায় আটক করা হয়েছে সেটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং যেভাবে দেশনেত্রীকে আটক করে রাখা হয়েছে সেটিও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। সুতরাং এর রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যে প্রক্রিয়া প্রয়োজন সেই প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই।
তিনি বলেন, আন্দোলন বিকল্প নেই বলে আমাদের সিনিয়র নেতারা অনেকেই হুঙ্কার-টুঙ্কার দেন। কিন্তু আন্দোলনের রূপরেখা এখনো আমরা স্থায়ী কমিটির কাছ থেকে পায়নি। সুতরাং মিটিং-সমাবেশে এসব হুঙ্কার না দিয়ে পরিকল্পনা মাফিক একটি কর্মসূচি প্রয়োজন। যে কর্মসূচি প্রণয়ন করলে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। যেভাবে কাজ করলে সফল হবে সেভাবে আমরা অবদান রাখবো।
সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, আমরা বহুদিন ধরেই বলে আসছি আদালতের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। কারণ তিনি কোন অপরাধের কারণে কারাবন্দি হননি। তাকে বন্দি করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। তাই মুক্তির বিষয়টা আদালতের উপর নির্ভর করে না। সরকার প্রতিনিয়তই বেগম জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন হবে না। তার বিভাগীয় নেতাকর্মীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে সেলিম বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি কেন্দ্র থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবদুল খালেক বলেন, আমরা এখনো আশা করি যারা বিচারক তারা এদেশেরই মানুষ। তারা স্বাধীনভাবে বিচার করলে, ন্যায়বিচার করলে বেগম জিয়া জামিন পাওয়ার হকদার। কিন্তু ন্যায়সঙ্গতভাবে যদি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী জামিন না পান তাহলে আমাদের কাছে আন্দোলন-সংগ্রামের আর কোন বিকল্প থাকবে না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মোঃ গোলাম সরোয়ার বলেন, আমরা চাই আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে। কিন্তু আদালতের আচরণে বিশ্বাস ভঙ্গ হচ্ছে যে, আদালতের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করতে পারবো। তিনি বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নেই, সেখানে কেউ যদি মনে করে আদালতের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারবে তাহালে সেটা হবে বোকামি। আর আমরা সেই অবস্থাও সৃষ্টি করতে পারিনি যে, বিচারবিভাগ চাপ অনুভব করবে এবং ন্যায়বিচার করবে। এখন দুর্বার গণআন্দোলন ছাড়া বেগম জিয়াকে মুক্ত করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, দেশনেত্রীর মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখে প্রধানমন্ত্রী নির্লজ্জ ভাবে বলেছেন যে,গ্ধ তিনি রাজার হালে আছেন।গ্ধএটা মেডিকেল রিপোর্ট প্রদানে হস্তক্ষেপ ও রিপোর্ট প্রভাবিত করার মত উক্তি। একই দিনে সাবেক প্রধান বিচারপতির এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট প্রদান করা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে বিরজমান বিচারপতিদেরকে একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়ার মত ফৌজদারী অপরাধ ও আদালত অবমাননার সামিল। অতএব, আন্দোলন ছাড়া দেশনেত্রী ও এদেশের মুক্তির কোন সুযোগ নেই।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. সাবেরুল হক সাবু বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে বেগম জিয়া ন্যায়বিচার পাবে। কিন্তু যেভাবে বিলম্ব করা হচ্ছে এবং বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা মেনে রিপোর্ট জমা না দিয়ে আদালত অবমাননা করেছে তাতে আমরা বিস্মিত। তিনি বলেন, এটি যেহেতু জামিন পাওয়ার শেষ আশা তাই আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। দেশনেত্রী জামিন পাওয়ার হকদার হওয়ার পরও তাকে যদি জামিন না দেয়া হয় তাহলে আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া বিকল্প কিছু থাকবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল বাশার বলেন, যদি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই তাহলে হরতাল-অবরোধের বিকল্প নাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।