পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের এখনো বাকি বারো দিনের মত। তবে এরই মধ্যে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদ বাজারের এই কেনাকাটায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। ঈদের দিন যতোই এগিয়ে আসছে ক্রমান্বয়ে বিকিকিনি বাড়ছে। তবে পোশাকের দাম তুলনামূলক কম হলেও, মান নিম্ন, এমন ভাববার কোনো কারণ নেই। ফুটপাতে দোকান ভাড়া লাগে না বা কম লাগে বলেই তারা একই পণ্য কমমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন বলে জানান ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর প্রায় অর্ধশত স্থানে চলছে ফুটপাতে ঈদের কেনাবেচা। এসবের মধ্যে জমে উঠেছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর-পশ্চিম গেটের সামনে, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল জনতা ব্যাংকের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বরের চারদিকের ফুটপাত, ফকিরাপুল এলাকা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট, গুলিস্তান মোড়ের চারপাশের ফুটপাত, নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের ফুটপাত, গোলাপ শাহ মাজার সংলগ্ন ফুটপাত, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ঢাকা কলেজের সামনে, গাউছিয়া, ইডেন কলেজের সামনে ও মিরপুর এলাকায় চাঁদনীচকের ফুটপাতেও উঠেছে ঈদের বেচাকেনা।
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে গিয়ে দেখা যায় অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছে দোকানদাররা। তবে দোকানদাররা জানিয়েছেন ক্রেতারা প্রতিদিনই আসছেন তবে জমজমাটভাবে শুরু হয়নি মার্কেটের বেচাকেনা। অন্যদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে নিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে কথা বলারও সময় পাচ্ছেন না তারা। কোন কোন ফুটপাতে কথার ঝামেলা এড়াতে একদামে বেচাকানা করতেও দেখা গেছে। মানুষের ভিড়ে কোথা কোথাও হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে পথচারীদের। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জটলাও। এর একটা কারণও আছে বটে। কেননা, ফুটপাতেই বসে রাজধানীর অন্যতম বড় ঈদের বাজার। যা বিত্তবানদের জন্য না হলেও নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য অনেকটাই আশীর্বাদ স্বরূপ।
নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সাধ্যের মধ্যে সেরাটা খুঁজে নেন এই ফুটপাতের দোকান থেকেই। আর তাতেই পরিবারের চাহিদাও মেটান অনায়াসেই। রমজানের প্রথম দিকে তেমন জমজমাট ছিলোনা এই ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। এরই মধ্যে পাইকারি বাজার হতে পণ্য কেনার পর পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ফুটপাতে। আর দু’এক দিন ধরে বেচাকেনায় বেশ জমজমাট জানিয়েছেন ফুটপাতের একাধিক ব্যবাসীয়। জাঁমজমকপূর্ণ আলো ঝলমলে মার্কেটে পোশাকের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষদের একমাত্র ভরসা এই ফুটপাত।
নামীদামী শপিংমলে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুটপাতের দোকানে ছুটছেন নগরীর অনেক মানুষ। নিজেদের আদরের ছেলেমেয়ে বা প্রিয়জনকে ঈদের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য কিনে দেন এই ফুটপাত থেকে। কী নেই এই ফুটপাতে? শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার, কামিজ, রং-বেরংয়ের থ্রি-পিস, গেঞ্জি, পাজামা-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস্, টুপি, আতর সবকিছুই রয়েছে ফুটপাতের দোকানে। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব বয়সি নারী-পরুষের জন্য রং-বেরংয়ের বিভিন্ন ডিজাইনের জামা-কাপড় পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। রাজধানীর ফুটপাতের বাজারে প্রতিনিয়তই ক্রেতারা আসছেন, পছন্দমতো জামা-কাপড় কিনছেন। কেউ কর্মস্থলে যাওয়ার সময় কেউবা ফেরার সময় পছন্দমতো নিজেদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারছেন।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভিতরের দোকানগুলো তেমন ভিড় নেই। মার্কেটের দোকানদাররা বলেন, মার্কেটের কেনাকাটা জমজমাট হবে পনের রোজার পর থেকে। তবে এখনো ক্রেতা আসছেন তবে সেটা আশানুরূপ নয়। তবে জমজমাট দেখা গেছে মার্কেটের বাইরে ফুটপাতের বেচাকেনায়। নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে আদুরের মেয়ের জন্য গোলফ্রক কিনেছেন শামিম রহমান। সকাল থেকে শুরু হয়ে ফুটপাতের এই বেচাকেনা চলে রাত দশটা বা তারও একটু বেশি সময় পর্যন্ত।
একাধিক ফুটপাতের ব্যবসায়ী জানান, ঈদের সময় যতো কাছে আসবে এই বেচাকেনা মধ্যরাত ছাড়িয়ে যাবে। মার্কেট ভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকায়, টি-শার্ট ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ টাকা থেকে হাজার/১২০০ টাকা, শাড়ি ৪৫০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়াটার জিন্স প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
ফুটপাতের বেচাকেনা খোঁজ নিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে যেতেই কানে ভেসে এলো ‘দেইখ্যা লন দুইশ’, বাইছ্যা লন দুইশ’, একদাম দুইশ’, যেটাই নেবেন দুইশ’। এ রকম শব্দ শুধু এখানেই নয়, পুরো রাজধানীজুড়েই। বায়তুল মোকররমের সামনে ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা করেন আমজাদ হোসেন। এক দাম ৪০ টাকায় বেচাকেনা করছেন তিনি। পাশেই কয়েকটি জুতার দোকানে গিয়ে দেখা যায় তারাও এক দামেই ব্যবসা করছেন। যার যে জুতা পছন্দ হচ্ছে এক দাম বলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। ক্রেতার পছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে হলে প্যাকেট করছেন আর সাধ্যের মধ্যে না হলে অন্য দোকানে ছুটছেন। এক দামের বিষয়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, প্রতিদিন অনেক ক্রেতার সাথে কথা বলি। রোজা রাইখা বেশি কথা ভালো লাগেনা সীমিত লাভ রেখে মাল (পণ্য) ছাইড়া দিচ্ছি।
মতিঝিল এলাকার শার্ট বিক্রেতা ইসলাম মিয়া জানান, বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে। বিক্রিও ভালো। বিভিন্ন অফিসের বড় বড় কর্মকর্তারা এখান থেকে কেনেন। রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসার খোঁজ নিয়ে জানা গেলো এখানে জমজমাট কসমেটিক্স পণ্য। পরিবারের প্রয়োজনীয় পণ্যটি আগে ভাগেই কিনে ফেলছেন সবাই। তবে এখানকার ফুটপাতের জামা বা জুতার ব্যবসায়ীরাও বসে নেই। তাদের বিকিকিনিও বেশ ভালো।
ঈদ সামনে রেখে বসে নেই মৌসুমি হকাররাও। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে থামা গাড়িগুলোর দিকে ছুটছেন একেকজন। কারো হাতে আতর কারো হাতে টুপি কারো হাতে নামাজ শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের বই সামগ্রী। যানজটে গাড়িতে বসে থাকা মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন এই পণ্যগুলো ভাসমান হকাররা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।