Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ : ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব)। চিকিৎসক সংগঠনটির নেতারা গতকাল (বুধবার) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বেগম খালেদা জিয়া এতোটাই অসুস্থ যে, তিনি কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া এমনকি শরীরের তীব্র ব্যথার কারণে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেননা। যেকোনো সময় তার শারীরিক পঙ্গুত্ব হয়ে যেতে পারে। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না।

চিকিৎসকরা বলেন, আমরা আশা করি আদালত তাকে তার প্রাপ্য জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে তার পছন্দমত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেবে। অন্যথায় চিকিৎসক সমাজ নিরবে বসে থাকবে না। আপামর জনগণকে সাথে নিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলবে।

লিখিত বক্তব্যে ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ডাঃ সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, ৫ ডিসেম্বর আদালত বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কর্তৃপক্ষের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট তলব করেছে। চিকিৎসক এই নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হাইলি এক্টিভ ডিফরমিং, রিমাটইড আর্থ্রাইটিস, আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিস মেলিটাস, হাইপারটেনশন, এডেসিভ ক্যাপসালটিস, রিকারেন্ট হাইপোনেট্রাইমিয়া এন্ড এনিমিয়া রোগে ভুগছেন। এমতাবস্থায় তিনি জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এবং স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকায় উক্ত রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। যেমন- রিউমাডইড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস রোগের কারণে তার বাইলেটারাল ফ্রজেন সোল্ডার, ফ্লেজ্ন ডিফরমিটিস অব বোথ এলবোস, রিস্ট, মেটাকারপোফ্যালাঙ্গেল (এমসিপি), জয়েন্ট এন্ড প্রক্সিমা ইন্টারফ্যালাঙ্গেল (পিআইপি), জয়েন্ট কার্ভিক্যাল স্পন্ডিলোসিস, লুম্বার স্পন্ডিলোসিস উইথ র‌্যাডিকালোপ্যাথি, বাইলেটারাল কার্পাল টানেল সিন্ড্রম, এসজোগ্র্যানস সিন্ড্রম।

ডা. শামীম বলেন, এসব জটিলতার কারণে তার হাত এবং পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। যার কারনে জয়েন্টগুলি শক্ত এবং বাঁকা হতে চলেছে যা কিনা অচিরেই স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে এবং যার কারণে বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, ওঠাবসা এমনকি নিজ হাতে খাবার পর্যন্তও খেতে পারছেন না।

তিনি বলেন, গত সোমবার ডাক্তাররা বেগম খালেদা জিয়ার ওজন মাপতে বারবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তীব্র ব্যথায় তিনি বিছানা থেকে নামতে পারেন নি। তাছাড়া তিনি ব্যথার কারণে ভালোভাবে ঘুমাতেও পারছেন না। ভয়ংকর ব্যাপার হলো ওনার ডান পায়ে একটি গুটি উঠেছে যাকে মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় রিউমাটিক নডিউল বলে যা হাইলি টেন্ডার বা স্পর্শ করা মাত্রই তীব্র ব্যাথা অনুভূত হয়। যেটি পরবর্তীকালে ভ্যাসকিউলিটিস কিংবা জ্যানগ্রিন এ পরিণত হতে পারে ।

এই চিকিৎসক বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে বেগম জিয়া মেথোট্রিক্স্যাট নামক একটি ঔষধ রিউম্যাটোইড আর্থ্র্যারাইটিসের জন্য খাচ্ছেন। যা কিনা লিভার, কিডনীসহ রক্তের সকল সেল সমূহ কমিয়ে দিয়ে প্যানসিটোপেনিয়া নামক ভয়ংকর এক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ম্যাডামের ডায়াবেটিস কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কারণ একটা ছোট বদ্ধ ঘরে এত দিন হাটাচলার সুযোগ পাননি।

ড্যাবের এই চিকিৎসক আরও জানান, এসজোগ্র্যানস সিন্ড্রম এর কারণে চোখ শুকিয়ে যায় তাই দিনে কিছুক্ষণ পরপর আর্টিফিসিয়াল টিয়ার দিতে হয়। ড্যাবের এই নেতা বলেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে নিজ পায়ে হেটে জেলখানায় প্রবেশ করেন, নিজে হেঁটে দোতলায় তার নির্ধারিত রুমে যান, এমনকি জেলখানা থেকে এর আগের বার যখন বিএসএমএমইউতে আসেন তখন গাড়ী থেকে নেমে নিজে লিফ্ট পর্যন্ত হেঁটে যান। সময়ের পরিক্রমায় তিনি কিভাবে আজকের অবস্থায় উপনীত হলেন- আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে সঠিক চিকিৎসার অভাবে তিনি ধীরে ধীরে এই অবস্থায় উপনীত হয়েছেন। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না ।

ডাঃ শামীম আরো বলেন, আমরা জানি যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মানে হলো- কোনো ব্যক্তির ফিজিক্যাল, মেন্টাল, স্প্রিচুয়াল ওয়েলবিং। কিন্তু উপরোক্ত তিনটি উপাদানের কোনো একটিও বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিপালিত হচ্ছে না বিধায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভীষণ অসুস্থ এবং যথাযথ চিকিৎসা না পেলে যে কোনো সময় তার শারীরিক স্থায়ী পঙ্গুত্ব এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ জনিত বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে সরকারের, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দ ও সরকারকেই বহন করতে হবে। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বিনা চিকিৎসায় আপনি অমানবিক কষ্ট দিচ্ছেন। তার প্রতি এই নিষ্ঠুরতা বিশ্বের স্বৈরশাসকরা যে আচরণ করে সেই আচরণেরই সমতুল্য। জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আঁচ করতে পারছেন না বলেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি না দিয়ে তাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করার চেষ্টা করছেন। তাই আমরা ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি যে, জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক এবং মেডিকেল রিপোর্ট মোতাবেক যে কোনো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় এই ধরনের মামলায় জামিন হয়।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এড. আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডাঃ মোঃ আবদুস সেলিম, ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ডাঃ মাসুম বিল্লাহ, ডাঃ গালিব প্রমূখ।###

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ